সিরাজগঞ্জের তাড়াশে ভাগিনা রাজীবের সাথে ব্যবসায়িক লেনদেন ছিল মামা বিকাশের। যার কারণে শুরু হয় মনোমালিন্য। এরপর ভাগিনা রাজীব টাকা দিতে মামার বাড়িতে যায়। এরপর পালাক্রমে মামাতো বোন, মামি ও মামাকে হত্যা করে রাজীব। পুলিশ লা”শ উদ্ধারের ১২ ঘণ্টার মধ্যে হ”ত্যাকারীকে গ্রেপ্তার করে। পরে পুলিশের কাছে ট্রিপল মার্ডারের বর্ণনা দেন খু”.নি।
জেলার পুলিশ সুপার মো. আরিফুর রহমান মণ্ডল এর আগে মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুরে ভাগিনা রাজীব কুমার ভৌমিককে (৩৫) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রাজীব সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার তেলিপাড়া গ্রামের মৃত বিশ্বনাথ ও নিহত বিকাশের বড়বোন প্রমিলা রানীর ছেলে। আগের দিন যখন বিকাশদের খোঁজ মিলছিল না তখন তার মাসতুতো ভাই ও পূজা উদযাপন পরিষদের নেতাকর্মীদের সঙ্গে রিপোর্ট করতে থানাতেও যায় রাজীব।
পুলিশ সুপার বলেছেন যে, অভিযুক্তদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে যে খুনি রাজীব কুমার ভৌমিক (৩৫) এবং ভিকটিমরা পরস্পরের আত্মীয়। ভিকটিম বিকাশ চন্দ্র সরকারের বড়বোন প্রমিলা রানীর ছেলে রাজীব। হ”ত্যাকারীর বাবা সরকারি চাকরি করতেন। তার মায়ের মৃ”ত্যুর পর, ২০২১ থেকে মামা বিকাশ চন্দ্র বাবার পেনশনের টাকায় যৌথভাবে খাদ্য শস্য ব্যবসায় যোগ যুক্ট হন। ভিকটিম বিকাশ চন্দ্র সরকার তার ভাগনে রাজীর কুমার ভৌমিককে ব্যবসার মূলধন হিসেবে ২০ লাখ টাকা দেন।
এরপর ব্যবসা চলতে থাকলে খু”নি রাজীব কুমার ভৌমিক বিভিন্ন পর্যায়ে তার মামাকে প্রায় ২৬ লাখ টাকা ব্যবসায়িক লভ্যাংশ ফেরত দিলেও চলতি বছরে তার চাচা বিকাশ চন্দ্র সরকার খু”নি রাজীবের কাছে অতিরিক্ত ৩৫ লাখ টাকা দাবি করে। এরপর বিকাশ চন্দ্র সরকার ২২শে জানুয়ারী ৭-৮ দিনের মধ্যে দাবীকৃত টাকা ফেরত দিতে ভাগিনাকে অনেক চাপ দেয় এবং টাকার জন্য রাজীব ও তার মাকে (ভিকটিমের বোন) ফোনে বকাঝকা করে।
খুনি রাজীব কুমার ভৌমিক টাকা ম্যানেজ করতে ব্যর্থ হয়ে এবং তার মামার বকাঝকার পর হতাশ হয়ে তার মামাসহ পুরো পরিবারকে হ”ত্যা করার পরিকল্পনা করে। এরই অংশ হিসেবে গত শনিবার (২৭ জানুয়ারি) বিকেল ৪টা ৪৮ মিনিটে রাজীব তার মামাকে ফোন করে বকেয়া টাকা নিয়ে তাদের বাড়ি আসতে চায়। ভিকটিম বিকাশ চন্দ্র সরকার তাড়াশের বাইরে থাকায় তার ভাগিনাকে টাকা নিয়ে সরাসরি তার তাড়াশের বাসায় এসে মামির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বাসাতেই থাকতে বলেন।
তিনি বলেন, রাজীব যখন বাড়িতে যান, তখন তাঁর মামি সন্ধ্যাপূজা করছিলেন। খু”নি রাজীব কুমার বাড়িতে মামার অনুপস্থিতিতে তার মামি এবং মামাতো বোন পারমিতা সরকারকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এর একপর্যায়ে ভাগিনা রাজীবকে কফি খাওয়ানোর জন্য তার মামি বাসার নিচে দোকানে কফির প্যাকেট কিনতে গেলে হত্যাকারী রাজীব ব্যাগে করে রাস্তা থেকে ২৫০ টাকা দিয়ে কিনে আনা লোহার রড দিয়ে তার মামাতো বোনের মাথায় উপ”র্যুপরি আঘা”ত করে। এতে মামাতো বোন জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
এদিকে কফি কিনে মামি ঘরে ঢোকার সময় একইভাবে রড দিয়ে তার মাথায় আঘা”ত করেন। তার মামি ও মামাতো বোন পারমিতা সরকারকে সরকারকে হামলার পর সে চলে যেতে চায়। এরই মধ্যে তার মামা বাড়িতে আসেন। কিছুক্ষণ পর মামা ঘরে ঢুকলে সে প্রথমে রড দিয়ে মামাকে আঘাত করে। মামাকে হ”ত্যা করার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর লা”শ টেনে বেডরুমে নিয়ে যায়। এরমধ্যে তার মামি ও মামাতো বোনের গোং”রানির শব্দ আসলে পরে গিয়ে তাদেরকেও গ”লা কে”টে হ”ত্যা নিশ্চিত করে বাইরে তালা দিয়ে চলে যায়। পথে রাজীব একটি পুকুরে লোহার রড ফেলে রক্তমাখা হাসুয়ার ব্যাগটি তার বাড়িতে রাখে।
তিনি আরও বলেন, বিকাশের ফোনের কল রেকর্ড থেকে আমরা প্রথম ক্লু পেয়েছি। ডিজিটাল তথ্য প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্য এবং সার্বিক নিশ্চিতকরণের পর রাজীবকে গ্রেফতার করা হয়। তারপর রাজীব আমাদের কাছে এই খুনের কথা স্বীকার করে। তবে এটা সত্য যে এভাবে রাজীব একাই তিনজনকে হ”ত্যা করে। তারপরও আমরা সবকিছু পরীক্ষা করে দেখছি। তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।