ঢাকা জেলার সাবেক পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফিকে বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র হত্যার পর লাশ পোড়ানোর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
সোমবার (০২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশের একটি দল।
এর আগে শুক্রবার (৩০ আগস্ট) দিনভর সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। ভিডিওটি আশুলিয়া থানার সামনের ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে ধারণ করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
ভাইরাল হওয়া ১ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, দুজন পুলিশ সদস্যের একজন হাত ও একজন পা ধরে ভ্যানে একটি লাশ নিক্ষেপ করছেন। এর আগেই ভ্যানে লাশের স্তূপ করে কাপড় দিয়ে ঢেকে দেন তারা। সর্বশেষ লাশটি তুলে একটি ব্যানার দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। শেষে পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতি দেখা মেলে।
ভিডিওর ১ মিনিট ৬ সেকেন্ডে একটি পোস্টার দেখা যায়, যা স্থানীয় ধামসোনা ইউনিয়ন সভাপতি প্রার্থী ও ৭নং ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী আবুল হোসেনের। সেই পোস্টারটি দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে ভিডিওটির ঘটনাস্থল আশুলিয়া থানার আশপাশে।
মহাসড়ক থেকে থানার দিকে অগ্রসর হয়ে এসবি অফিসের দিকে চৌরাস্তায় এ ঘটনা ঘটেছে। ভেতরে ভিডিওতে থাকা বালুভর্তি বস্তাগুলো এসবি অফিসের দিকে যেতে থাকা ভবনের সামনে স্তূপ করা ছিল। কিন্তু থানা পরিষ্কারের সময় সেগুলো অপসারণ করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ড্রোন উড়িয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। তবে এটি পুলিশের ড্রোন কিনা তা আমি জানি না। শিক্ষার্থীরা থানার বিভিন্ন গলিতে প্রবেশ করলে পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। পুলিশ লাশগুলো তাদের থানার সামনে নিয়ে যায়। সেখানে একটি পুলিশভ্যানে লাশগুলো রেখে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বিপ্লব গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা ওই দিন ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অপস) আবদুল্লাহিল কাফির নির্দেশনা অনুসরণ করেছিলাম।
প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বাইপাইল এলাকায় কোটাবিরোধী কোটা আন্দোলনকারীরা জড়ো হন। পরে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের খবর পেয়ে আন্দোলনকারীরা আশুলিয়া থানার দিকে যায়। এসময় পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এ ঘটনায় গত ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় (ভ্যানে তোলা লাশ ছাড়া) ১৫ জনের মৃত্যু হয়।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ১৮ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সাভার ও আশুলিয়ায় পুলিশের গুলিতে ৭৫ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন সাড়ে চারশ’র বেশি। যাদের অনেকেই চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছেন।