এই সময়ে এসে জ্বালানি তেলের দাম যেভাবে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সেটা ঠিক হয়নি। জসিম উদ্দিন যিনি বাংলাদেশে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ‘ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)’ এর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি বলেন, এর ফলে ব্যবসায়ীরা শুধু নয় দেশের অর্থনীতির যে স্থিরতা সেটা আর থাকবে না, অর্থনৈতিক স্থিরতা আনতে এক সময় সরকার সমস্যায় পড়ে যাবে। সাম্প্রতিক সময়ে তেলের দাম বৃদ্ধির কারনে সরকার বেশ সমালোচনায় পড়েছে। তবে এর প্রভাব ইতিমধ্যে পড়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় পন্য দ্রব্যসহ সকল ধরনের ব্যাবসায়িক ক্ষেত্রে।
আজ (বৃহস্পতিবার) অর্থাৎ ২৫ নভেম্বর এফবিবিসিআইয়ের নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজনকৃত এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য কালে তিনি এই ধরনের মন্তব্য করেন। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সে এফবিবিসিআইয়ের নেতৃত্বে বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের সফর সম্পর্কে জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জসিম উদ্দিন বলেন, তেলের কম দামের মুখে ব্যবসায়ীরা যে কাজ হাতে নিয়েছেন তার খরচ এখন বাড়বে। তাদের সমস্যায় পড়তে হয়। এ কারণে ডলারের দামের সঙ্গে তেলের দাম সমন্বয় করতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমলে বাংলাদেশেও কমবে। আর যখন বাড়বে তখন বাংলাদেশেও বাড়বে। তেলের দাম একবারে ১৫ টাকা বাড়ানোর প্রয়োজন হবে না।
তিনি আরও বলেন, আমাদের এখানে কোনো জিনিসের দাম একবার বাড়লে আর কমানোর ঠিক থাকে না। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমে গেছে, সামনে আরও কমবে। তাই বাংলাদেশের বাজারে তেলের দাম কমানো দরকার।
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি বলেন, ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ এখন সময়ের দাবি। আগে আমরা শুধু তৈরি পোশাক শিল্পের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে পরিচিত ছিলাম। এখন আমরা লেদার, জাহাজ, সিরামিকসসহ অন্যান্য পণ্যও রফতানি করছি। এই বাজার আরও বাড়াতে হবে। না হলে আগামীর বাণিজ্যিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা কঠিন হবে।
আমাদের এখানে কোনো জিনিসের দাম একবার বাড়লে আর কমানোর ঠিক থাকে না। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমে গেছে, সামনে আরও কমবে। তেলের দাম কমার এই সুযোগটি লুফে নিতে হবে।
তিনি বলেন, বিদেশি ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশকে তাদের মার্কেট মনে করতে শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রীর সাথে সফরে আমরা ৬টি বাণিজ্য চুক্তি করেছি। ইউকে মার্কেট ও ফ্রান্স মার্কেটে আগামীতে আমাদের বাণিজ্য আরও বাড়বে। এছাড়া আমরা বিদেশে অবস্থানরত দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্মের বাংলাদেশিদের আমাদের ব্যবসার সাথে যুক্ত করার চেষ্টা করছি। তারাই বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিংয়ে নেতৃত্ব দেবে।
জসিম উদ্দিন বলেন, বর্তমানে আমাদের রপ্তানি বাণিজ্যের পরিমাণ ৫০ বিলিয়ন ডলার। বাণিজ্য ঝুঁকি মোকাবেলা করার জন্য আমাদের এটিকে ৩০০ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যেতে হবে। পাশাপাশি এই ব্যবসায়ী নেতা আরও মনে করেন যে বাংলাদেশ ২০২৯ সাল পর্যন্ত জিএপি সুবিধা পাবে। “একবার আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হলে, যদি আমরা ২০২৯ সালের মধ্যে বাণিজ্য সুবিধা বা জিএসপি সুবিধা পাই, তাহলে আমরা বাণিজ্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সক্ষম হব,” তিনি বলেন। .
সাংবাদিকদের করা ব্যাবসায়ীদের ঋন খেলাপের বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে জসিম উদ্দিন বলেন, বিশ্বব্যাপী চলমান পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশেও ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বেশ উল্লেখযোগ্য পরিমান বেড়েছে। আমাদের ব্যবসায়িক বিষয়টি এতে করে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ৯৯% ব্যবসায়ীর ঋণ পরিশোধের মনোভাব রয়েছে। সেখানে মাত্র এক শতাংশ ব্যবসায়ী রয়েছেন যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে এই সমস্ত ঋন খেলাপ করে থাকে। তবে এই সমস্যা থেকে উত্তরনের জন্য আমরা সরকারের সাথে কাজ করে যাচ্ছি। কারণ ব্যাংকিং সেক্টরটি আমাদের দেশের অর্থনীতিতে সব সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বজায় রাখে। বিশেষভাবে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতটিতে উন্নয়ন হয়েছে সেখানে দেশীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার মাধ্যমে ঘটেছে।