Friday , November 22 2024
Breaking News
Home / Countrywide / হাসিনার অডিও আস্ফালন, গণঅভ্যুত্থানে পলাতক স্বৈরশাসকদের করুণ পরিণতি

হাসিনার অডিও আস্ফালন, গণঅভ্যুত্থানে পলাতক স্বৈরশাসকদের করুণ পরিণতি

‘ছাগল নাচে খুঁটির জোরে; কুত্তা নাড়ায় লেজ…’ — শফিকুল ইসলাম বাদলের এই ছড়ার প্রতিটি লাইন যেন শেখ হাসিনার জীবন ও কার্যকলাপের সাথে হুবহু মিলে যায়। দেশের নেতাকর্মীদের বিপদে ফেলে দিল্লিতে পালিয়ে গিয়ে শেখ হাসিনা এখন টেলিফোনে আস্ফালন করছেন, যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হচ্ছে। দেশে বিপদের মধ্যে থাকা দলের নেতাকর্মীদের কষ্টকে উসকে দিয়ে তিনি ড. মুহম্মদ ইউনূস এবং বেগম খালেদা জিয়াকে কটাক্ষ করছেন, দাবি করছেন যে দ্রুত দেশে ফিরে আসবেন।

তবে ভারতের সমর্থন সত্ত্বেও নিজের ক্ষমতা তিনি হারিয়েছেন, আর দেশে ফিরলে তাকে গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত হতে হবে। এরশাদ বা বেগম খালেদা জিয়ার মতো তিনি কখনো দলের নেতাকর্মীদের রক্ষায় দেশেই থেকে লড়াই করেননি, বরং পালিয়ে গেছেন। ভারতের রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা চলবে। যুগোশ্লাভিয়ার মিলোশেভিজ থেকে শুরু করে রুয়ান্ডার জিন কাবান্দা এবং চিলির পিনোচেটের মতো স্বৈরশাসকদের শেষ পরিণতি কি হয়েছিল, তা শেখ হাসিনাকেও মনে রাখতে হবে।

দলের নেতাকর্মীদের বিপদে ফেলে নিজে পালিয়ে যাওয়ায় শেখ হাসিনার বিশ্বাসঘাতকতা দলীয় নেতারাই মেনে নিতে পারছেন না। তার নেতৃত্ব নিয়ে দেশে ও ভারতে তীব্র সমালোচনা চলছে।

ভারতের নাচের পুতুল হাসিনা ১৫ বছর দেশের অর্থনীতিকে খাদের কিনারে নিয়ে গেছেন। মহাপ্রকল্পের নামে ঋণ করে দেশকে ঋণগ্রস্থে জর্জরিত করেছেন। প্রকল্পের জন্য বিদেশী ঋণ নিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। দলবাজদের ব্যাংকের লাইসেন্স দিয়ে দেশের ব্যাংকিং সেক্টরকে ধ্বংস করেছেন। মানুষের মধ্যে রাজনৈতিক ও সামাজিক বিরোধ বিরোধ সৃষ্ট করে দেশকে বিভক্ত জাতিতে পরিণত করেছেন। দুর্নীতিকে রাষ্ট্রীয় রুপ দিয়েছেন। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয় সদর দফতরে পরিণত করেছেন। জাতীয় সংসদকে বানিয়েছিলেন আওয়ামী ক্লাব আর বিচার বিভাগকে বানিয়েছিলেন আওয়ামী আইনজীবী পুনর্বাসন কেন্দ্রে। সিভিল প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনকে দলীয় বাহিনীতে পরিণত করেছেন। কিছু কিছু পুলিশ কর্তা হয়ে উঠেছিল দানব। শত শত মানুষকে গুম করে বছরের পর বছর ‘আয়নাঘরে’ বন্দী রেখেছেন কাউকে হত্যা করেছেন।

আবার প্রকাশ্যে বহু মানুষকে খুনের নির্দেশনা দিয়েছেন এবং দেশের এক ঝাঁক সাংবাদিককে হালুয়া-রুটি দিয়ে স্তবক করে রেখেছিলেন। শুধু তাই নয় ক্ষমতা ধরে রাখতে গত জুলাই আগস্ট পুলিশকে দিয়ে গণহত্যা চালিয়ে ছাত্রজনতার অভ্যূত্থানে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। হাসিনার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় শতাধিক হত্যা মামলা হলেও গণহত্যার দায়ে কয়েকটি মামলা হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। মানবতাবিরোধী গণহত্যাকারী হিসেবে তিনি এখন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে চিহ্নিত। অপর দিকে পালানোর আগে তিনি আইন শৃংখলা বাহিনী এবং দলের সাবেক মন্ত্রী-এমপি এবং শত শত নেতা-পাতিনেতা-উপনেতা ও হাজার হাজার কর্মীকে রাজপথে নেমে আন্দোলনরত ছাত্র জনতাকে হত্যার নির্দেশনা দিয়ে নিজের নিরাপদে পালিয়ে যান। ফলে তার দলের সাবেক মন্ত্রী-এমপি-বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তা ও আমলারা গ্রেফতার হচ্ছেন; রিমাণ্ডে যাচ্ছেন। একজন রাজনীতিকের এমন চাতুরি আচরণ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই মেনে নিতে পারছেন না। তাদের অনেকেই এখন নিজেদের ভুল রাজনীতির কথা স্বীকার করে বলছেন, শেখ হাসিনার মতো মিথ্যাবাদী, চতুর, স্বার্থপর, বিশ্বাসঘাতক মহিলাকে নেতা মেনে নেয়া ছিল জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে টেলিফোনে অডিওতে শেখ হাসিনার যতই গলাবাজি শোনা যাক না কেন, তিনি এখন দিল্লিতে স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। তাকে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আশ্রয় দেয়া হয়েছে। গণহত্যাকারী এবং মানবাধিকার লংঘনকারী হওয়ায় যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ কোনো উন্নত দেশ তাকে আশ্রয় দিবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। কিন্তু ১৫ বছর বাংলাদেশের বদলে ভারতের স্বার্থ বেশি গুরুত্ব দেয়ায় ভারত তাকে আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূস স্পষ্টভাবে ভারতকে বার্তা দিয়েছেন, গণহত্যা করে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়েছেন। বাংলাদেশের জনগণ দেশে ফিরিয়ে এনে তার বিচার চায়। যতদিন সে ভারতে থাকবে তাকে চুপ থাকতে হবে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর জানিয়েছেন, বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলে শেখ হাসিনাকে দিল্লির কাছ থেকে ফেরত চাওয়া হবে।

ওদিকে ভারত তাকে কথা বলতে এবং দিল্লিতে অবস্থানরত মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকেও মা শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে দেয়নি। ভারত সরকার তাকে বক্তৃতা-বিবৃতি দেয়া থেকে বিরত রাখায় শেখ হাসিনা কূটচালের আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি বিদেশে তথা আমেরিকা ও কানাডায় থাকা নেতাদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলে সেই অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দিচ্ছেন। মুহুর্তেই সে অডিও রেকর্ড ভাইরাল হয়ে যাচ্ছে। শেখ হাসিনার এই চাতুর্য নিয়ে বাংলাদেশে তো বটেই ভারতেও বিতর্ক শুরু হয়ে গেছে। দিল্লির বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই বলছেন, শেখ হাসিনা ভারতকে বিপদে ফেলে দিয়েছেন।

ভারতকে খুঁটি হিসেবে ব্যবহার করে শেখ হাসিনা যতই লাফালাফি করুক এটা বেশি দিন চলবে না। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলার তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যে হয়তো তাকে ফেরত চাওয়া হবে। তাছাড়া হাসিনার এখন বৈধ কোনো পাসপোর্ট নেই। পাসপোর্ট ছাড়া ৪৫ দিন দিল্লিতে থাকার পর ভারত কি সিদ্ধান্ত নেয় সেটা দেখার ব্যাপার। তবে শেখ হাসিনার মতো গণঅভ্যূত্থানে দেশ থেকে পালানো এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের মুখোমুখি হওয়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীদের পরিণতি প্রণিধানযোগ্য। শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার আগে বাংলাদেশে গণহত্যা করেছেন। তার আগে ১৫ বছর চরম নিষ্ঠুরতা চালিয়েছেন। জুলাই-আগস্টের গণহত্যার টাটকা প্রমাণাদি দেশবাসীর সামনে রয়ে গেছে। বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলেই সেই বিভৎস চিত্রগুলো জাতির সামনে উঠে আসবে।

শেখ হাসিনার মতো জনগণের ওপর নিষ্ঠুরতা চালিয়েছিলেন যুগশ্লোভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট সেøাভদন মিলোশেভিজ। গণঅভ্যূত্থানে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন ১৯৯১ সালে। গণহত্যার অভিযোগ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তার বিচার শুরু হয়। বিচার চলাকালীন সময় ২০০৬ সালে জাতিসংঘের আটক কেন্দ্রে বন্দী অবস্থায় মারা যান মিলোশেভিজ। রুয়ান্ডার সাবেক প্রধানমন্ত্রী জিন কাবান্দা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য গণহত্যা চালিয়েছিলেন। ১৯৯৪ সালে গণঅভ্যূত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তার বিচার হয়। তার পরিণতি বিশ্বাবাসী দেখেছে। ১৯৯৮ সালে গণঅভ্যূত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন চিলির প্রেসিডেন্ট আগস্টো পিনোচেট। অতঃপর তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়। ২০০৪ সালে মামলা চলার সময় তিনি কারাগারে বন্দী অবস্থায় মারা যান। ইরাকের সাদ্দাম হোসেনের বিচার ও ফাঁসির বিষয় অবশ্য অন্য প্রেক্ষাপট।

শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়ায় দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে। তার এই পদক্ষেপ নিয়ে শুধু বাংলাদেশেই নয়, ভারতে এবং আন্তর্জাতিক মহলেও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। ভারতের বুদ্ধিজীবীরা মনে করছেন, শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার মাধ্যমে ভারত কূটনৈতিক সমস্যার মুখে পড়তে পারে।

আওয়ামী লীগে ভাঙনের সম্ভাবনা এখন বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দলের একাংশ প্রকাশ্যে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। তাদের মতে, তিনি স্বার্থপর ও মিথ্যাবাদী হিসেবে কাজ করেছেন এবং তার এই পদক্ষেপকে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখছেন। দলের ভিতরে এই অসন্তোষ আরও তীব্র হয়ে উঠছে, বিশেষ করে তিনি দেশ ছেড়ে পালানোর পর।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যার মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এর ফলে, অনেকের মতে, হাসিনার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। মিলোশেভিচ, কাবান্দা, পিনোচেটের মতো নেতাদের পরিণতি উল্লেখ করে বলা হচ্ছে, হাসিনাকেও একই রকম বিচারের মুখোমুখি হতে হতে পারে।

দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে বড় ধরনের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে আওয়ামী লীগে ভাঙন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা পরিস্থিতিকে আরও খারাপের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এই মুহূর্তে দলটির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে শেখ হাসিনার ভূমিকা নিয়ে কঠোর সমালোচনা করা হচ্ছে। তাকে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী এবং গণহত্যাকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ তাকে আশ্রয় দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, যা তার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে নিরাপত্তা পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় ধরনের বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শেখ হাসিনা বিভিন্ন দেশের নেতাদের মতো নিজেকে রাজনৈতিকভাবে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করলেও তার পালানোর পরিণতি কি হবে তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। গাদ্দাফি, মুবারক, সুহার্তোর মতো নেতাদের উদাহরণ টেনে বলা হচ্ছে, তারা যেমন গণআন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন, তেমনই শেখ হাসিনাও একই পরিণতির মুখোমুখি হতে পারেন।

এই সংকটের মধ্যে শেখ হাসিনার ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক ক্যারিয়ার কতটা অগ্রসর হতে পারবে তা নিয়ে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

বিদেশে পালানোর সময় তিনি দলের লাখো নেতাকর্মীর ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো চিন্তা করেননি। ‘নিজে বাঁচলে বাপের নাম’ প্রবাদের মতোই তিনি একমাত্র বোনকে সঙ্গে নিয়ে পালিয়ে ভারত চলে গেছেন। তার পুত্র-কন্যা ও বোনের ছেলেমেয়েরা সবাই বিদেশে নিরাপদে। ১৯৯০ সালে গণঅভ্যূত্থানে এইচ এম এরশাদের পতন হয়েছিল। সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদ জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে দেশ থেকে পালিয়ে যাননি। তিনি গ্রেফতার হয়ে কারাগারে গেছেন। নিজে জেল-জুুলুম সহ্য করে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের রক্ষা করার চেষ্টা করেছেন। ২০০৭ সালে ওয়ান ইলেভেনে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে রাজনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েন বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। এ সময় তার পরিবার তথা দুই পুত্রকে চরম নির্যাতনের মুখে পড়তে হয়। কিন্তু বিএনপির নেতাকর্মীদের বিপদে ফেলে বেগম খালেদা জিয়া বিদেশে পালিয়ে যাননি। বরং তাকে বিদেশে পাঠানোর চেস্টা করেও ফখরুদ্দিন-মঈন উ আহমদ সরকার ব্যর্থ হয়েছে। এরশাদ ও বেগম খালেদা জিয়া নিজ নিজ দলের লাখো নেতাকর্মীকে জুলুম-নির্যাতন থেকে রক্ষা করতে নেতা হিসেবে নিজেরাই জেল-জুলুম সহ্য করেছেন।

অথচ শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিপদে ফেলে নিজের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিদেশে পালিয়েছেন। অবশ্য বিশ্বের আরো কয়েকজন নেতা গণআন্দোলণের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে বিদেশে পালিয়েছেন। তাদের কেউ কেউ দেশে ফিরে এসে পুনরায় রাজনীতি করে ক্ষমতা পেয়েছেন। তবে যারা দেশে রাজনৈতিক বন্দোবস্ত করে রেখে বিদেশে গেছেন তারা ফিরে এসে কেউ সরকার গঠন করেছেন কেউ রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন। আর যারা দলের নেতাকর্মীদের বিপদে ফেলে নিজের জীবন বাঁচানো লক্ষ্যে কেবল শেখ হাসিনার মতো পালিয়েছেন তারা নতুন করে রাজনীতিকে পুনর্বাসিত হতে পরেননি। ২০১১ সালে আরব বসন্তে লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট মুয়াম্ময় গাদ্দাফি ক্ষমতাচ্যুত হন। গণঅভ্যূত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হলেও তিনি দেশ থেকে পালাননি। তার মৃত্যুদণ্ড দেয়া হলেও তার পুত্র সাইফ আল গাদ্দাফি কয়েক বছর পর দেশের রাজনীতিতে ফিরে এসে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। ২০১১ সালে মিশরের হুসনে মুবারক গণঅভ্যূত্থানে (আরব বসন্ত) ক্ষমতাচ্যুত হন। গণঅভ্যূত্থানে ক্ষমতা হারানোর ৬ বছর পর তার পুত্র গামাল মোবারক ২০১৭ সালে দেশের রাজনীতিতে জনপ্রিয় হয়ে উঠেন।

১৯৯৮ সালে ইন্দোনেশিয়ার সুহার্তো গণঅভ্যূত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন। কিন্তু তার কন্যা সিতি হুতাই সুহার্তো ২০২৪ সালে ক্ষমতায় ফিরে আসেন। পাকিস্তানের বেনজির ভুট্টো ক্ষমতাচ্যুত হয়ে বিদেশ গিয়েছিলেন। তিনি দেশে রাজনৈতিক বন্দবস্ত করেই বিদেশ যাওয়ায় দেশে ফিরে এসে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। যদিও তিনি একটি সমাবেশে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। পাকিস্তানের নেওয়াজ শরীফ ২০১৭ সালে আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হন। অতঃপর তিনি বিদেশ চলে যান। কিন্তু ছোটভাই শাহবাজ শরীককে দল পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে যান। দেশে রাজনৈতিক বন্দোবস্ত রেখে যাওয়ায় বিদেশ থেকে ফিরে এসে তিনি পুনরায় রাজনীতি ও সরকার গঠনে সক্ষম হন। ১৯৮৬ সালে ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট মার্কোস ক্ষমতাচ্যুত হন। সে সময় তার স্ত্রী এমেলডা মার্কোসের হাজার জোড়া জুতার খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়।

৩৬ বছর পর তার পুত্র ফারদিন মার্কোস সে দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। পৃথিবীতে এমন অনেক নেতা গণঅভ্যূত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে পুনরায় তিনি নিজে, তার পরিবারের সদস্য এবং তার দল ক্ষমতায় ফিরে এসেছে এমন নজীর রয়েছে। তবে ২০২১ সালে আফগানিস্তানের আশরাফ গানি ক্ষমতাচ্যুত হয়ে আর ফিরতে পারেননি। এই আশরাফ গানি ছিলেন শেখ হাসিনার মতো ভারতের দালাল। ফলে তিনি দেশে ফিরতে পারেননি। ২০২২ সালে শ্রীলংকার গোটাবায়া রাজাপাকসে গণঅভ্যূত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন। পতনের সময় রাজাপাকসের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের মতোই শেখ হাসিনার গণভবনে জনতা উল্লাস করেছে।

হিন্দুত্বাবাদী ভারতের আশ্রয়ে থেকে শেখ হাসিনা এখন টেলিফোনে যতই আস্ফালন করুক না কেন; আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার শুরু হলে বোঝা যাবে তার পরিণতি কোন দিকে যাবে। আর আওয়ামী লীগ ও দলের নেতাকর্মী? অন্তর্বর্তী সরকারের একাধিক উপদেষ্টা আগেই জানিয়ে দিয়েছেন, রাজনৈতিক দল হিসেবেও আওয়ামী লীগের বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হবে। আর আওয়ামী লীগের নেতাদের না জানিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ায় অনেক নেতাই শেখ হাসিনাকে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে অভিহিত করেছেন।

মূলত ওই ছড়ার মতো শেখ হাসিনা ছিলেন বকধার্মিক। সাধুর লেবাস পরে তিনি দেশ শাসন করেছেন। শেখ হাসিনা প্রতিদিন কোরআন পড়তেন এবং নিয়মিত জাহাজ্জুতের নামাজ আদায় করতেন দাবি করলেও গণভবন উল্লাসের সময় জনতা সবকিছু পেলেও কোনো জায়নামাজ পায়নি।

About Nasimul Islam

Check Also

থানায় অভিযোগ জানাতে গিয়ে উল্টো কট ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর

ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনের সাবেক আলোচিত সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার মুহাম্মদ শাহজাহান ওমরকে কাঁঠালিয়া থানার একটি মামলায় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *