Tuesday , December 24 2024
Breaking News
Home / opinion / পুরুষেরা কি জানে না মেয়েদের শরীরে যে দুটো ম্যামারি গ্ল্যাণ্ড আছে: তসলিমা

পুরুষেরা কি জানে না মেয়েদের শরীরে যে দুটো ম্যামারি গ্ল্যাণ্ড আছে: তসলিমা

বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন রাজনীতি, অর্থনীতিসহ নানা বিষয়ে লেখালেখি করে থাকেন।তবে ধর্মের বিষয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে শেষ ছাড়তে বাধ্য হন।যদিও আগের মতো তিনি তেমন একটা লেখালেখি করেন না কিন্তু সামাজিক মাধ্যমে বেশ সরব থাকেন তিনি।এবার ব্যক্তিগত বিষয়ের প্রসঙ্গ তুলে সামাজিক মাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন তসলিমা নাসরিন হুবহু পাঠকদের জন্য নিচে দেওয়া হলো।

আমি কখনও শাড়ির আঁচল বুকের মাঝখান দিয়ে নিই না। বক্ষযুগলের ওপরেই থাকে আমার শাড়ির আঁচল। কিন্তু বক্ষযুগলকে আঁচল দিয়ে যারা আড়াল করতে না চায়, তাদের এই না-চাওয়াকে কেন অশালীন বলা হবে? কোন যুক্তিতে? ব্লাউজের ওপর শাড়ির কোনও আঁচল পরতে আদৌ যদি কারও ইচ্ছে না করে, পরবে না। পরলে শালীনতা বজায় থাকে, না পরলে শালীনতা থাকে না — শালীনতার এই সংজ্ঞা কারা তৈরি করলো? যারা তৈরি করেছে, তারা মনে করে মেয়েদের গোটা শরীরটাই লজ্জাস্থান, স্তন সবচেয়ে ভয়ংকর লজ্জাস্থান। সুতরাং স্তনের লজ্জা ঢাকার জন্য মেয়েদের শরীরে বাড়তি কাপড়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শুধু কাঁচুলিতে হবে না, ব্লাউজ লাগবে, শুধু ব্লাউজে হবে না, শাড়ির আঁচল লাগবে, শুধু কামিজে হবে না, ওড়না বা দোপাট্টা লাগবে, কেউ কেউ দ্বিগুণ আতঙ্কে বলে দোপাট্টা বা আঁচলেও কাজ হবে না, বোরখা লাগবে, নিকাব লাগবে, হিজাব লাগবে।

পুরুষেরা কি জানে না মেয়েদের শরীরে যে দুটো ম্যামারি গ্ল্যাণ্ড আছে, যে দুটোকে বাংলায় স্তন বলা হয়? যা কিছু দিয়েই স্তন আড়াল করা হোক, তারা তো জানেই আড়ালে কী আছে। আড়াল করা থাকলেও তো পুরুষ নারীর প্রতি আকৃষ্ট হয়, ঠিক যেরকম পুরুষকে দেখে নারীও পুরুষের প্রতি আকৃষ্ট হয়। আকৃষ্ট হওয়া বন্ধ হয়ে গেলে তো মানবজাতির ওপর ধ্বস নেমে আসবে।
আকৃষ্ট হলেই যে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয় না কারও ওপর, এই শিক্ষাটা দিতে হয় সবাইকে। ঘরে বাইরে, পত্র পত্রিকায়, স্কুলে কলেজে, রেডিও টেলিভিশনে। সেটা না করে মেয়েদের শরীরে ঘুংঘট আর ঘোমটা চড়ানোটাই চূড়ান্ত অশালীনতা, অশ্লীলতা।
মেয়েদের মাথার চুল থেকে পায়ের নখ অবধি ঢেকে রাখার চেষ্টা বহু শতাব্দি ধরে চলছে। মেয়েদের শরীরকে , সত্যি বলতে, শরীর ভাবা হয় না, ভাবা হয় আস্ত যৌনাঙ্গ। সে কারণেই জনসমক্ষে যৌনাঙ্গ ঢেকে রাখাকে যেমন শালীনতা বলে ভাবা হয়, মেয়েদের সারা শরীর ঢেকে রাখাকেও শালীনতা বলেই ভাবা হয়। যারা পা’কেও যৌনাঙ্গ বলে মনে করে, তারা মেয়েদের ছোট শর্টস বা ছোট স্কার্ট পরার বিরোধী। যারা বাহুকে যৌনাঙ্গ বলে মনে করে, তারা মেয়েদের ফুলহাতা ব্লাউজ বা ফুলহাতা জামা পরার পরামর্শ দেয়। যারা মেয়েদের কবজি এবং আঙুলকেও, পা এবং পায়ের পাতাকেও যৌনাঙ্গ বলে মনে করে, তারা মেয়েদের দেখতে চায় হাতমোজা আর পা-মোজা পরিহিত অবস্থায়। শরীরের অন্য কোনও অঙ্গ নয়, শুধু চোখ খোলা রাখার অনুমতি জোটে অনেক মেয়ের। সম্ভব হলে চোখও তারা বন্ধ করে দিত, কিন্তু হোঁচট খেয়ে পড়ে মরে গেলে পুরুষেরই বিপদ। পুরুষেরাই যৌনবস্তুকে বাঁচিয়ে রাখে পুরুষের স্বার্থেই।

বাংলার নামী নৃত্যশিল্পী এবং অভিনেত্রী মমতা শঙ্কর মেয়েদের শালীনতা বজায় রাখতে বলেছেন, তা না হলে পুরুষেরা মেয়েদের খারাপ ভাববে–এই যুক্তি দিয়ে। যে পুরুষেরা মনে করে মেয়েদের শালীনতা নির্ভর করে মেয়েরা কাপড় চোপড় দিয়ে শরীর কতটা ঢাকলো তার ওপর, সেই পুরুষদের তিরস্কার না করে মমতা শঙ্কর তিরস্কার করছেন মেয়েদের। তিরস্কার করে তিনি যে পুরুষতন্ত্রের ধারক এবং বাহক–সেটাই প্রমাণ করলেন। শুনেছি তিনি সমকামিতাকে, এবং রূপান্তরকামিতাকেও তিরস্কার করেন। এবং এমন হোমোফোবিক মিসোজিনিস্ট লোকেরাই যখন আর্ট কালচারের শীর্ষে অবস্থান করেন, তখন আলোকিত হওয়ার বদলে যে অন্ধকারে পড়ে থাকবে সমাজ, এ নিয়ে কি কোনও সংশয় আছে কারোর? আমার তো নেই।

পুনশ্চঃ মেয়েদের স্তন যদি পুরুষের স্তনের মতো হতো আর পুরুষের স্তন যদি মেয়েদের স্তনের মতো হতো, তাহলে আমি নিশ্চিত পুরুষেরা তাদের স্তন কিছু দিয়ে ঢেকে রাখতো না বরং পেশি যেমন বুক ফুলিয়ে দেখিয়ে বেড়ায়, তেমন বুকও বুক ফুলিয়ে দেখিয়ে বেড়াতো।

About Babu

Check Also

আগামীকাল ঢাকায় বড় কিছু ঘটানোর পরিকল্পনা, আপাতত যানবাহন তল্লাসি করুন: ইলিয়াস হোসেন

আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করার উদ্দেশ্যে কিছু ব্যক্তি ও সংগঠন, যারা সংখ্যালঘু হিন্দুদের মধ্যে রয়েছে, পরিকল্পিতভাবে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *