মুক্তিযুদ্ধের পর এই প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের করাচি বন্দর থেকে সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার জাহাজে পণ্য পৌঁছেছে। এই ঐতিহাসিক পদক্ষেপের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সরাসরি নৌপথে পণ্য পরিবহন শুরু হলো। এর আগে পাকিস্তানের পণ্য তৃতীয় দেশের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসত।
গত সোমবার (১১ নভেম্বর) পানামার পতাকাবাহী কনটেইনার জাহাজ এমভি ইউয়ান জিয়ান ফা ঝং করাচি বন্দর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছায়। এতে ৩৭০টি কনটেইনার ছিল, যার মধ্যে ২৯৭টি কনটেইনার পাকিস্তান থেকে এসেছে। বাকি কনটেইনারগুলো সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে এসেছে।
কনটেইনারে কী পণ্য রয়েছে?
চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, পাকিস্তান থেকে আসা কনটেইনারগুলোর মধ্যে শিল্পের কাঁচামাল এবং ভোগ্যপণ্য রয়েছে। এসব পণ্যের ওজন প্রায় ৬ হাজার ৩৩৭ টন। পাকিস্তানের ১৮টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এসব পণ্য সরবরাহ করেছে।
পণ্য তালিকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি এসেছে সোডা অ্যাশ, যা বিভিন্ন শিল্পে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মোট ১১৫ কনটেইনারে এই পণ্য আনা হয়েছে। ডলোমাইট (৪৬ কনটেইনার), চুনাপাথর (৩৫ কনটেইনার), এবং ম্যাগনেশিয়াম কার্বনেট (৬ কনটেইনার) ছাড়াও কাঁচশিল্পের জন্য ভাঙা কাঁচ এসেছে ১০ কনটেইনারে।
শতভাগ রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে কাপড়, রং ইত্যাদি রয়েছে ২৮ কনটেইনারে। গাড়ির যন্ত্রাংশ এসেছে একটি কনটেইনারে। এ ছাড়া ৬১১ টন পেঁয়াজ (৪২ কনটেইনার) এবং ২০৩ টন আলু (১৪ কনটেইনার) হিমায়িত অবস্থায় এসেছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে এসেছে খেজুর, জিপসাম, পুরোনো লোহার টুকরা, মার্বেল ব্লক, কপার ওয়্যার, রেজিন ইত্যাদি। তবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে একটি কনটেইনারে আমদানি করা হুইস্কি, ভদকা ও ওয়াইন, যা ঢাকার ডিপ্লোমেটিক ওয়্যারহাউসের জন্য আনা হয়েছে।
কেন এই নতুন সেবা গুরুত্বপূর্ণ?
পাকিস্তান থেকে সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরু হওয়ায় দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য আরও সহজ হবে এবং পরিবহনের সময় ও খরচ কমবে। করাচি থেকে চট্টগ্রামের দূরত্ব প্রায় ২ হাজার ৬১২ নটিক্যাল মাইল। নতুন এই রুটে যাত্রা সহজ করতে কনটেইনার পরিচালনাকারী সংস্থা ফিডার লাইনস ডিএমসিসি তাদের জাহাজকে সংযুক্ত আরব আমিরাত, পাকিস্তান, ভারত, ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়ার বিভিন্ন বন্দরের সঙ্গে যুক্ত করেছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক জানান, নতুন এই সেবা নিয়মিত চলবে বলে আশা করা হচ্ছে। পাকিস্তানের সঙ্গে সরাসরি সামুদ্রিক যোগাযোগ বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে।