তিন দেশে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের বিপুল সম্পদের সন্ধান পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তার স্ত্রী ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান রুখমিলা জামান ও মেয়ে জেবা জামানেরও রয়েছে অবৈধ সম্পদ। চোরাচালানের টাকা দিয়ে সাইফুজ্জামান ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন এবং যুক্তরাষ্ট্র, লন্ডন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে ফ্ল্যাট কিনেছিলেন। এ ছাড়া তার বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নগদ টাকা রয়েছে। জাভেদ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগে মামলা করতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) চিঠি পাঠানো হবে বলে জানা গেছে।
এদিকে সোমবার (১২ আগস্ট) সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ ও তার স্ত্রী রুকমিলা জামানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করতে সব ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট অনুসারে, তাদের আগামী ৩০ দিনের জন্য সমস্ত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট লেনদেন ফ্রিজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এর আগে সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত ও তার স্ত্রী শারমিন মুশতারির ব্যাংক হিসাব জব্দ করে বিএফআইইউ।
গত ২৮ ডিসেম্বর তাদের অবৈধ সম্পদের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে তদন্ত শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে অর্থ পাচারের বিষয়ে জানতে চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়। এ নিয়ে এতদিন নীরব ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের কারণে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, কোনো প্রভাবশালী রাজনীতিক ব্যাংক থেকে যে কোনো অঙ্কের টাকা উত্তোলন করে তা হলে যেন জানানো হয়।
বিদ্যমান আইনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিদেশে সম্পদ নিয়ে যাওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বাংলাদেশ ব্যাংক এ পর্যন্ত ২১টি কোম্পানিকে বিদেশে বিনিয়োগের অনুমোদন দিয়েছে। এই তালিকায় সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার পরিবারের নাম নেই।
সাইফুজ্জামান ২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে অর্থ পাচার শুরু করেন বলে জানা যায়। দেশটিতে নাহার ম্যানেজমেন্ট ইনকরপোরেটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান খোলেন তিনি। ২০০৫ সাল থেকে বিভিন্ন সময় এই প্রতিষ্ঠানের নামে ৯টি প্লট বা ফ্ল্যাট কেনেন। ২০২১ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর সময়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক টিডি ব্যাংকে সাইফুজ্জামানের মালিকানাধীন জিটিএস প্রপার্টিজ এলএলসির নামে ৪৫ হাজার ৩৪০ ডলার জমা হয়। এর মধ্যে ফার্স্ট আবুধাবি ব্যাংক থেকে তিনটি লেনদেনের মাধ্যমে জমা করা হয় ২৩ হাজার ৮৯০ ডলার।
জানা গেছে, ২০১৪ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অর্থ পাচার শুরু করেন সাইফুজ্জামান। দেশটিতে প্রথম ২০১৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কম্পিউটার সফটওয়্যার ব্যবসা করার জন্য র্যাপিড র্যাপ্টর এফজিই নামে একটি প্রতিষ্ঠান খোলেন তিনি। পরের বছর ১৮ ফেব্রুয়ারি ভবন নির্মাণ ও নির্মাণসামগ্রী বিক্রির জন্য জেবা ট্রেডিং এফজিই নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান খোলেন। এ ছাড়া গত বছরের শেষদিকে তার স্ত্রী রুখমিলা জামান চৌধুরীর নামে আল-বারশা সাউথ-থার্ড এলাকায় কিউ গার্ডেন্স বুটিক রেসিডেন্স-ব্লক বিতে দুটি ফ্ল্যাট কেনা হয়। এর মধ্যে গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর ১১ লাখ ২৫ হাজার ৩০০ দিরহামে একটি এবং ৩০ নভেম্বর ১১ লাখ ২৫ হাজার ৬৯ দিরহামে অপর ফ্ল্যাটটি কেনা হয়।
সাইফুজ্জামান চৌধুরীর নামে দুবাই ইসলামী ব্যাংকে একটি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এ ছাড়া দেশটির ফার্স্ট আবুধাবী ব্যাংকে একটি দিরহাম ও একটি ডলার অ্যাকাউন্ট রয়েছে। আর দেশটিতে কার্যরত জনতা ব্যাংকে রয়েছে একটি দিরহাম অ্যাকাউন্ট। সব মিলিয়ে এসব অ্যাকাউন্টে ৩৯ হাজার ৫৮৩ দিরহাম এবং ৬ হাজার ৬৭০ ডলার জমা আছে।
লন্ডনে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর আটটি কোম্পানি রয়েছে, যার বাজারমূল্য ২০ কোটি ৩১ লাখ পাউন্ড, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। দেশটিতে তাঁর স্ত্রী রুখমিলা জামান ও মেয়ে জেবা জামানের নামেও কোম্পানি রয়েছে। এ ছাড়া পারিবারিক মালিকানায় থাকা ব্যবসায়িক গ্রুপ আরামিটের নামে একটি কোম্পানি রয়েছে বলে জানা যায়।
সাইফুজ্জামান ও আরাফাত পরিবারের মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্ট থাকলে তা স্থগিত করতে হবে। ফ্রিজের ফলে এখন থেকে তারা অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলতে পারবেন না। চিঠিতে এমন নির্দেশনাই দেওয়া হয়েছে।