দেশের বিতর্কিত ব্যবসায়ী এবং এস আলম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা সাইফুল আলমের ঘরের কাজের মেয়ে মর্জিনা আক্তার কোটিপতির খাতায় নাম লিখিয়েছেন। এস আলমের গৃহকর্মী মর্জিনার নামে ৫ কোটি টাকার সম্পত্তি ছাড়াও আরও বিপুল সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। যদিও তিনি পেশায় একজন গৃহকর্মী, তার নামে থাকা দুটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে আড়াই কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকে ২২টি এফডিআরের মাধ্যমে এক কোটি টাকা জমা রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ইসলামি ব্যাংকে কর্মরত বলে পরিচয় দেওয়া মর্জিনা এবং তার স্বামী সাদ্দাম হোসেন নিজের নামে এসব সম্পদ গড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ) এর যৌথ তদন্তে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, চট্টগ্রামের ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংকের প্রবর্তক মোড় শাখায় মর্জিনার নামে এক কোটি ৮৪ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। নগদ অর্থ ও চেকের মাধ্যমে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা হলেও কিছুদিনের মধ্যেই সেই অর্থ তুলে নেওয়া হয়। সবচেয়ে বিস্ময়ের বিষয় হলো, বর্তমানে তার ব্যাংক হিসাবে মাত্র ৬০৫ টাকা অবশিষ্ট রয়েছে।
তাছাড়া, ইসলামী ব্যাংকের চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ শাখায় মর্জিনা আক্তারের নামে আরেকটি ব্যাংক হিসাব খোলা আছে, যেখানে বিপুল পরিমাণ অর্থ লেনদেন হয়েছে। এই অ্যাকাউন্টে আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে চার লাখ ৭০ হাজার টাকা স্থিতি ছিল বলে জানা গেছে।
আরও জানা যায়, ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলায় এস আলম গ্রুপের অধীনে ৫ কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে, যা মর্জিনা ও তার স্বামী সাদ্দাম হোসেনের নামে। তারা সেখানে একটি বিশাল মাছের খামার গড়ে তুলেছে। প্রশাসনের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, এই সম্পত্তি তারা নিয়মবহির্ভূতভাবে নিজেদের নামে করে নিয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে সরকারি পুকুর এবং জনগণের রাস্তা দখলের অভিযোগও উঠেছে।
এস আলমের প্রভাব এবং ক্ষমতার ব্যবহারে মর্জিনা ও তার স্বামী সাদ্দাম ইসলামি ব্যাংকে চাকরি পেয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের দুর্বৃত্তপনা এবং সম্পদের উত্থান অনেকের মধ্যে বিস্ময় সৃষ্টি করেছে। এমনকি ব্যাংক কর্মকর্তারা পর্যন্ত হতবাক যে একজন গৃহকর্মীর ব্যাংক হিসাবে কিভাবে কোটি কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে। এনবিআর বর্তমানে খতিয়ে দেখছে, মর্জিনার নামে এসব অর্থ কোথা থেকে এসেছে এবং কারা জমা দিয়েছে।
এদিকে, বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন, এস আলমের কোটি কোটি টাকার অবৈধ লুটপাটের ফসল হিসেবেই হয়তো তার গৃহকর্মীর নামে এসব সম্পদ গড়ে উঠেছে। অতীতে ক্ষমতাচ্যুত এক স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রীর পিয়নও ৪০০ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন বলে জানা যায়, তাই এস আলমের গৃহকর্মীর নামে ৮ কোটি টাকার সম্পদ থাকা একেবারে অসম্ভব নয় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
স্থানীয় প্রশাসন এ বিষয়গুলো নিয়ে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে এবং মর্জিনা ও তার স্বামীর অবৈধ কার্যক্রম সম্পর্কে আরও তথ্য সংগ্রহ করছে। তদন্তের ফলাফল বের হলে তা আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য উদ্ঘাটন করতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।