মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরো’ধী অপরা’ধের দায়ে বগুড়া-৩ আসনের বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল মমিন তালুকদার খোকাকে মৃ’/ত্যুদ’ণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরা’ধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি)-১। আজ (বুধবার) অর্থাৎ ২৪ নভেম্বর বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির আইসিটি-১ প্যানেল তার বিরুদ্ধে করা তিনটি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এ আদেশ দেন।
১৯৭১ সালে খোকা রাজাকার হিসেবে পরিচিত আব্দুল মমিন তালুকদারকে এখনো গ্রেফতার করা হয়নি এবং তার অনুপস্থিতিতে বিচার হয়েছে। সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে ট্রাইব্যুনাল ২০১ পৃষ্ঠার রায়ের সারসংক্ষেপ পড়ে রাজাকার নেতাকে মৃ’/ত্যুদ’ণ্ডের রায় দেয়।
আদমদীঘির কায়েতপাড়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা সুবিদ আলী বা’দী হয়ে আব্দুল মমিন তালুকদার খোকা ওরফে খোকা রাজাকারের বিরুদ্ধে ২০১১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় হ’/ত্যা, লু’টপা/ট ও অ’গ্নিসং/যোগের অভিযোগে মা’মলা করেন। আদালত আদমদীঘি থা’/নার ওসিকে মামলাটি এজাহার হিসেবে রেকর্ড করার নির্দেশ দেন। পরে মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়।
মোমিনের বিরু’দ্ধে ২০১৬ সালের ১৮ জানুয়ারি থেকে থেকে ২০১৮ সালের ৩ মে পর্যন্ত মামলার তদন্ত করা হয়। তার বিরুদ্ধে ৭১ সালের বিভিন্ন স্থানে ১৯ জনকে হ’/ত্যাসহ লুণ্ঠ’ন ও অ’গ্নিসং/যোগসহ তিনটি অভিযোগ আনা হয়েছে। পরে এসব অভিযোগের ভিত্তিতে ফরমাল চার্জ গঠন করেন আন্তর্জাতিক অপ’রাধ ট্রাইব্যুনাল। বিষয়টি দেশের একটি গনমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন।
অভিযোগ তিনটি হলো
প্রথম অভিযোগ, ১৯৭১ সালের ২২ এপ্রিল দুপুরের দিকে আ’সা/মি আবদুল মোমিন তালুকদারসহ পাঁচ থেকে ছয়জন মিলে ২০ জন পাকিস্তানি সে’/না নিয়ে বগুড়ার আদমদিঘী থা’/নার কলসা বাজার, রথবাড়ি ও তিয়রপাড়ার মুক্তিযোদ্ধা এবং হিন্দু স’ম্প্রদায়ের লোকজনকে হ’/ত্যা করতে অপারেশন চালায়। ওইদিন আ’সা/মি নিজে তার হাতে থাকা আ’গ্নেয়া’/স্ত্র দিয়ে কলসা গ্রামের ইসলাম উদ্দিন প্রামানিকসহ হিন্দু-মুসলিম মিলিয়ে ১০ জনকে গু’/লি করে হ’/ত্যা করেন।
দ্বিতীয় অভিযোগ, ১৯৭১ সালের ২৪ অক্টোবর থেকে ২৭ অক্টোবরে অভিযান চালিয়ে একই থা’/নার কাশিমালা গ্রামে হা’ম/লা চালিয়ে ১৬ থেকে ১৭টি বাড়ি লু’ণ্ঠন করে এবং সেদিন পাঁচজনকে গু’/লি করে হ’/ত্যা করেন।
তৃতীয় অভিযোগ, ১৯৭১ সালের ২৫ অক্টোবর রাতে আবদুল মোমিন তালুকদার রাজাকার ও পাকিস্তানি বা’হি’/নী নিয়ে আদমদিঘী থা’/নার তালশন গ্রামের অভিযা’ন চালিয়ে চারজনকে হ’/ত্যা করেন।
২০১৮ সালের ৩ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার তরফ থেকে জানানো হয়, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আ’/সা’মি আবদুল মোমিন মুসলিম লীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। পাকিস্তান দখ’লদার বা’/হি’নীকে সহযোগিতা করার জন্য সশ’/স্ত্র রাজাকার বা’/হি’নীতে যোগ দেন তিনি। আদমদীঘি থা’/নার রাজাকার কমান্ডার হিসেবে সহযোগিতা করেন অন্যান্য রাজাকার ও পাকিস্তান বা’/হি’নীকে। তার বিরুদ্ধে মোট ৭১৪ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৮ সালের দিকে তিনি বিএনপিতে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তাকে আদমদীঘি উপজেলা বিএনপির সভাপতির পদ দেওয়া হয়। এরপর তিনি দায়িত্ব পান বগুড়া জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি হিসেবে এবং সেই সাথে রাজশাহী বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ পেয়ে বিএনপির রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি জায়গায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। মো. আবদুল মমিন চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতির পদ পেয়েছিলেন। তিনি ২০০১ ও ২০০৬ সালে পরপর দুইবার এমপি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন।