Friday , September 20 2024
Breaking News
Home / economy / এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা আরও ৫ ব্যাংক ঝুঁকিতে, ব্যাংক দখলের পরিণতি

এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা আরও ৫ ব্যাংক ঝুঁকিতে, ব্যাংক দখলের পরিণতি

সাবেক সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণাধীন ব্যাংকগুলোতে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। একাধিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, এই গ্রুপটি ব্যাংকগুলোকে ব্যক্তিগত তহবিল হিসেবে ব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছে।

এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণাধীন ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক এবং বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংকেই বিপুল পরিমাণ ঋণ খেলাপি হয়েছে। এই ঋণের বেশিরভাগই এস আলম গ্রুপ ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্টদের নামে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের আমলে এই ব্যাংকগুলোকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। এতে করে এই ব্যাংকগুলো অনিয়ম করেও টিকে থাকতে পেরেছিল। তবে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই সুবিধাগুলি কেটে দেওয়া হয়েছে।

এই অনিয়মের ফলে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের স্থিতিশীলতা গুরুতর হুমকির মুখে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ঘটনাগুলি বিনিয়োগকারীদের আস্থা হারাতে পারে এবং বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

এস আলম গ্রুপের ব্যাংকগুলোতে সংঘটিত দুর্নীতি ও অনিয়মের ঘটনায় বিশেষজ্ঞরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা মূলত কয়েকটি বিষয়ে জোর দিয়েছেন:

ব্যাংক খাতের স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে: এই অনিয়মগুলো বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের স্থিতিশীলতাকে গুরুতরভাবে হুমকির মুখে ফেলেছে। ব্যাংকগুলোর ওপর জনগণের আস্থা কমে যাওয়া, বিনিয়োগকারীরা পুঁজি উত্তোলন করা এবং বিদেশী বিনিয়োগ কমে যাওয়া এর পরিণতি হতে পারে।

দুর্নীতির বিস্তার: এই ঘটনাগুলি ব্যাংক খাতে দুর্নীতির বিস্তারের প্রমাণ দেয়। এটি দেশের অর্থনীতির জন্য একটি বড় ধরনের হুমকি।

ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি ব্যবস্থায় ত্রুটি: এই ঘটনাগুলি ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি ব্যবস্থায় গুরুতর ত্রুটির দিকে ইঙ্গিত করে।

সরকারের দায়িত্ব: বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সরকারকে এই সমস্যার সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। দুর্নীতিবাজদের বিচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করার পাশাপাশি ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা জরুরি।

ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা: বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে, ব্যাংকগুলোকে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিযোগ্য করতে হবে। ব্যাংক পরিচালকদের যোগ্যতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করাও জরুরি।

এস আলম গ্রুপের ব্যাংকগুলোতে সংঘটিত দুর্নীতির ঘটনা বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের জন্য একটি বড় ধরনের হুমকি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই সমস্যার সমাধানে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা জরুরি।

ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংকের পরিণতির দায় আপনার ওপরও বর্তায় কি না, প্রথম আলোর এ প্রশ্নের জবাবে সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘আমরা প্রতিনিধি পরিচালক, আমাদের হাতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা তেমন নেই।’ ব্যাংকটির ভাইস চেয়ারম্যান প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা পরিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক লে. জেনারেল (অব.) মোল্লা ফজলে আকবর। এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলমের ভাই রাশেদুল আলমসহ পরিবার ও গ্রুপটির কর্মকর্তারা ব্যাংকটির পরিচালক পদে রয়েছেন। এদিকে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক থেকে পি কে হালদার বিভিন্ন নামে টাকা বের করে নেওয়ার পর ব্যাংকটি আর খুব একটা ঋণ বিতরণ করেনি। বছরের পর বছর এসব ঋণের কোনো আদায় নেই। প্রতিবছর সুদযুক্ত হয়ে তা শুধু বাড়ছে। গত বছর শেষে ব্যাংকটির ঋণ ছিল ১৩ হাজার ১৪১ কোটি টাকা। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান প্রবাসী নিজাম চৌধুরী, পরিচালক পদে রয়েছেন সাইফুল আলমের ভাই শহীদুল আলম, ভাইয়ের স্ত্রী ও আত্মীয়স্বজন। এ ছাড়া ইসলামী ব্যাংকের সাবেক এমডি ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল আলমও ব্যাংকটির পরিচালক। এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে ব্যাংকটির এমডি হাবিব হাসনাতকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

ফার্স্ট সিকিউরিটি ও কমার্সে অচলাবস্থা
২০০৪ সালে সিকদার গ্রুপ থেকে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ যায় এস আলম গ্রুপের কাছে। এই ব্যাংকের চেয়ারম্যান এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম নিজেই। নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর ব্যাংকটিকে ইসলামি ধারার ব্যাংকে রূপান্তর করা হয়। ব্যাংকটির ঋণ প্রায় ৫৬ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংকটির একজন শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ঋণের প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা এস আলম গ্রুপ ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্টদের। ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ইউনিয়ন ব্যাংকের শেয়ার কিনে সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও তাঁর পরিবারের এক সদস্যকে ওই ব্যাংকের পরিচালক করা হয়েছিল। তাঁর মৃত্যুর পর সেই শেয়ার হস্তান্তর হয়েছে, কিন্তু ঋণ শোধ হয়নি। বছরের পর বছর এসব ঋণ আদায় না হলেও খেলাপি দেখানো হয় না। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে থাকা চলতি হিসাবে সিআরআরসহ ৭ আগস্ট ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। ব্যাংকটির অনিয়ম প্রকট হওয়ায় গত বছর ব্যাংকটিতে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এদিকে ২০১৬ সালে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে পটিয়া এলাকার বাসিন্দাদের ব্যাপক হারে নিয়োগ দেওয়া হয়। ব্যাংকটির ১ হাজার কর্মকর্তার মধ্যে ৭০০ জনই পটিয়া এলাকার। কমার্স ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংকটি থেকে বিভিন্নভাবে প্রায় ৬১০ কোটি টাকা ধার নেয় এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক। কিন্তু ওই টাকা ফেরত পাচ্ছে না। এর ফলে তারল্যসংকটে ভুগছে কমার্স ব্যাংক। ৭ আগস্ট সিআরআরসহ কমার্স ব্যাংকের চলতি হিসাবে ঘাটতি ছিল ৫০৩ কোটি টাকা। এদিকে তারল্যসংকটে পড়ে ব্যাংকটি কর্মচারীদের স্থায়ী চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়ে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছে। সরকার পতনের পর ব্যাংকে যাচ্ছেন না ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাজুল ইসলামও। ফলে ব্যাংকটিতে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।

About Nasimul Islam

Check Also

রিজার্ভ নিয়ে বিশাল বড় সুসংবাদ দিলো বাংলাদেশ ব্যাংক

প্রবাসী আয় বৃদ্ধি এবং রেমিটেন্স প্রবাহ বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *