Saturday , November 23 2024
Breaking News
Home / Countrywide / এবার সরকারকে চাপে ফেলতে যে কৌশল নিতে চায় বিএনপি

এবার সরকারকে চাপে ফেলতে যে কৌশল নিতে চায় বিএনপি

বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো আবার সংগঠিত হয়ে রাজপথে নামার পরিকল্পনা করছে। নীতিনির্ধারকরা নতুন ফর্মে ‘ছক’ আঁকছেন। কর্মসূচি ঠিক করতে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকও করছেন তিনি। এখন পরিস্থিতি বুঝে সুবিধাজনক সময়ে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চান তারা।

সরকারবিরোধী আন্দোলনের মধ্যেই শেষ হয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এতে বিএনপিসহ অনেক রাজনৈতিক দল অংশ নেয়নি। নিরঙ্কুশ বিজয় নিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। সমাবেশ, বিক্ষোভ, গণসংযোগ, হরতাল, অবরোধ ও অসহযোগ আন্দোলন করেও বিরোধীরা নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি। কোন দাবি গৃহীত হয়নি। উল্টো বিএনপি এখন নানাভাবে কোণঠাসা। মহাসচিবসহ দলের শীর্ষ নেতাদের অনেকেই কারাবন্দি। অনেকে এখনো আত্মগোপনে রয়েছেন। তবে দাবি আদায়ের ব্যাপারে তারা এখনো আত্মবিশ্বাসী।

শান্তিপূর্ণ সভা, সমাবেশের মাধ্যমে মাঠে নামতে চান। এ ছাড়া কারাবন্দি নেতাকর্মীদের জামিন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা ও গণতান্ত্রিক বিশ্বের ভূমিকার দিকেও নজর রাখছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

নেতারা বলেন, জনগণ ভোট বর্জন করেছে। তাই প্রাথমিকভাবে তাদের আন্দোলন সফল হয়েছে। এখন পরিস্থিতি বুঝে সুবিধাজনক সময়ে সরকারের ওপর চাপ দিতে চাই। তারা মনে করেন, আওয়ামী লীগ ‘একতরফা’ ও ‘কারচুপি’ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার গঠন করলেও বেশিদিন ক্ষমতায় টিকতে পারবে না। বহির্বিশ্বের চাপের পাশাপাশি বিএনপি ও সহযোগীদের আন্দোলনের মাধ্যমেই সরকারকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হবে। ইতোমধ্যে সরকারের বিরুদ্ধে কর্মসূচিতে সাড়া দিয়েছে জনগণ।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খানদেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমরা রাজপথে আছি, থাকব। গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণভাবে যত আন্দোলন করা যায় বিএনপি করবে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ৭ জানুয়ারির পর সমমনা দলগুলোর সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছে বিএনপি। গণতন্ত্র ফোরামসহ আন্দোলনের অংশগ্রহণকারী দলগুলোর সঙ্গেও বৈঠকের কথা রয়েছে। বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সুপারিশ পর্যালোচনা করে নতুন কর্মসূচি ঠিক করবে।

এদিকে ভোটের পর যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিবৃতি পর্যালোচনা করেছেন বিএনপি নেতারা।

দলের বৈদেশিক সম্পর্ক দেখাশোনা করা এক নেতা দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, যারা নির্বাচন নিয়ে তাদের বক্তব্যকে ‘নরম’ বলে মনে করছেন তারা ঠিক নয়। তাদের বক্তব্যের ভাষা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় তারা নির্বাচনকে বৈধতা দেননি। একটি প্রধান গণতান্ত্রিক দেশ হিসাবে, তারা তাদের বক্তব্যে নির্বাচন এবং গণতন্ত্র সম্পর্কে যে ভাষা ব্যবহার করে তার চেয়ে বেশি কিছু বলে না। এটা তাদের কূটনৈতিক কঠোর ভাষা। তারা যেমন গণতন্ত্রের চর্চা করে, তেমনি কূটনীতিতেও বেশ পারদর্শী। নির্বাচন, স/হিংসতা, গণতন্ত্র ইত্যাদি নিয়ে তারা আগে যে কথা বলেছে, তার কোনোটাই বাংলাদেশে বাস্তবায়িত হয়নি। উল্টো বিরোধী দলগুলোর শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত নেতাকর্মীদের গণগ্রেপ্তার করেছে, একতরফা ও কারচুপির নির্বাচন করেছে। দেশ এখন একদলীয় রাষ্ট্র। যেখানে গণতন্ত্রকে সম্পূর্ণভাবে হ/ত্যা করা হয়েছে।

তিনি আশা করেন, বাংলাদেশের জনগণের আশা-আকাঙ্খা অনুযায়ী গণতান্ত্রিক বিশ্ব এসব বিষয়ে আরও সোচ্চার হবে। এছাড়া সব বিরোধী দলকে ঐক্যবদ্ধ করে সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে মাঠপর্যায়ে আন্দোলন শুরু করারও পরিকল্পনা রয়েছে। নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সিয়েরা লিওন, উগান্ডা, জিম্বাবুয়েসহ কয়েকটি দেশে ভিসা নীতি ও বিধিনিষেধ প্রয়োগ করেছে।

পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যা প্রত্যাশা করেছিল, সেসব দেশেরও একই প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু সেসব দেশেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। যার কারণে দেশটি ভিসা নীতি ও বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করে। আর ভোটের পরপরই তা দেওয়া হয়নি। কিছু দেশে ভোটের দেড় মাস পরেও এক বছর পরও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে এমন দেশ রয়েছে। কারণ তারা কী করে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো সুযোগ দেয় না। অর্থাৎ, তারা শতভাগ নিশ্চিত হওয়ার পরে ব্যবস্থা নিয়েছে।

যদিও বিএনপি কোনো বিদেশির দিকে তাকাচ্ছে না। বিএনপি মনে করে জনগণের ভোট বর্জনের মাধ্যমে তাদের আন্দোলন শতভাগ সফল। তবে অনেকেই বলছেন, সরকারের পতন হয়নি। তাদের জন্য বলাই বাহুল্য যে, বিএনপি কোনো জ/ঙ্গি বা ক্যাডারভিত্তিক সংগঠন নয়। বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক ও উদারপন্থী রাজনৈতিক দল। তারা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিশ্বাসী। ইতিহাস বলে ফ্যাসিবাদ ও একদলীয় রাষ্ট্র কখনো টিকে না। এই সরকার টিকবে না, পতন হবে। তাই হতাশ হবেন না।

একযোগে আন্দোলনে থাকা লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) মো. অলি আহমেদ দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, বর্তমান সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। স/ন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তারা নিজেদের মধ্যে নির্বাচিত পদ (এমপি) ঘোষণা করেছে। দিনের বেলায় গোপন ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচিত হন। তাই যে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকট দেখা দিয়েছে, যে রাজনৈতিক শূন্যতা রয়েছে, তা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না, মানুষ অন্যায়ের শিকার হচ্ছে। এই সরকারের বিদায় সময়ের ব্যাপার। আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

গণতন্ত্র ফোরামের শীর্ষ নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারের কোনো বৈধতা নেই। দেশব্যাপী সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভ, অবস্থান, অবরোধ আসতে পারে। পরিস্থিতি বুঝে হরতাল-অবরোধের মতো বড় কর্মসূচিতে যাব।

About Babu

Check Also

সংস্কারের নামে ভয়াবহ দুর্নীতি-লুটপাট

সংস্কার ও উন্নয়নের নামে কয়েকগুণ বেশি ব্যয় দেখিয়ে হরিলুটের ব্যবস্থা করা হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *