পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে পানিপট্টির ৫নং ওয়ার্ডের গ্রামর্দ্দন এলাকার কাজীকান্দা ভোটকেন্দ্রের ভোট দেওয়ার ডিজিটাল মেশিন (ইভিএম মেশিন) লুটপাটের ঘটনা জেরে ঐ গ্রামের পাঁচ শতাধিক পুরুষ গ্রাম ছেড়ে বাইরে অবস্থান করছে। পুরুষহীন হওয়ার সুযোগ নিয়ে প্রতিদ্বন্ধী পক্ষের বিজয়ী ইউপি মেম্বর সমর্থিত একটি সংঘবদ্ধ বাহিনী ওই গ্রামের তিনটি দোকান খুলতে দিচ্ছে না যার কারনে বিপাকে পড়েছে গ্রামে থাকা নারীরা। অন্য দিকে পুরুষ ছাড়া গ্রামে নারীদের হু’মকি দিয়ে যাচ্ছেন জয় পাওয়া ইউপি মেম্বর মো. দাদন মিয়ার বাহিনী। ফলে গ্রামে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
এম আর শওকত আনোয়ার ইসলাম যিনি গলাচিপা থানার ওসি হিসেবে দায়িত্বে আছেন তিনি দোকান খোলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, নারীদের নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সরেজমিন গ্রামর্দন ও কাজীকান্দা ভোটকেন্দ্র এলাকা ঘুরে এ তথ্য জানা গেছে।
গ্রামর্দ্দন এলাকার বন্ধ থাকা দোকানের মালিক সেলিম খার স্ত্রী মোসা. শাহিনুর বেগম (৩২) বলেন, দাদন মেম্বারের সমর্থক রুস্তুম মাস্টার আমার স্বামীর দোকান খুলতে বাধা দেয়। দোকান খুললে পু’লি/শে ধরিয়ে দিবে বলে হু’মকি দেয়। দোকানে রুটি, কেক, বিস্কুটসহ বিভিন্ন খাবার নষ্ট হয়ে গেছে। ভ’য়তে দোকান খুলতে পারি না। বাজারে আমরা ছাড়াও জাকির খা ও ইলিয়াস গাজীর দোকান আছে। রাতের আঁধারে কারা যেন ঘরে বড় বড় মাটির ঢিল ছুঁড়ে মা’রে। দরজা ধাক্কায়। আমার হার্টে সমস্যা তাই ঘর ছেড়ে শাশুড়ির ঘরে আশ্রয় নিয়েছি। রাতের আঁধারে ভ’/য়ে দরজা খুলি না।
শারীরিক প্রতিবন্ধী দিনমজুর আইয়ুব খার স্ত্রী বিউটি বেগম (৪০) বলেন, ‘আমার স্বামী একজন প্রতিবন্ধী। ঠিকমতো হাঁটতে পারে না। এলাকার ৭০০-৮০০ মাইনসের নামে নাকি পু’/লি’শ মাম’লা করছে। হেই ডরে আমার স্বামীও সবাইর লগে পলাইছে। কাম না করলে টাহা পাই না। স্বামী পলানো, ঘরে চাউল নাই, কাইল কী খামু কইতে পারি না। চাইরডা পোলাপানের (দুই ছেলে-দুই মেয়ে) মোহের দিকে চাইলে কান্দন আয়। আবার সপ্তাহে দুইডা এনজিওর কিস্তি, হেরাও আমাগো বি’/পদের কতা হোনতে চায় না।
কৃষক শাহজালাল খার স্ত্রী রাজিয়া বেগম (৩৫) বলেন, ‘আমার স্বামীও পু’/লি’শের মামলার ভ’/য়ে এলাকা ছাইড়া পলাইছে। বিজয়ী মেম্বার দাদন মিয়ার ভাই “নজির” মিয়া হুন্ডা লইয়া বাড়িতে আইয়া ডর দেহায়। খালি কয় “পু’/লি’শ আইছে, পু’/লি’শ আইছে”। হে (নজির) হগুলডিরে (সকলকে) ধাপ (হু’/মকি) দেয়, “এ কান্দার (এলাকার) পুরুষগুলা পলাইছে ক্যা? পারলে রাস্তায় আউক (আসুক)”। রাইত ১২টা ১টার দিকে নজির আর তার লোকেরা ঘরের বেড়া, দরজা টাহায় (ধা’ক্কা দেয়)। আমরা ডাকচিৎকার দিলে পালাইয়া যায়। ঘরে বয়স্তা (যুবতী) মাইয়া লইয়া ডরের (ভ’/য়) মধ্যে থাহা লাগে। হারা রাইত দাদন ও নজির হুন্ডা লইয়া আমাগো এলাকার মধ্যে ঘোরে। আমরা রাইতে ডরে ঘরের বাইরে যাইতে পারি না (প্রাকৃতিক কাজ সারতে)। আমরা এই ডর থেইক্যা (থেকে) মুক্তি চাই।’
এ বিষয়ে জানার জন্য গ্রামর্দ্দন এলাকার রুস্তুম মাস্টারের সাথে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে না পাওয়ায় তার বক্তব্য নেওয়া যায়নি।
এ প্রসঙ্গে নজরুল ইসলাম নাজির (নজিব) বলেন, ‘আমার ছোট ভাই দাদন এ বছর আবার মেম্বর পদে নির্বাচিত হয়েছেন। গ্রামের কিছু মানুষের সাথে আমার লেনদেন আছে। এজন্য গ্রামের মানুষের কাছে যেতে হচ্ছে। মহিলারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছে। আমি কখনো কাউকে কোনো ধরনের খারাপ কথা বলিনি।
এ বিষয়ে পানপট্টি ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের সদ্য বিজয়ী হওয়া ইউপি মেম্বর মো. দাদন মিয়া বলেন, আমি নিজেও ভ’য়ে ভ’য়ে দিন কাটাচ্ছি। আমার প্রতিপক্ষ দল এবং তার সমর্থকেরা আমাকে হেয় করতে এই ধরনের আপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমি এ বিষয়ে কোনো কিছুই জানি না।
এ ব্যাপারে এম আর শওকত আনোয়ার ইসলাম যিনি গলাচিপা থা’/নার ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি বলেন, আমি এক মহিলার ফোন পাওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে আজ (মঙ্গলবার) দুপুরের দিকে ঘটনাস্থলে পু’/লি’শ পাঠাই। দোকান যদি বন্ধ করে দেওয়া হয় সেটা আবার খোলার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর যদি কারো বিরুদ্দে গ্রামে ভী’/তি সৃষ্টির করার অভিযোগ পাই তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো ধরনের অপ্রী’তিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সেকারনে গ্রামে পু’/লি’শি নজরদারি বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।