ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. তৈমুর রহমানের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার (৬ মার্চ) দুপুর ১টার দিকে রুহিয়া ছালিহিয়া মাদ্রাসা মাঠে তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। দ্বিতীয় জানাজা শেষে ছালিহিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
এর আগে রোববার (৩ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ভারতের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মঙ্গলবার বিকেলে ভারত থেকে তার মরদেহ দেশে আনা হয়।
বুধবার বেলা ১১টায় ঠাকুরগাঁও শহরের পাবলিক ক্লাব মাঠে জেলা বিএনপির সভাপতি প্রয়াত তৈমুর রহমানের প্রথম নামাজে জানাজায় সিঙ্গাপুর থেকে ভার্চুয়ালি অংশ নেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এ সময় মির্জা ফখরুল শোক প্রকাশ করে বলেন, তৈমুর রহমান বিএনপির বিশ্বস্ত যোদ্ধা। তার হঠাৎ চলে যাওয়া কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা সত্যিই একজন বিশ্বস্ত নেতাকে হারালাম।
তিনি আরও বলেন, আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে আজ একটি কঠিন দিন। আমি একজন নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিবিদ, একজন সমাজকর্মী এবং আমার একজন অত্যন্ত অনুগত রাজনৈতিক কমরেডকে হারিয়েছি। তৈমুর শুধু ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সভাপতিই ছিলেন না, তিনি ছিলেন এর ঊর্ধ্বে। ঠাকুরগাঁও জেলার সকলের কাছে তিনি ছিলেন প্রিয় মানুষ। তিনি মেহনতি মানুষের জন্য রাজনীতি করতেন। আমার রাজনৈতিক জীবনে তিনি ১৯৯১ সালে বিএনপিতে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি ঠাকুরগাঁও উপজেলার চেয়ারম্যান পদে দাঁড়ান এবং ২০১৫ সালে তিনি বিপুল ভোটে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করেছেন। সব সময় সাধারণ মানুষের পাশে ছিলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, তৈমুর রুহিয়ার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। কথা কম বললেও অভিনয় করতেন বেশি। তিনি ঠাকুরগাঁও জেলায় বিএনপিকে সংগঠিত করেছেন। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দেখতে যেতে পারিনি। আমি তখন জেলে ছিলাম। যখন চিকিৎসার জন্য ভারতে তখন আমি কারাগার থেকে মুক্তি পাই এবং তার সঙ্গে আমার টেলিফোনে কথা হয়। আমি তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
ঠাকুরগাঁও কেন্দ্রীয় মসজিদের খতিব মাওলানা খলিলুর রহমানের নেতৃত্বে জানাজায় বিপুল সংখ্যক মুসল্লি উপস্থিত ছিলেন।
জানাজায় অংশ নিয়ে বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ফরহাদ হোসেন আজাদ, নির্বাহী সদস্য জেড এম মর্তুজা তুলা, রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, ঠাকুরগাঁও জেলার সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সাল আমিন, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল হালিম, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সভাপতি বদরুদ্দিন বদর, জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক বেলাল উদ্দিন প্রধান, ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাবের সভাপতি মনসুর আলী, জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক রেজাউর রাজি স্বপনসহ বিভিন্ন অঙ্গনের ব্যক্তিবর্গ।
উল্লেখ্য, তৈমুর রহমান ১৫ ডিসেম্বর ফুসফুসের ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। ৬ ফেব্রুয়ারি মুম্বাইয়ের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে তার অস্ত্রোপচার হয়। তিনি সুস্থ হয়ে দেশে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু ৩ মার্চ বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৪টায় হাসপাতালে তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। তার দুই মেয়ে ও তিন ছেলে রয়েছে।