নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণিরষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (৩ জুলাই) সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত বিদ্যালয়গুলো নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা নেয়। তবে গতকাল রাতে আজকের চার শ্রেণীর পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে বলে গুঞ্জন উঠেছে। পরীক্ষা শেষে সেই গুঞ্জনই সত্যি হলো। আজকের পরীক্ষার প্রশ্ন গতরাতে ফাঁস হওয়া প্রশ্নগুলোর সাথে মিল পাওয়া গেছে। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা।
অভিভাবকরা নতুন পাঠ্যক্রমের পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন। তাদের দাবি, ‘আজকের পরীক্ষা যেভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে, তাতে শিশুরা নতুন কিছু শেখার বদলে নকল করতে শিখবে। পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্নটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। সেই প্রশ্ন পড়ে অনেক শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছে। ছেলেমেয়েরা পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে এসে আমাদের বিভিন্ন প্রশ্ন করে। এভাবে চলতে থাকলে শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস হতে সময় লাগবে না।
ঢাকার নামকরা একটি প্রতিষ্ঠানে ষষ্ঠ শ্রেণিতে অধ্যয়ণরত শিক্ষার্থীর মা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গতকাল রাত ১০টার দিকে আমার মেয়ে পরীক্ষার প্রশ্ন পেয়েছে। শুরুতে দ্বিধায় ছিলো, এই প্রশ্ন হয়তো বানানো হয়েছে। মূল পরীক্ষার প্রশ্নের সঙ্গে হয়তো মিলবে না। কিন্তু আজ পরীক্ষায় প্রশ্ন পেয়ে দেখে গতকাল ফেসবুকে পাওয়া প্রশ্নের সঙ্গে আজকের প্রশ্ন হুবহু মিল। তার মতো নাকি অনেকেই রাতে প্রশ্ন পেয়েছে। এই যদি নতুন কারিকুলামের পরীক্ষা পদ্ধতি হয় তাহলে আমার সন্তান কী শিখবে? তারা তো নতুন কিছু শেখার বদলে চুরি/নকল করা শিখবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই প্রশ্ন দেখার পর আমি স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের বলা হয়েছিল এভাবে পরীক্ষা হলে শিশুদের ভবিষ্যতের কী হবে। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষকরাও হতাশা প্রকাশ করেছেন।
এদিকে নতুন কারিকুলাম হওয়ার পরেই স্যোশাল মিডিয়ায় ‘ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির পরীক্ষার প্রশ্নসহ সমাধান’ পাওয়া সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি পেজ ও গ্রুপের দেখা গেছে। যেসব পেজ ও গ্রুপেই এই প্রশ্নগুলো দেওয়া হয়েছে। এমনকি সমাধান দেওয়া হয়েছে। মূলত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা এসব পেজে গিয়ে প্রশ্ন পেয়েছেন বলে জানা গেছে। এছাড়াও আগামী দিনের পরীক্ষার প্রশ্ন ও সমাধান চেয়ে শিক্ষার্থীরা কমেন্ট করেছেন।
এ প্রসঙ্গে এক পরীক্ষার্থী গনমাধ্যমকে বলেন, “প্রশ্ন দেখে প্রথমে কিছুই বুঝতে পারিনি। পরে শিক্ষকরা আমাকে বকাঝকা করেন। কারণ আমি গতরাতে ফেসবুকে যাইনি। কিন্তু আমার অনেক সহপাঠী প্রশ্ন পেয়ে যায়। আগের রাতে ওরা আমার চেয়ে ভালো করবে তাই আগামী দিনেও আমি পিছিয়ে পড়ব।’
এ বিষয়ে ঢাকা ও দিনাজপুরের কয়েকটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ প্রশ্নে শিক্ষার্থীদের অনেক কিছু শেখার আছে। তবে প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে হবে। পাশাপাশি এনসিটিবি যদি আগেই পরীক্ষা প্রশ্ন সম্পর্কে আমাদের ধারণা দিতো তাহলে আমরা শিক্ষার্থীদের জানাতে পারতাম। এখন খাতা মূল্যায়ন করে বোঝা যাবে শিক্ষার্থীরা আসলে কতটুকু আয়ত্ত্ব করতে পেরেছে। তবে প্রশ্নফাঁস রোধ করাটা খুবই কঠিন হবে। কারণ শহরের স্কুলগুলোতে সব ধরনের সুযোগ সুবিধা থাকলেও গ্রামের স্কুলগুলোতে তা নেই।’
জানা গেছে, আজ বুধবার ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা, সপ্তম শ্রেণির ধর্ম, অষ্টম শ্রেণির জীবন ও জীবিকা এবং নবম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরীক্ষার লিখিত অংশের মূল্যায়ন হবে ৬৫ নম্বর এবং দলীয় কার্যকলাপ ভিত্তিক অংশের মূল্যায়ন ৩৫ নম্বরের হবে। শিক্ষার্থীদের এই ১০০ নম্বরের মূল্যায়ন পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে।
এ বিষয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান (রুটিন ডিউটি) অধ্যাপক মশিউজ্জামানের সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।