বাংলাদেশে যে সমস্ত গাড়ি ব্যবহৃত হয় সেগুলো পেট্রোল, ডিজেল, অকটেন, হাইব্রিড এবং বৈদ্যুতিক শক্তি চালিত। এবার চট্টগ্রামে হাইড্রোজেনকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করার মাধ্যমে গাড়ি চালানোর প্রযুক্তির যুগে প্রবেশ করতে চলেছে বাংলাদেশ। তবে হাইড্রোফয়েল গাড়ি বাইরে থেকে আমদানি ও সেটির ব্যবহারের বাংলাদেশে প্রথম উদ্যোগ।
বাংলাদেশে এই প্রথম বার হাইড্রোজেন জ্বালানি উৎপাদনের পথে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) এর গবেষণায় এমন ধরনের তথ্য উঠে এসেছে।
এই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে আগামী জুন মাসে যার লক্ষ্য হিসেবে সম্পূর্ন পরিবেশবান্ধব ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে।
গৃহস্থালির বর্জ্য এবং পানিকে যথাক্রমে বায়োমাস গ্যাসিফিকেশন এবং ইলেক্ট্রোলাইসিস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জ্বালানীতে রূপান্তরিত হবে। এর জন্য বিসিএসআইআর সম্প্রতি একটি ইউনিট গঠন করেছে। আরেকটি ইউনিট স্থাপনের কাজ পুরোদমে চলছে। দুটি ইউনিট উৎপাদন শুরু করলে দৈনিক ৫ কেজি ৬০০ গ্রাম হাইড্রোজেন জ্বালানি উৎপাদিত হবে। ২৪ ঘন্টা চালানো হলে, উৎপাদনের লক্ষমাত্রা প্রতিদিন ২৯ কেজি পৌঁছাতে পারে।
জানা গেছে, টেকসই এবং পরিবেশবান্ধব হাইড্রোজেন জ্বালানি উৎপাদনের জন্য বিসিএসআইআর ৫৪ কোটি টাকার একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। চট্টগ্রামে ২০১৮ সালের অক্টোবরে এ প্রকল্পের উদ্বোধন হয়।
দেশে যোগাযোগ, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ উৎপাদন, তেল পরিশোধন, ইস্পাত, মিথানল, ইলেকট্রনিক্স ও খাদ্যশিল্প খাতে হাইড্রোজেনের চাহিদা বাড়ছে।
হাইড্রোজেন জ্বালানি ভবিষ্যতে দেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারে। কারণ, এ জ্বালানির জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল পানি ও বায়োমাস দুটোই দেশে সহজলভ্য। এই প্রকল্পের আরেকটি লক্ষ্য হচ্ছে হাইড্রোজেন জ্বালানি উৎপাদন কেন্দ্রে বেসরকারি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা। দেশের প্রথম হাইড্রোজেন উৎপাদন কেন্দ্র, সরকার এই খাতে গবেষণার ওপর বেশি জোর দিবে বলে সবার ধারণা।
দেশে জ্বালানি সাশ্রয়ী ও নবায়নযোগ্য এবং পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে উন্নত দেশ গড়ার গবেষণার অংশ হিসেবে গাড়িটি প্রকল্পের আওতায় সরকারিভাবে কেনা হয়েছে। গাড়িটি বিসিএসআইআরের চট্টগ্রাম ক্যাম্পাসে পরীক্ষামূলকভাবে সফল হয়েছে। ল্যাবে উৎপাদিত হাইড্রোফয়েল (জ্বালানি) দিয়েই গাড়িটি চালানো হয়। নিরবচ্ছিন্ন চলাচলের জন্য একটি ফুয়েল পাম্প স্থাপন করা হবে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে।
বিসিএসআইআর প্রকল্প পরিচালক মো. আবদুস সালাম বলেন, হাইড্রোজেন জ্বালানি সার্বিকভাবে বিদ্যুতের নিরাপত্তা, বাড়তি বিদ্যুৎ সংরক্ষণ এবং জাতীয় অর্থনীতির ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বিশ্বের ২৪টি দেশ এখন হাইড্রোফয়েল প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে স্বাক্ষর করেছে। বাংলাদেশের ২৫তম দেশ হিসেবে সেই উন্নত দেশগুলোর কাতারে উঠে আসা স্বাধীনতার ৫০ বছরে অন্যতম অর্জন। প্রযুক্তির দিক থেকে বাংলাদেশি বিজ্ঞানীরা যে পিছিয়ে নেই, এটিই জানলো বিশ্ব।
“প্রাথমিকভাবে, আমি বিভিন্ন ধরনের গাছের ডাল এবং সেই সাথে যে অবশিষ্টাংশ থাকে সেটা থেকে এই হাইড্রোজেন জ্বালানী তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি,” এমনটাই বলেন তিনি। এই জ্বালানি ব্যবহার করে এই প্রথমবারের মতো ক্যাম্পাস এলাকায় গাড়ি চালানো হলো। ২০২২ সালের জুনে আমরা যে জ্বালানি পাম্প করার পরিকল্পনায় নেমেছি সেটাতে পানি থেকে হাইড্রোজেন উৎপাদন হবে। এরপর থেকে আমরা নির্বিঘ্নে গাড়ি চালাতে পারব। তারপর রান্নাঘরে কিচেন কম্পোস্ট হতে হাইড্রোফয়েল উৎপাদন করব। প্রকৃতপক্ষে, আমি দেখতে চাই যে, দেশে সহজলভ্য যে কোনও পণ্য থেকে আরও অধিক পরিমানে হাইড্রোফয়েল তৈরি করা যায় কিনা।
বিশ্বের অধিকাংশ উন্নত দেশগুলোতে কার্বন নিঃসরণ কমানোর উদ্দেশ্যে হাইড্রোফয়েল ব্যবহার করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে জাপান এবং কোরিয়া নিশ্চিত করতে চায় যে সমস্ত গাড়ির চলবে সেগুলোর একটি বড় অংশ হাইড্রোফয়েলে চলবে। ২০২০ সালের দিকে ভারতে একটি হাইড্রোফয়েল গাড়ি পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হয়েছিল। এবার সেখানে বাংলাদেশও একধাপ সামনে এগিয়ে গেল।