বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের মোবাইল ফোন ব্যবহারের সংবাদ প্রকাশের পর কারা কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসেছে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সালমানসহ অন্যান্য ভিআইপি বন্দিদের কক্ষে তল্লাশি চালায় কারা কর্মকর্তারা। এ সময় সালমান এফ রহমান কর্মকর্তাদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আপনারা আমাদের ডিস্টার্ব করছেন।”
গতকাল একটি সংবাদমাধ্যমে ‘কারাগারেও তৎপর দরবেশ’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর এই অভিযান শুরু হয়। প্রতিবেদনে শেখ হাসিনার সঙ্গে সালমান এফ রহমানের ফোনালাপসহ মোবাইল ব্যবহারের তথ্য উঠে আসার পর সংশ্লিষ্ট কারা রক্ষীদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নতুনদের নিয়োগ দেওয়া হয়।
এছাড়া ভিআইপি বন্দিদের একসঙ্গে আড্ডা দেওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তবে হাঁটার সময় আলোচনা করতে দেওয়া হলেও ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ কোনো বিষয়ের আলোচনা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই নিয়ম লঙ্ঘন করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তল্লাশি ও প্রতিক্রিয়া:
তল্লাশির সময় কিছু ভিআইপি বন্দি কারা কর্মকর্তাদের প্রতি নাখোশ হয়ে ওঠেন। কারাগারের একজন কর্মকর্তা জানান, প্রভাবশালী বন্দিদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে কারারক্ষীদের নানা চাপে পড়তে হয়। একদিকে বন্দিদের চাহিদা মেটাতে হয়, অন্যদিকে সরকারের নজরদারির বিষয়টি সামলাতে হয়।
সূত্র আরও জানায়, প্রভাবশালী কিছু বন্দি নিয়ম-কানুন মানছেন না। তাদের চিহ্নিত করে অন্য কারাগারে পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
কর্তৃপক্ষের অবস্থান:
কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মোহাম্মদ মোতাহের হোসেন বলেন, “কারাগারে নজরদারি আরও জোরদার করা হয়েছে। কোনো বন্দি যেন কারা বিধি ভেঙে সুযোগ-সুবিধা নিতে না পারে, তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।”
পূর্ব ইতিহাস ও শাস্তির নজির:
কারা বিশেষজ্ঞ মেজর (অব.) শামসুল হায়দার ছিদ্দিকী বলেন, ভিআইপি বন্দিদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। তবে ডিভিশন বাতিল, অন্য কারাগারে বদলি, এবং স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ বন্ধের মতো শাস্তি দেওয়া সম্ভব।
বর্তমানে কারাগারে থাকা ৬৮ জন ভিআইপি বন্দির তালিকায় রয়েছেন সাবেক মন্ত্রী, এমপি, এবং প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। তবে তাদের কার্যক্রমের ওপর কড়া নজরদারি রাখার কথা জানায় কারা কর্তৃপক্ষ।
এ ধরনের পদক্ষেপ প্রভাবশালী বন্দিদের অনিয়ম কমাতে এবং কারাগারে সুশৃঙ্খল পরিবেশ নিশ্চিত করতে কার্যকর হবে বলে মনে করা হচ্ছে।