ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সাবেক খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাবকে শরীফ থেকে শরিফা’ হওয়ার সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সমাজ বিজ্ঞান বইয়ের পাতা ছিঁড়ে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে’। তবে কেন শিক্ষক আসিফ মাহতাবকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে সে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।
অবশেষে মুখ খুলল ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়। সোমবার (২৯ জানুয়ারি) সকালে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগ থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে মাহতাবের চাকরিচ্যুত করার বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে।
জনসংযোগ কর্মকর্তা ফাতিয়াস ফাহমিদ এক বিবৃতিতে বলেন, সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিও সকল মতামত ও মতাদর্শের প্রতি সহনশীলতা ও শ্রদ্ধার ভিত্তিতে গঠনমূলক আলোচনা, বিতর্ক এবং পারস্পরিক বিনিময়ে বিশ্বাসী।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জাতীয় সম্পদের ক্ষতি সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য আচরণ, যা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় সমর্থন করে না। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি সম্প্রতি ব্র্যাকের শিক্ষক আসিফ মাহতাব উৎসের সপ্তম শ্রেণীর জাতীয় পাঠ্য বইয়ের পৃষ্ঠা ছিঁড়ে ফেলার ঘটনা এবং অন্যদেরকে পাবলিক ফোরামে একই কাজ করতে বলা ধ্বংসাত্মক কাজ বলে মনে করে। তারা কোনোভাবেই এ ধরনের অশিক্ষিত আচরণকে প্রশ্রয় দেয় না।
তাই, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি ২০২৪ সালের বসন্ত সেমিস্টারের জন্য আসিফ মাহতাবকে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে নতুন চুক্তি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে, এই সেমিস্টারের প্রস্তুতির জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মাহতাবকে তার সময় এবং প্রচেষ্টার জন্য পারিশ্রমিক দেবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি সব ক্ষেত্রে দেশের সংবিধান ও আইনকে সম্মান করে এবং দেশের প্রচলিত বিধিবিধান মেনে চলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাই ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি সমকামিতার প্রচার ও প্রসারের সঙ্গে যুক্ত বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু মহলের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি প্রতিটি মানুষের সমান অধিকার ও সম্ভাবনা বিকাশের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টিতে বিশ্বাস করে।
১৯ জানুয়ারি, শিক্ষক আসিফ মাহতাব রাজধানীর কাকরাইল ইনস্টিটিউট অফ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে “বর্তমান পাঠ্যক্রমের নতুন পাঠ্যপুস্তক: বাস্তবতা এবং ভবিষ্যত” শীর্ষক সেমিনারে বক্তৃতাকালে পাঠ্যপুস্তকে “ট্রান্সজেন্ডার গল্প” অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিবাদ করেন।
তিনি দাবি করেন, সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে ‘হিজড়া গল্প’ ঢুকিয়ে শিক্ষার্থীদের মগজ ধোলাই করা হচ্ছে। এ সময় তিনি সবার সামনে পাঠ্যবই থেকে ‘শরীফ থেকে শরিফা’ গল্পের পাতা ছিঁড়ে ফেলেন। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি তখন তাকে সমস্ত একাডেমিক কার্যক্রম থেকে স্থগিত করে এবং তার ব্যবহার করা ইমেলটি নিষ্ক্রিয় করে দেয়। দেশব্যাপী তুমুল আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঘটনাটি বিশ্লেষণের জন্য পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। এ নিয়ে কমিটি এখনো কাজ করছে।