পটুয়াখালী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু সাঈদের মৃত্যুর খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেছেন। মঙ্গলবার রাতে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া স্ট্যাটাসটি পাঠকের জন্য স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হলো:
‘সম্মানিত আবু সাঈদ,
আসসালামু আলাইকুম
প্রিয় ভাই আমার। কী বলে ডাকিবো আপনায়। বীর, মহাবীর, শহিদ নাকি মহাকালের শ্রেষ্ঠ সন্তান! আজকের এই দিনে নুরুলদিনের সেই রংপুরে পুলিশের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে যেভাবে আত্মহুতি দিলেন এমন দৃশ্য ইতিহাসে পড়েছি। যে শহিদি তামান্না নিয়ে রাজপথে দাঁড়িয়ে মৃত্যুকে পরাজিত করলেন এমন ঘটনা ধর্মীয় পুস্তকে পড়েছি। কিন্তু ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই বাংলার মাটিতে যে ইতিহাস তৈরি করলেন তা এই জাতির কৃতজ্ঞ সন্তানরা কেয়ামত পর্যন্ত স্মরণ করবে।
আপনি তো মহান আল্লাহর মেহমান হয়ে চলে গেলেন। আমার মতো কাপুরুষ রোজ কেয়ামতে আপনার সামনে কীভাবে দাঁড়াব! আল্লাহর দরবারে কী জবাব দেব! আপনার জন্য দোয়া করার সাহস আমার নেই। বরং আপনি আমাদের জন্য দোয়া করুন এবং আমাদের কাপুরুষতাকে ক্ষমা করুন।
আপনার রক্ত, আপনার জীবন এই জাতির স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের পুঁজি হয়ে আমাদের ভীরুতা এবং কাপুরুষতার সাদকা হিসাবে কেয়ামত পর্যন্ত আমাদের জন্য নুর হয়ে আমাদেরকে সঠিক পথ প্রদর্শন করুন- এই নিবেদন আপনার বিদেহী আত্মার নিকট রইলো! আল্লাহ হাফেজ!’
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নম্বর গেটের সামনে সংঘর্ষ শুরু হলে বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সবার আগে ছিলেন আবু সাঈদ।। আবু সাঈদের ঠিক সামনেই দাঁড়িয়ে ছিল পুলিশ। পুলিশের অবস্থানের জায়গাটি ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে। গুলি করেছে পুলিশের সদস্যরাই। সেই গুলিতেই আহত হন তিনি। পরে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানান।
আবু সাঈদ বেরোবি ইংরেজি বিভাগের দ্বাদশ ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। আবু সাইদ কীভাবে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, তার পুরো দৃশ্যটি একাধিক গণমাধ্যম ধারণ করেছে। এমনই একটি ভিডিও প্রচার করেছে যমুনা টেলিভিশন। এছাড়া কিছু লোক স্থানীয়ভাবে ভিডিও তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করে।এসব ভিডিও থেকে তার গুলিবিদ্ধ হওয়ার সময়ের পরিষ্কার একটি চিত্র পাওয়া গেছে।
ভিডিওতে দেখা গেছে, গুলি চালানোর আগে পুলিশের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন আবু সাঈদ। উল্টো দিক থেকে রাবার বুলেট ছুড়ছিল পুলিশ সদস্যরা। তারপরও আবু সাঈদ তার অবস্থান থেকে নড়েননি, তিনি দাঁড়িয়ে রইলেন, তার হাতে একটি লাঠি। সেই লাঠি দিয়ে রাবার বুলেট আটকানোর চেষ্টা করছিলেন তিনি।
ক্রমাগত রাবার বুলেটের মুখে একপর্যায়ে পিছু হটেন আবু সাঈদ, ফুটপাতে উঠে বসে পড়েন। এ সময় আন্দোলনকারী একজন দৌড়ে আসেন এবং গুলি লেগেছে- এ রকম কথা শোনা যায়। এরপর অন্যরা এসে তাকে ধরাধরি করে নিয়ে যান।
নিহত আবু সাইদের বন্ধু অঞ্জন রায় জানান, একের পর এক রাবার বুলেটে আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন আবু সাইদ। তার নাক দিয়ে রক্ত ঝরছিল। এ সময় সংঘর্ষ চলছিল। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেরি হয়।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হৃদয় রঞ্জন রায় জানান, মেডিকেল সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তির আগেই তার মৃত্যু হয়। তবে তার শরীরের একাধিক স্থানে রাবার বুলেটের ক্ষত রয়েছে। নাক দিয়ে রক্ত ঝরছিল কিন্তু রাবার বুলেটের আঘাতে মারা গেছেন কিনা, তা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন ছাড়া এ মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়।