Friday , September 20 2024
Breaking News
Home / Countrywide / নির্বাচনে যে কারণে নৌকা দিচ্ছে না আওয়ামী লীগ

নির্বাচনে যে কারণে নৌকা দিচ্ছে না আওয়ামী লীগ

আসন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচন উন্মুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। উপজেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন ও পৌর করপোরেশন- কোনো নির্বাচনেই দলীয় প্রার্থী দেবে না দলটি।

এসব নির্বাচনে ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের সঙ্গে কোনো আপস করবে না ক্ষমতাসীন দল। বরং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের স্বার্থে জাতীয় নির্বাচনের মতোই জোটের সব শরিক দলকে প্রার্থী দিতে উৎসাহিত করবে আওয়ামী লীগ। জোটের শরিকরাও নিজেদের মতো আলাদাভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে।

সোমবার রাতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য বলেন, উপজেলা নির্বাচন নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। সেখানে দলীয় প্রতীকের পক্ষে-বিপক্ষে মতামত দেন নেতারা। তবে দলীয় কোন্দল ও সংঘাত থেকে নেতা-কর্মীদের দূরে রাখতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতীক না রাখার পরামর্শ দেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাও নেতাদের এই মতামতের প্রতি নিজের সমর্থন জানান।

সভায় নৌকা প্রতীক না দেওয়ার পেছনে দুটি কারণ উল্লেখ করা হয়। প্রথম কারণ সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলা এড়ানো এবং দ্বিতীয় কারণ স্থানীয় নির্বাচনকে উৎসবমুখর ও অংশগ্রহণমূলক করা।

যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে কেন্দ্রীয় কমিটির প্রায় সব নেতা বলেন, কিছুদিন আগে সংসদ নির্বাচনে দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কারণে তৃণমূলে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। এখন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে একজনকে দলীয় প্রতীক দেওয়া হলে অন্যরা স্বতন্ত্র ভোট করবে। এতে বিভেদ আরও বাড়বে। বরং উন্মুক্ত করে দেওয়াই ভালো হবে।

এরপর দলের সভাপতি শেখ হাসিনা সবার মতামতকে সমর্থন করেন। তিনি বলেন, আপাতত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কোনো দলের মনোনয়ন দেওয়া হবে না। এটি ভোটকে উৎসবমুখর ও অংশগ্রহণমূলক করে তুলবে। জনপ্রিয় প্রার্থী বিজয়ী হবেন।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগ এবার সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছিল। যারা দলের মনোনয়ন পাননি তাদেরকেও নির্বাচনের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল স্বতন্ত্রভাবে। এজন্য আওয়ামী লীগ কারও বিরুদ্ধে কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে না এমন ঘোষণা দেয়া হয়েছিল।

সেই প্রেক্ষিতে এবার স্বতন্ত্র প্রার্থীদের হিড়িক পড়ে। প্রচুর স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং রেকর্ড সংখ্যক বিদ্রোহী প্রার্থী এবার নির্বাচনে জয়ী হন। কিন্তু এই জয়ের পরে সারা দেশে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রবল আকার ধারণ করেছে। নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক এবং উৎসবমুখর করার জন্যই আওয়ামী লীগ জেনে বুঝে এই ঝুঁকি নিয়েছে।

কিন্তু এই ঝুঁকির পর এখন সারা দেশে আওয়ামী লীগের কোন্দল এবং বিরোধ ছড়িয়ে পড়েছে। এরকম বাস্তবতায় আওয়ামী লীগ অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনের জন্য উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নেয়। এরকম বাস্তবতায় উপজেলা নির্বাচনে দলের কোন্দল এবং বিরোধ কিছুটা প্রশমিত হবে বলে ধারণা করছেন দলীয় নেতারা।

মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণমূলক দেখানোর কৌশলগত পদক্ষেপ নিইনি, নির্বাচনকে সর্বজনীন করার জন্যই দলীয় প্রতীক থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফলে উপজেলা পর্যায়ে সঠিক নেতৃত্ব উঠে আসবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে নির্বাচনে প্রতীক না দিলে কারও কিছু বলারও থাকবে না, যোগ করেন তিনি।

নানক আরো বলেন, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি জামায়াত দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করলে আওয়ামী দলীয় প্রতীকে ভোট দেবে না। তাছাড়া উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার না হলে বা দলীয় মনোনয়ন না দিলে আইনি জটিলতা থাকবে না।

এদিকে সিটি করপোরেশন ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তাদের প্রার্থী বা দলীয় প্রতীক মনোনয়ন না দিলে এবারের নির্বাচন তুলনামূলক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচনী কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, মেয়র বা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীরা উন্মুক্ত রাখলে একই দলের অনেকেই প্রার্থী হতে উৎসাহিত হবেন। বিএনপিসহ নির্বাচন বর্জনকারী দলের অনেকেরই নির্বাচনে অংশগ্রহণের সম্ভাবনা রয়েছে। শুধু তাই নয়, নির্দলীয় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আগ্রহী হবেন।

যত বেশি প্রার্থী অংশগ্রহণ করবেন, নির্বাচন আরও প্রতিযোগিতামূলক হবে এবং ভোটারদের উপস্থিতিও বাড়বে। এটি নির্বাচনে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরি করতে সহায়তা করবে। তবে নির্বাচনে সহিংসতা ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের প্রবণতা বৃদ্ধির আশ”ঙ্কা রয়েছে।

উদাহরণ হিসেবে তারা বলেন, জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে যেসব আসনে বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে সেখানে সহিংসতা ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা বেশি ঘটেছে।

About bisso Jit

Check Also

আ.লীগ ও তৃণমূল থেকে বিএনপিতে যোগদানের হিড়িক

নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিএনপিতে যোগদানের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *