Sunday , November 24 2024
Breaking News
Home / Countrywide / ঠিকানা ও ছবি বদলিয়ে ২০ বছর ধরে অন্যজনের জায়গায় চাকরি করছেন জালিয়াতকারী

ঠিকানা ও ছবি বদলিয়ে ২০ বছর ধরে অন্যজনের জায়গায় চাকরি করছেন জালিয়াতকারী

২০ বছর পূর্বে হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলাধীন শাহজাহানপুর নামক গ্রামের মঈন উদ্দিন খান সরকারি চাকরিতে যোগ দেন, তার বর্তমান বয়স ৪৩ বছর। কিন্তু তিনি যে সরকারী পেয়েছিলেন সেটা সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। কুমিল্লার এক ব্যক্তি ঐ চাকরি জালিয়াতি করে প্রকৃত চাকরি পাওয়া ব্যক্তির পরিচয় নিয়ে সিলেট কারাগারে কারার’ক্ষী হিসেবে চাকরি করছেন। বিষয়টি সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশ পাওয়ার পর কারা কর্তৃপক্ষ তদন্ত শুরু করেছে।

হবিগঞ্জ জেলা কারাগার এবং ঐ ভিকটিম সূত্রের মাধ্যমে জানা গেছে, মঈন উদ্দিন খান শাহজাহানপুর নামক গ্রামের মো. নুর উদ্দিন খানের পূত্র। তিনি সরকারি চাকরি না পাওয়ার পর সেখানকার গ্রাম্য বাজারে ফার্মেসির দোকান চালানোর মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন। ২০০১ সালের দিকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখার পর মইন কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে কা’রারক্ষীর চাকরির জন্য যান এবং শারীরিক সুস্থতা, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেন। তিনি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

তবে তাকে চাকরিতে যোগদানের জন্য পত্র পাঠানো হয়নি। চাকরি না পেয়ে তিনি চাকরির আশা না করে মনতলা বাজারে একটি ফার্মেসি দিয়ে ওষুধের ব্যবসা শুরু করেন। চলতি বছরের ১২ আগস্ট সিলেটের কারা উপ-মহাপরিদর্শকের কার্যালয় থেকে শাহজাহানপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বরাবর একটি চিঠি আসে মঈন উদ্দিন খান কারাগারের ২১৮৬২ মূলে মঈন উদ্দিন খান চাকরি করেন মর্মে একটি চিঠি আসে। ইউপি চেয়ারম্যান বাবুল মো. হোসেন খান চিঠি পেয়ে মইনকে একটি প্রত্যয়ন পত্রের মাধ্যমে বিষয়টি জানান।

প্রত্যয়নপত্রটি পেয়ে মঈন কা’রারক্ষী পদে চাকরি করেন না এবং তাঁর নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে কে বা কারা চাকরি করছেন—এই বিষয়টি জানিয়ে ১৬ সেপ্টেম্বর মাধবপুর থা’/নায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এ ছাড়া চেয়ারম্যান বাবুল হোসেন ১৬ নভেম্বর সিলেটের কারা উপমহাপরিদর্শক মো. কামাল হোসেনের বরাবর একটি চিঠি পাঠান। এতে তিনি উল্লেখ করেন, মঈন উদ্দিন খান একজন ফার্মেসি ব্যবসায়ী, কা’রারক্ষীর চাকরি করেন না। এই চিঠি পেয়ে সিলেটের কারা উপমহাপরিদর্শক এক চিঠিতে মঈনকে সশরীর হবিগঞ্জ কা’রাগা/রে হাজির হতে বলেন। পরে সিলেটের কারা উপমহাপরিদর্শকের কাছে গিয়ে মঈন জানান, তিনি কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কা’রাগারে কারারক্ষী পদে চাকরির জন্য পরীক্ষা দিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি চাকরি পাওয়ার কোনো কাগজপত্র পাননি। এ সময় তিনি চাকরিতে যোগদানের জন্য লিখিত আবেদন করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে কারা উপমহাপরিদর্শক বিষয়টি তদন্ত করে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিতে হবিগঞ্জ কারাগারের সুপারকে নির্দেশ দেন।

হবিগঞ্জ কারাগারের সুপারের পক্ষে জেলার জয়নাল আবেদীন ভূঞা চিঠি ইস্যু করে উভয় মঈন উদ্দিন খানকে কাগজপত্র নিয়ে হাজির হতে নির্দেশ দেন। শাহজাহানপুরের মঈন উদ্দিন খান এলাকার সাবেক চেয়ারম্যানসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে হবিগঞ্জ কারাগারে হাজির হন। গত শনিবার সকাল ১০টা থেকে দিনভর তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করেন জেলার জয়নাল আবেদীন। কিন্তু মঈনের নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে কুমিল্লার যে ব্যক্তি চাকরি করছেন, তিনি হবিগঞ্জ কা’রাগারে হাজির হননি।

শাহজাহানপুরের মঈন উদ্দিন খান বলেন, ‘সরকারি চাকরি করার অনেক আশা নিয়ে কারারক্ষী পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে পরীক্ষা দিয়েছিলাম। আমি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ায় কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আমার ঠিকানায় অধিকতর তদন্ত করা হয়। ভেবেছিলাম আমি চাকরি পাব। কিন্তু রহস্যজনক কারণে আমার যোগদানপত্র না আসায় আমি চাকরিতে যোগ দিতে পারিনি। যখন আমার কাছে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে চিঠি আসে, তখনই আমি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হই।

এছাড়া প্রতারণার যে বিষয়টি ঘটেছে সে বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার পর আমার ঠিকানা ব্যবহার করে বর্তমানে কর্মরত অভিযুক্ত মঈন উদ্দিন খান, আমার ফার্মেসিতে আসে এবং আমাকে ২ লক্ষ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব করেন সমস্যাটি মিটিয়ে ফেলার জন্য। আমি তার প্রস্তাবে রাজি হইনি। তবে কথিত মঈন উদ্দিনকে প্রতারণার বিষয়ে আমি জিঞ্জাসা করে জানতে চাইলে তিনি জানান, নিয়োগ প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের সাথে যোগসাজোশের পর আমার ছবি বদল করে আমার ছবির জায়গায় তার ছবি বসিয়ে ভু’য়া কাগজ ব্যবহার করে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ‘

জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া যিনি জেলা প্রশাসক হিসেবে রয়েছেন তিনি বলেন, ‘গত শনিবার তদন্ত চলাকালে ঐ অসৎ উপায়ে চাকরি নেওয়া কারারক্ষী মঈন উদ্দিন খান উপস্থিত হননি। শাহজাহানপুরের আসল মঈন উদ্দিন খান তার সমস্ত কাগজপত্রসহ এখানে এসেছিলেন। আমরা তাকে অনেক বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তার সাথে বেশ কয়েকজন শিক্ষিত মুরব্বিরা এসেছিলেন তাদের দেওয়া বক্তব্য নিয়েছি। আমি আরও অধিক তদন্তের জন্য শাহজাহানপুর যাব। তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করার পর আমি সেটি কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠাবো। এ বিষয়টি খতিয়ে দেখে কর্তৃপক্ষ সকল ধরনের ব্যবস্থা নেবে.

About

Check Also

সংস্কারের নামে ভয়াবহ দুর্নীতি-লুটপাট

সংস্কার ও উন্নয়নের নামে কয়েকগুণ বেশি ব্যয় দেখিয়ে হরিলুটের ব্যবস্থা করা হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *