নির্বাচন সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য না হলে বাংলাদেশ বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে—নির্বাচন কমিশনের (ইসি) এমন বক্তব্যের উদ্দেশ্য নিয়ে নানা প্রশ্ন ও সংশয় দেখা দিয়েছে।
কারণ, নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করার দায়িত্ব যাদের (ইসি), তারাই এসব কথা বলছেন। সে কারণে প্রশ্ন উঠেছে, তারা কি দায়িত্ব এড়াতে আগাম এ ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন, নাকি দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না?
কয়েকদিন ধরেই নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান বলছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য না হলে বাংলাদেশ বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে এবং রাষ্ট্র নিজেই ব্যর্থ হবে। যদিও একজন নির্বাচন কমিশনার এই ভাষণ দিচ্ছেন। তবে এটাকে নির্বাচনী বক্তব্য হিসেবে নেওয়া উচিত।
কয়েকদিন আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল নিজেই বলেছেন, তাদের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব থেকে তারা কেন এসব কথা বলছেন? এসব বলা তাদের কাজ নয়। অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পরিচালনা ইসির দায়িত্ব, তারা তা করবে।
কিন্তু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে জনগণ কী বোঝে, তারা বুঝে গেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও বুঝতে পেরেছে কী ধরনের নির্বাচন হচ্ছে। বিরোধী দলগুলো নির্বাচনে নেই। এখন দেখা যাচ্ছে নৌকা ও আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে ভোট। জাতীয় পার্টির অনেক প্রার্থীও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন। এর বাইরে যেসব দল নির্বাচনে আছে তাদের নামও মানুষ জানে না।
বর্তমান নির্বাচনে কোনো বিশৃঙ্খলা দেখছি না। এবারের নির্বাচন দলীয় নির্বাচন।
তবে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে নানা বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে। তারা কি এমন চাপের মধ্যে আছে যে তারা তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারছে না? নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্য আসলে দায়িত্ব এড়ানোর ইঙ্গিত দেয়।
আমি মনে করি, নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব নিতে চায় না। এখানে প্রশ্ন জাগে তারা জনগণের ওপর দায় চাপাতে চান, নাকি সরকারের ওপর দায়িত্ব দিতে চান?
শুধু আনিছুর রহমান নন, আরেক নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানাও নানা বক্তৃতা দিচ্ছেন। এমনকি প্রধান নির্বাচন কমিশনারও সময়ে সময়ে বিভিন্ন ভাষণ দিচ্ছেন।
এ নির্বাচন নিয়ে ইসির কাছ থেকে যে বার্তা পাওয়া যাচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে তারা নিজেরাই অস্বস্তিতে রয়েছেন। নির্বাচনের পর রাজনৈতিক পরিস্থিতি কী হবে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কীভাবে নেবে তা নির্বাচন কমিশন জানে না বলে মনে হয়।
নির্বাচন কমিশন একটি প্রতিষ্ঠান। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই নির্বাচন মেনে নেওয়া না হলে নির্বাচন কমিশনের ওপর তরবারির হাত থাকবে কি না- এ ধরনের চিন্তাও কাজ করতে পারে তাদের মধ্যে।
তবে নির্বাচন কমিশনের সংবিধানের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। সংবিধান অনুযায়ী তাদের নির্বাচন করতে হবে। তবে বর্তমান কমিশনের বয়স দুই বছরের বেশি হবে। এবারও তারা আস্থা তৈরি করতে পারেনি। সব মিলিয়ে এখন নির্বাচন কমিশনে একধরনের টানাপোড়েন ও অস্বস্তি আছে বলে মনে হয়।