এস আলম গ্রুপের কারখানা থেকে গোপনে ১৪টি বিলাসবহুল গাড়ি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ কাজে সহযোগিতা করেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির দুই শীর্ষ নেতা। স্থানীয়রা জানান, সরকার এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে নড়েচড়ে বসলে মইজ্জার টেকে গুদামে রাখা হয়েছিল গাড়িগুলো।
কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ তীরে মাইজ্জার টেক এলাকায় অবস্থিত এস আলম গ্রুপের শিল্পাঞ্চলের গুদাম থেকে রাতের আঁধারে ১৪টি দামি গাড়ি ও জিপ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হকের তত্ত্বাবধানে এসব যানবাহন সরানো হয়।
বিএমডব্লিউ ও মার্সিডিজ বেঞ্জসহ দামি ব্রান্ডের এসব গাড়ি এর আগে নগরীর নাসিরাবাদ আবাসিক এলাকার বাড়ির সামনে রাখা ছিল। এস আলম গ্রুপে কর্মরত এক কর্মকর্তা বলেন, সরকার এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে নানা ব্যবস্থা নেওয়ার পর গাড়িগুলো গোপনে মইজ্জার টেকের গুদামে সরিয়ে রাখা হয়। বৃহস্পতিবার একদল লোক পটিয়ায় পৌর এলাকায় অবস্থিত এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের বাড়িতে হামলা করতে যায়। তখন এলাকার লোকজন বাধা দিলে হামলাকারীরা পিছু হঁটে। তবে এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির মালিকপক্ষের মধ্যে ভয় ও আতঙ্ক বিরাজ করে। এরপরই রাতে গাড়িগুলো সরিয়ে ফেলা হয়।
একটি ভিডিওতে দেখা যায়, বিএনপি নেতা আবু সুফিয়ানের গাড়ি চালক মনসুর গাড়িটি বের করার সময় সেখানে দাঁড়িয়ে আছেন। গাড়ি সরানোর তদারকি করছেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম। ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে পটিয়া আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন এনামুল হক। এস আলম গ্রুপের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলেও দাবি করেন এনাম।
এনামুল হক বলেন, ‘আমরা মূলত মীর গ্রুপে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে শুনে সেখানে গিয়েছিলাম। এস আলমের গাড়ি বের করতে যাইনি। মীর গ্রুপের মালিক আমার আত্মীয়। মীর গ্রুপের সঙ্গে এস আলমের আত্মীয়তা হয়েছে। তারা ব্যবসায়িক পার্টনারও। তাদের যৌথ ব্যবসাও আছে।’
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানও প্রায় একই কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘এস আলম গ্রুপের লোকজন যদি গাড়ি বের করেন, তাহলে আমার চালক লাগবে কেনো? তাদেরইতো লোক আছে। আমরা আসলে মীর গ্রুপের কারখানায় চাঁদাবাজি হচ্ছে জানতে পেরে আমি আর এনাম ঘটনাস্থল দেখতে গিয়েছিলাম। গাড়ি কারা বের করেছে, কোথায় নিয়ে গেছে আমরা জানি না।’
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গাজী গ্রুপের শিল্প কারখানায় আগুন লাগার পর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে কারখানা মালিকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এস আলম গ্রুপের একজন কর্মকর্তা জানান, মূলত এমন আতঙ্কের কারণেই গাড়িগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গাড়িগুলোতে নগদ টাকা থাকায় গভীর রাতে অতি গোপনে সেগুলো বের করা হয়।