দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনা সংক্রমন রোধে দীর্ঘ ১ বছরেরও অধিক সময় পর চলতি বছরের গত ১৪ নভেম্বর থেকে শুরু হয় এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা। তবে পরীক্ষা শুরু হতে না হতেই নানা অনাকাঙ্খিত ঘটানার মুখোমুখি হতে হয়েছে বেশ কিছু শিক্ষার্থীদের। আর এবার এই তালিকায় নাম উঠলো এসএসসি পরীক্ষার্থী আফরিন জাহান লিজার নাম।
জানা যায়, ঘুম থেকে উঠে বই নিয়ে পরীক্ষার শেষ মুহূর্তের প্রস্ততি নিচ্ছিলেন লিজা। এমন সময় খবর আসে লিজার বাবা প্রবাসে মারা গেছেন। আকস্মিক বাবার মৃত্যুতে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়লেও শিক্ষক ও স্বজনদের কথায় সোমবার কেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে লিজা।
মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহের গৌরীপুরের সহনাটি ইউনিয়নে সহনাটি দক্ষিণপাড়া গ্রামে। লিজা ওই গ্রামের সদ্য প্রয়াত আলাল উদ্দিনের মেয়ে। চলতি বছর লিজা ওই গ্রামের গিধাউষা হাসন আলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করছে।
স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে জীবিকার তাগিদে লিজার বাবা আলাল উদ্দিন দুই বছর ধরে সৌদি আরবের রিয়াদে থাকতেন। সেখানে তিনি একটি বাগানে কাজ করতেন। রোববার দুপুরে (সৌদি আরব সময়) তিনি শারীরিক ভাবে অসুস্থ হলে তাকে রিয়াদের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ওই দিন সন্ধ্যায় (সৌদি আরব সময়) তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। আলাল উদ্দিনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন তার বড় ভাই হাবিবুর রহমান। প্রবাসে থাকা স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করে মরদেহ দেশে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এদিকে সৌদি আরব থেকে রোববার রাতে মৃত্যুর খবর বাড়িতে আসলেও পরীক্ষার কথা ভেবে লিজার পরিবারের কাছে বিষয়টি গোপন রাখে স্বজনরা। কিন্ত পরের দিন সোমবার ভোরে বিষয়টি জানাজানি হলে বাড়িতে শোকের মহল।
সোমবার সকালে বাবা হারানোর কষ্ট নিয়ে পরীক্ষার কেন্দ্রে যায় লিজা। সহপাঠী ও দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের সহযোগিতায় জীববিজ্ঞান পরীক্ষায় অংশ নেয় সে।
এব্যাপারে প্রধান শিক্ষক শহীদুজ্জামান ফকিরের সঙ্গে আলাপ করা হলে তিনি সংবাদ মাধ্যমকে জানান, লিজার বাবার মৃত্যুর বিষয়টি জানতে পেরে পরিবার-পরিজনদের সঙ্গে কথা বলে লিজাকে পরীক্ষা দেয়ার জন্য উৎসাহ দেন তিনি। এরপর অন্যান্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতই পরীক্ষা দেয় সে। এছাড়া পরীক্ষা চলাকালীন সর্বদা তার ওপর খেয়াল রাখা হয় বলেও জানান তিনি।