ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে নৃশংস গণপিটুনিতে নিহত তোফাজ্জল হোসেনকে শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে তার নিজ গ্রাম বরগুনার পাথরঘাটায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। মা-বাবা ও ভাইয়ের কবরের পাশেই তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। এর আগে স্থানীয় মাদ্রাসা মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে শোকে কাতর এলাকাবাসী এই ঘটনার জন্য দায়ীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানান।
জানাজার আগে স্থানীয় ইমাম এক বক্তব্যে বলেন, “তোমরা শিক্ষিত হয়েছো, কিন্তু মানুষ হও নাই।” এই বক্তব্যের ভিডিওটি দ্রুতই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। তিনি আরও বলেন, “আমি তোফাজ্জলের বাবার ও মায়ের জানাজা পড়িয়েছি, কিন্তু তার জানাজাও আমাকে পড়াতে হবে তা ভাবিনি। আমি ভেবেছিলাম তোফাজ্জল আমার জানাজায় অংশ নেবে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রসঙ্গে ইমাম বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মানুষ গড়ার কারিগর। কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব যে এমন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একজন মানুষকে এত নির্মমভাবে নির্যাতন করা হলো যে তার পায়ের গোশত পর্যন্ত খসে পড়ল? এটা কোনো শিক্ষার অংশ হতে পারে না।”
এলাকাবাসীর মতে, তোফাজ্জল ছিলেন অত্যন্ত হাস্যরসিক এবং কখনো কাউকে কষ্ট দিতে দেখা যায়নি। তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ হলেও সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলতেন। তার এই নির্মম মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। একসময় প্রেমঘটিত সমস্যার কারণে তিনি মানসিক ভারসাম্য হারান। এরপর কিছুদিনের মধ্যেই তার মা, বাবা, এবং একমাত্র বড় ভাই মারা যান, ফলে তোফাজ্জল পরিবারহীন হয়ে যান এবং রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতেন।
তোফাজ্জলের ভাবি লতিফা বেগম জানান, “বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাতে তোফাজ্জল ফোন করে জানায় যে, কিছু ছাত্র তাকে ধরে মারধর করছে এবং টাকা চাচ্ছে। পরে আবার ফোন করে মুক্তিপণ হিসেবে ২ লাখ টাকা দাবি করা হয়। আমরা টাকা দিতে না পারায় নির্মমভাবে তাকে হত্যা করা হয়।”
তোফাজ্জলের মামা আব্দুর রব জানান, তাকে ৩৫ হাজার টাকা চাওয়া হয়েছিল, যা তিনি দিতে পারেননি। পরে তোফাজ্জলকে হত্যা করা হয়।
তোফাজ্জলের স্কুলশিক্ষক মিলন মিয়া বলেন, “তোফাজ্জল খুব মেধাবী ও শান্ত স্বভাবের ছিল। আমরা তার হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হলে মোবাইল চুরির সন্দেহে শিক্ষার্থীরা তোফাজ্জলকে নির্যাতন করে। মারধরের একপর্যায়ে তার অবস্থা সংকটাপন্ন হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়, যেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সবার দাবি: তোফাজ্জলের পরিবার ও এলাকাবাসী এই হত্যাকাণ্ডের সঠিক তদন্ত এবং হত্যাকারীদের দ্রুত বিচারের দাবি জানিয়েছেন।