বাংলাদেশের সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প উপদেষ্টা সালমান এফ. রহমানকে রিমান্ডে নেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান। বুধবার (১৪ আগস্ট) ফেসবুকে এক দীর্ঘ পোস্টে তিনি এ প্রশ্ন তোলেন।
বার্গম্যান লিখেছেন, সরকার পরিবর্তন হলেও বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আদালতের আচরণে তেমন কোনো পরিবর্তন নেই। আজ (বুধবার) পুলিশের আবেদনের ভিত্তিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প বিষয়ক উপদেষ্টা ও সংসদ সদস্য সালমান রহমান এবং সাবেক আইনমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য আনিসুল হককে ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, তারা হত্যাকাণ্ডের ‘উসকানিদাতা’।
বার্গম্যান আরও লিখেছেন, “যদিও আমি এখনও মামলার এফআইআর দেখিনি, তবে এটি অনেকটা বিগত সরকারের আমলে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে পুলিশের দায়ের করা মিথ্যা মামলার মতো।পূর্বে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় পুলিশ বারবার বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করত যে, তারা দলের কর্মীদের দ্বারা সংঘটিত অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িত।
তিনি লেখেন, “গত ১৬ জুলাই শাহজাহান আলী নামের ২৪ বছর বয়সী এক দোকানদারকে পুলিশ হত্যা করেছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে এই হত্যাকাণ্ডে সালমান রহমান ও আনিসুল হকের সরাসরি সম্পৃক্ততার কোনো প্রমাণ পাওয়া কঠিন। মূলত আওয়ামী লীগ সরকারের সদস্য বলেই তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
তিনি আরও লিখেছেন, ১৬ জুলাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ৬ জন নিহত হয়েছেন। তবে, এই দুজনকে কীভাবে দায়ী করা হচ্ছে? তাহলে কি সরকারের সব সদস্যকেই বিশেষ কোনও সিদ্ধান্তের জন্য অভিযুক্ত করা হবে, যা হয়ত ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা বা সরকারের নির্দিষ্ট কোনও সদস্য নিয়েছেন?
লন্ডনপ্রবাসী এই সাংবাদিক লিখেছেন, আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বিএনপি-জামায়াত পন্থি আইনজীবীরা আদালতে আসামির পক্ষে কোনো আইনজীবীকে দাঁড়াতে দেননি। আদালতে আসামিদের পক্ষে শুনানি করতে আসা দুই আইনজীবীকে মারধর করা হয়। এমতাবস্থায় বিচারক কীভাবে বিচারকাজ চালিয়ে যেতে দেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বার্গম্যান বলেন, এই ধরনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং মিথ্যা মামলা চলতেই থাকবে, যদি না পুলিশ এবং আদালতকে পেশাদারিত্বের সঙ্গে আইন প্রয়োগের জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, হ্যাঁ, এই দুই ব্যক্তি আওয়ামী লীগের শাসনামলে অপরাধ করে থাকতে পারে। তবে সঠিক তদন্ত করে সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করতে হবে এবং তার ভিত্তিতে মামলা করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনুসের প্রেস সচিব বলেছেন, মানবাধিকার হবে তার প্রশাসনের মূলভিত্তি এবং দেশের প্রতিটি নাগরিকের সুরক্ষা সরকারের শীর্ষ অগ্রাধিকার।
পোস্টের উপসংহারে বার্গম্যান লিখেছেন, কোনও সরকার কীভাবে নিজের সবচেয়ে বড় হুমকির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়, তা দেখে সেই সরকারের মূল্যায়ন করা হয়। এখন পর্যন্ত, এই ধরনের ফৌজদারি মামলাগুলো সরকারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। যদি এটি নিয়ন্ত্রণ করা না হয়, তাহলে নতুন সরকার মানবাধিকারের কোনও দাবি করতে পারবে না।