Saturday , November 23 2024
Breaking News
Home / Countrywide / দলের মধ্যে বড় ধরনের পরিবর্তনের সুর বিএনপিতে

দলের মধ্যে বড় ধরনের পরিবর্তনের সুর বিএনপিতে

বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করেছে আওয়ামী লীগ। ভোট বর্জন করলে বিএনপির প্রাপ্তির খাতা শূন্য। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকার পর কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত অধিকাংশ নেতাকর্মীই হতাশ। এ নিয়ে দলের সর্বস্তরে নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ রয়েছে। বর্তমানে দল পুনর্গঠন নিয়ে আলোচনা চলছে। বিশেষ করে কেন্দ্র-তৃণমূলের মধ্যমসারির নেতারা জোর আলোচনা করছেন। তবে বিষয়টি তারেক রহমানের ওপর নির্ভর করছে বলে মনে করছেন সিনিয়র নেতারা।

দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি তিন বছর অন্তর দলীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব গঠনের কথা। ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল ২০১৬ সালের মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত হয়। এটাই শেষ। সেই ঐতিহ্যবাহী নেতৃত্বে ২০১৪ থেকে ২০১৪ সালের তিনটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কৌশলে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয় বিএনপি। এ অবস্থায় দলের সর্বস্তরে পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে দলটি। সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে আন্দোলন-সংগ্রামে যাদের বিচার-পরীক্ষা করা হয়েছে তাদের নিয়ে দলকে শক্তিশালী করবে।

বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট রফিক শিকদার বলেন, গঠনতন্ত্রে তিন বছর পরপর কাউন্সিলের মাধ্যমে দলকে শক্তিশালী ও গতিশীল করার কথা থাকলেও নানা কারণে তা হচ্ছে না বলে আমি মনে করি। আগামী ছয় মাসের মধ্যে তৃণমূল থেকে কেন্দ্রের সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত দলকে পুনর্গঠন করার পরিকল্পনা নিতে হবে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের একতরফা নির্বাচন আমাদের দলের বিশ্বাসী ও যারা অবিশ্বস্ত তাদেরও পরীক্ষা করেছে। পরীক্ষিত বিশ্বাসীদের নিয়ে দল পুনর্গঠন করে দলকে আরও শক্তিশালী ও আন্দোলনমুখী করতে হবে।

এদিকে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও তাদের অনুসারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্যপদ থেকে শুরু করে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকজন নেতা আলোচনায় রয়েছেন।

স্থায়ী কমিটির জন্য যারা আলোচনায় আছেন

গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির ১৯ সদস্যের মধ্যে নয়টি পদ শূন্য রয়েছে। যারা রয়েছেন তাদের অধিকাংশই বার্ধক্যজনিত শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। এ অবস্থায় দলের সর্বোচ্চ এই ফোরামের জন্য বেশ কয়েকজনের নাম আলোচনায় রয়েছে নেতাকর্মীদের মধ্যে।

আলোচনায় রয়েছেন আব্দুল্লাহ আল নোমান, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, ফজলুর রহমান, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, জয়নুল আবেদীন, নিতাই রায় চৌধুরী, বরকতুল্লাহ বুলু, আফরোজা খান রিতা, তাজমেরী এস ইসলাম, শামসুজ্জামান দুদু, আলতাফ হোসেন। . চৌধুরী, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জহির উদ্দিন স্বপন, হাবিবুর রহমান হাবিব, আসাদুজ্জামান রিপন, আমানুল্লাহ আমান ও খন্দকার আবদুল মুক্তাদির চৌধুরী।

ভাইস চেয়ারম্যান পদে যারা আলোচনায় আছেন

গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান পদ ৩৭টি। এই ফোরামে অন্তত দশটি শূন্য পদ রয়েছে। পুনর্গঠন ইস্যুতে এ পদ ঘিরে কয়েকটি নাম বেশি আলোচিত হচ্ছে।

যাদের মধ্যে রয়েছেন মজিবর রহমান সরোয়ার, হারুনুর রশিদ, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, গোলাম আকবর খন্দকার, আরিফুল হক চৌধুরী, জয়নুল আবদিন ফারুক, নজরুল ইসলাম মঞ্জু, মাহাবুব উদ্দিন খোকন, ফজলুল হক মিলন, সাখাওয়াত হোসেন জীবন, শাহাদাত হোসেন, মিজানুর রহমান মিনু এবং খায়রুল কবির খোকন।

মহাসচিব পদে আলোচনায় দুজন

২০১১ সালের ২০ মার্চ বিএনপির তৎকালীন মহাসচিব খন্দকার দেলওয়ার হোসেনের মৃত্যুর পর দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ঘোষণা করেন। এরপর ২০১৬ সালে দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের কয়েকদিন পর ৩০ মার্চ তাকে পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব ঘোষণা করা হয়। দল পুনর্গঠনের ইস্যুতে মহাসচিব পদে দলের নেতাকর্মীদের আলোচনায় আছেন দুজন। সালাউদ্দিন আহমেদ ও রুহুল কবির রিজভী।

সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব পদটির প্রবর্তন হয়। পরবর্তীসময়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ পদে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে রুহুল কবির রিজভী এ দায়িত্বে আছেন। এই পদেও দুজনের নাম শোনা যাচ্ছে। এরা হলেন হাবিব উন নবী খান সোহেল এবং শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি।

যুগ্ম মহাসচিব

বর্তমানে দলে সাতজন যুগ্ম মহাসচিব রয়েছেন। এ পদ ঘিরে নতুন করে আলোচিতদের মধ্যে রয়েছেন আহসান হাবীব দুলু, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, শামা ওবায়েদ, নাসির উদ্দিন অসীম, রকিবুল ইসলাম বকুল, রফিক শিকদার এবং আশরাফ উদ্দিন নিজান।

দপ্তর সম্পাদক

রুহুল কবির রিজভী সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে বর্তমানে দপ্তরের দায়িত্ব রয়েছেন। দল পুনর্গঠনের আলোচনায় এ পদে কয়েকজনের নাম উচ্চারিত হচ্ছে। যাদের মধ্যে রয়েছেন সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, ওমর ফারুক শাফিন ও হাসান মামুন।

১০ সাংগঠনিক বিভাগের সম্পাদক হিসেবে আলোচনায় যারা

সুলতান সালাউদ্দিন টুকু-ঢাকা, বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ-চট্টগ্রাম, এবিএম মোশাররফ হোসেন-বরিশাল, আজিজুল বারী হেলাল-খুলনা, জিকে গউস-সিলেট, হাজি ইয়াসিন এবং শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক-কুমিল্লা, আব্দুল খালেক-রংপুর, আমিরুল ইসলাম আলিম-রাজশাহী, সফিকুর রহমান কিরণ, শহিদুল ইসলাম বাবুল এবং আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন-ফরিদপুর এবং মো. শরিফুল আলম-ময়মনসিংহ।

মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ড. খোন্দকার আকবর হোসেন জাগো নিউজ কে বলেন, ‘ব্যর্থতা-সফলতা থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত। ব্যর্থদের সরিয়ে দিয়ে যোগ্যদের জায়গা দেওয়া উচিত। গত আড়াই-তিন মাসে দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের কর্মকাণ্ড মূল্যায়ন করে দল পুনর্গঠন করা দরকার। চলমান আন্দোলন-কর্মসূচির পাশাপাশি দলের পুনর্গঠনও রুটিনমাফিক হওয়া দরকার।’

রাঙ্গামাটি জেলা বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মোরশেদ আলম বলেন, “দলের পুনর্গঠন প্রয়োজন। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত চলমান আন্দোলন-সংগ্রামে যারা ভূমিকা রেখেছেন, তাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে হবে।”

ছাত্রবিষয়ক বক্তব্যে নুরকিবুল ইসলাম বকুল বলেন, “আমাদের আন্দোলনের একটা পর্যায় শেষ হয়েছে। আমি পথের আন্দোলনে আছি। শিগগিরই আমাদের নতুন পদোন্নতি হবে। দল পুনর্গঠিত হলে ছাত্রনেতারা আন্দোলনে নামবেন। সমস্ত অগ্রাধিকার পাবেন।

সংসদ সদস্য শায়রুল কবি খান বলেন, “সামাজিক আন্দোলনের দায়িত্বে থাকা তারেক রহমান সবার সঙ্গে আলোচনা করে দলের পুনর্গঠনের ব্যাপারে তিনি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।’

তবে দল পুনর্গঠনের বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।

About bisso Jit

Check Also

সংস্কারের নামে ভয়াবহ দুর্নীতি-লুটপাট

সংস্কার ও উন্নয়নের নামে কয়েকগুণ বেশি ব্যয় দেখিয়ে হরিলুটের ব্যবস্থা করা হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *