ফরিদপুর বাস টার্মিনাল থেকে লাশ উদ্ধারের বিষয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন গ্রেফতারকৃত যৌ*নকর্মী রোজিনা আক্তার কাজল (৩২)।
মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) বিকেলে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান পুলিশ সুপার মোরশেদ আলম।
তিনি জানান, উদ্ধারকৃত লাশটি পাবনা জেলার নতুন গোহাইলবাড়ি গ্রামের মিলন প্রামাণিকের। তিনি রাজবাড়ী জেলার বিভিন্ন ইটের ভাটায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। দৌলতদিয়া যৌ*নপল্লীতে যাওয়ার সময় রোজিনা আক্তার (৩০) নামে এক যৌ*নকর্মীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর টাকা লেনদেন নিয়ে ঝগড়ার সময় গলায় ওড়না পেঁচিয়ে মিলনকে হ*ত্যা করে রোজিনা।
তবে রোজিনা স্বীকারোক্তিতে বলেন, মা তুলে বাজে ভাষায় গালি দেওয়ায় রাগের মাথায় আমি একাই তারে মারছি। তার কাছে টাকা পাইতাম। সেই টাকা ছাড়ানোর জন্য ঝগড়া হয়।
শনিবার (২৭ জানুয়ারি) সকালে ফরিদপুর পৌর বাস টার্মিনালে ফেলে রাখা একটি লাগেজ থেকে অজ্ঞাত পরিচয়ের লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পর সিসিটিভি ফুটেজ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় রোজিনা বেগমের পরিচয় শনাক্ত করে ঢাকার কদমতলীতে জুরাইন দেওয়ানের বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়েরের পর কোতয়ালী থানার এসআই শামীম হাসানের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত শুরু করে। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ বাজার থেকে মহেন্দ্র গাড়িটিকে প্রথমে শনাক্ত করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চালককে আটক করা হয়। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী মালপত্র বহনকারী রিকশাচালককে আটকের পর রোজিনাকে পাওয়া যায়।
তবে দৌলতদিয়ার ভিক্সানপল্লীতে রুবেল মাতুব্বরের বাড়ির দ্বিতীয় তলায় রোজিনার কক্ষে অভিযান চালিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় জুরাইনের দেওয়ান বাড়ির ৬ষ্ঠ তলা থেকে রোজিনাকে আটক করা হয়।
কেন এবং কিভাবে হ*ত্যা:
রোজিনাকে আটকের পর সে পুলিশকে জানায়, নিহত মিলন মাঝেমধ্যে তার বাড়িতে আসতো। ঘটনার আগের দিন মিলন তার বাসায় যায়। বেলা ২টার দিকে পাওনা টাকা নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। ঝগড়ার একপর্যায়ে রোজিনার মা তুলে বকাঝকা করলে রোজিনা ক্ষিপ্ত হয়ে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে তাকে হ*ত্যা করে। মৃত্যু নিশ্চিত হলে খাট থেকে নামিয়ে মরদেহটি কম্বল, বড় বেডশিট ও বালিশের কাভার দিয়ে মুড়িয়ে তার ঘরে থাকা বড় একটি লাগেজের মধ্যে রাখেন।
পরে লাশ গুম করতে প্রথমে ৬০০ টাকা ভাড়ায় রিকশা নিয়ে মহেন্দ্র স্ট্যান্ডে যান। সেখান থেকে তাকে ৬০০ টাকায় মাহেন্দ্রে তুলে দৌলতদিয়া থেকে ফরিদপুর বাসস্ট্যান্ডে নিয়ে আসা হয়। সেখানে তিনি ঢাকাগামী বিকাশ পরিবহনের টিকিট কেটে সকালের নাস্তা করার কথা বলে লাগেজ গাড়ির লাগেজ বগিতে রেখে যান। কিন্তু গাড়ি ছাড়ার নির্ধারিত সময়ে মালিককে না পেয়ে বাস টার্মিনালে লাগেজ ফেলে যান গাড়ির লোকজন।
যেভাবে যৌ*নপল্লিতে রোজিনা :
রোজিনা জানায়, প্রায় এক যুগ ধরে সে গোলন্দ ঘাটের দৌলতদিয়া বিষ্ণকপল্লীতে বসবাস করছে। ১৪ বছর বয়সে তার বাবা-মা তাকে বিয়ে দেন। তবে বিয়ের কিছুদিন পর তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায়। এরপর দৌলতদিয়া বিষ্ণপল্লীর চা বিক্রেতা হাকিমের সঙ্গে তার দ্বিতীয় বিয়ে হয়। হাকিম মারা যাওয়ার পর সুজন নামে আরেকজনকে বিয়ে করেন। এভাবেই চলছিল দৌলতদিয়া যৌ*নপল্লীতে তার জীবন।
অন্যদিকে পাবনার মিলন প্রামাণিক ইটের ভাটায় কাজ করে রাজবাড়ীতে থাকতেন। মাঝে মাঝে যৌ*নপল্লিতে যেতেন। সেখানে রোজিনার সঙ্গে তার পরিচয় হয়।
প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শৈলেন চাকমা ও কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।