গাজীপুরের জয়দেবপুর থানার ওসি মিজানুরের বিরুদ্ধে এক কলেজছাত্রীকে বিয়ের কথা বলে ১০ দিন রিসোর্টে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যস্থতায় বৃহস্পতিবার রাতে ১০ লাখ টাকা দেনমহর দিয়ে ওই ছাত্রীকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন ওসি। কিন্তু ওসি দিনরাত কনেকে হুমকি দিতে থাকে। সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করতে মায়ের সামনে শারীরিক নির্যাতন করে।
নির্যাতন সইতে না পেরে কনে তার মোবাইল ফোন থেকে তার আত্মীয়দের কাছে মেসেজ পাঠিয়ে তাকে উদ্ধারের জন্য সাহায্য চেয়েছিল। তিনি আত্মহত্যার হুমকি দেন। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার দুপুরে থানার ওসিকে অপসারণ করে পরিদর্শক (তদন্ত) শরিফুল ইসলামকে সাময়িক দায়িত্ব দেওয়া হয়।
অভিযুক্ত ওসি সৈয়দ মিজানুর ইসলাম রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার সারদহ এলাকার সৈয়দ নুরুল ইসলামের ছেলে।
তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক। তিনি তার প্রথম স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে নারায়ণগঞ্জ শহরে থাকেন। আর কনে মানিকগঞ্জ সদরের দরিদ্র কৃষক পরিবারের মেয়ে। এইচএসসি পাস করে অনার্সে ভর্তির অপেক্ষায় আছেন।
পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ওসি মিজানুর তিন বছর ধরে মানিকগঞ্জ সদর থানার দায়িত্বে ছিলেন। এর আগে তিনি এক বছর সিংগাইর থানায় ছিলেন। দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে চার বছর আগে স্কুলে পড়ার সময় ওই ছাত্রীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে ওসি। বিভিন্ন উপহার ও আইফোন কিনে দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে ওসিকে গাজীপুরের জয়দেবপুর থানায় বদলি করা হয়।
সম্প্রতি ছাত্রীর বিয়ে ঠিক হয়। জানতে পেরে বিয়ে করার কথা বলে ওসি মানিকগঞ্জের এক ব্যবসায়ীকে ছাত্রীটিকে তাঁর কাছে গাজীপুরে পৌঁছে দিতে অনুরোধ করেন। নির্বাচনের পরদিন গত ৮ জানুয়ারি বিকেলে ওই ব্যবসায়ী ছাত্রীকে নিয়ে গাজীপুর আসেন। তোলেন রাজেন্দ্রপুর এলাকার গ্রিন শালবন রিসোর্টে। পরে একটি কক্ষে ওই ব্যবসায়ী এবং অন্য একটি কক্ষে ওসি ও ছাত্রী রাত্রি যাপন করেন। এভাবে ওই ছাত্রীর সঙ্গে ১০ দিন ধরে একই কক্ষে অবস্থান করতে থাকেন ওসি। পরদিন ব্যবসায়ী মানিকগঞ্জ ফিরে যান।
ওসি মিজানুর জানান, তার প্রথম স্ত্রী অসুস্থ থাকায় দুই লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে করেছেন। হঠাৎ বদলি হওয়ায় বাসা নিতে পারেননি। তাই সাময়িকভাবে রিসোর্টে নিয়ে গেলেন। সামান্য ভুল বোঝাবুঝির কারণে তাকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। কম দেনমহরানার কারণে স্যারের পরামর্শে ১০ লাখ টাকায় আবার বিয়ে করেন। জয়দেবপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শরিফুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার রাত থেকে তিনি ভারপ্রাপ্ত ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। শুনেছি ওসিকে মৌখিকভাবে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।