বিভিন্ন সময় দরিদ্র ও সুবিধা বঞ্চিত মানুষের জন্য নানা পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় তারকাদের। কেউ গড়ে দেন বাস্থান আবার কেউ ব্যয় করেন কোটি কোটি টাকা। আর এমন নজির শুধু বাইরের দেশেই নয় বরং বাংলাদেশি তারকাদের মাঝেও দেখা যায়। আর এই তালিকায় রয়েছেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের অন্যতম সুপার স্টার অভিনেত্রী খাদিজা পারভীন বর্ষা। ইতিপূর্ব সাধারণ মানুষের জন্য অনেক করেছেন তিনি। আর এবার মানুষের জন্য এরকমই একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে যাচ্ছেন তিনি।
চিত্রনায়িকা বর্ষা প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করছেন একটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদ। বাংলাদেশের ইতিহাসে চিত্রনায়িকাদের উদ্যোগে এরকম মসজিদ নির্মাণের ঘটনা খুবই কম।
চিত্রনায়িকা বর্ষার জন্মস্থান সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের গারাদহ ইউনিয়নের গারাদহ পুরাতন বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন বগুড়া-নগরবাড়ি মহাসড়কের গাঁ ঘেষে ১ বিঘা জায়গার উপর এই মসজিদটি নির্মাণ করা হচ্ছে।
চিত্রনায়িকা বর্ষার গারাদহ গ্রামের পিত্রালয় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মহাসড়কের পাশেই করতোয়া নদীর কোল ঘেঁষে একটি দৃষ্টিনন্দন ও সুদৃশ্য মসজিদের সৌন্দর্য উকি দিচ্ছে মানুষের চোখের কোনে।
প্রধান ফটক ও সীমানা দেয়াল মোঘল আমলের ইসলামী অবয়বে নির্মাণ করা হয়েছে। প্রধান ফটক ও দেয়ালের নির্মাণ কাজ শেষ এখন শুধু রং মাখানো বাকি।
প্রধান ফটকের ভেতরে প্রায় বিস্তৃত ফাঁকা জায়গা রাখা হয়েছে এবং মুল মসজিদটি নির্মাণ করা হচ্ছে সাড়ে ১২ শতাংশ জায়গার উপরে। এক তলা বিশিষ্ট এই মসজিদ কমপ্লেক্সের দক্ষিণ-পূর্ব কোনে প্রায় ৫৫ ফুট উচ্চতার একটি মিনার তৈরি করা হয়েছে।
মসজিদের ভেতরে ও পাশের ওজুখায় কাজ করছেন রাজমিস্ত্রীরা, তাদের দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে নিয়ে আসা হয়েছে। এই মসজিদটি নির্মাণে প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে বলে কর্মরত রাজমিস্ত্রীদের কাছ থেকে জানা গেছে।
মসজিদের কেয়ার টেকার ও নায়িকা বর্ষার খালু মোঃ ইয়াকুব প্রামাণিক বলেন, প্রায় ১ বছর যাবৎ মসজিদের নির্মাণ কাজ চলছে। এসময় কয়েক দফায় মসজিদের ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়েছে, এখনই সর্বমোট ব্যয় বলা সম্ভব না।
তিনি আরো জানান, মসজিদের প্রবেশ মুখের ছাদে একটি দৃষ্টিনন্দন ঝাড়বাতি লাগানো হবে। মসজিদের ভেতরে ও দেয়ালে টাইলস লাগানো হবে। মসজিদের ভেতরের ৯০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। মোট ২০টি দৃষ্টিনন্দন জানালা রাখা হয়েছে। এই মসজিদে নারীদেরও নামাজের ব্যবস্থা রাখার পরিকল্পনা রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, মুসল্লীদের জন্য মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে দুইটি ওজুর স্থান ও দু্ইদিকেই শৌচাগার রাখা হয়েছে। সবমিলিয়ে আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে মসজিদটি সম্পূর্ণ রুপে মুসল্লীদের নামাজের জন্য প্রস্তুত হবে। এবং ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে এই দৃষ্টিনন্দন মসজিদের উদ্বোধন করবেন আমার ভাগ্নী বর্ষা ও তার স্বামী চিত্রনায়ক ও প্রযোজক অনন্ত জলিল।
চিত্রনায়িকা বর্ষার পিতা মোঃ আঈনুল হক বলেন, আমার মেয়েকে ছোটবেলা থেকেই ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যে মানুষ করেছি। সে যতো বড় মাপের মানুষই হোক না কেন তার ধর্মীয় অনুভুতি প্রবল। সে প্রতিদিন ফজরের নামাজ আদায় করে কোরআন তেলাওয়াত করে।
সে মসজিদ নির্মাণ করেছে এই নিয়তে যেন আল্লাহপাক খুশি হন এবং তার স্বামী অনন্ত জলিল, ২ সন্তান, পিতা মাতা ও সকল আত্মীয়স্বজনকে এহকাল ও পরকালে ভালো রাখেন।
গারাদহ গ্রামের স্থানীয় একটি মসজিদের ইমাম মাওলানা সাইফুল ইসলাম বলেন, বর্ষার মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগটা অত্যন্ত উত্তম একটি বিষয়। মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহনের যাত্রীরা এখানে নামাজ আদায় করতে পারবেন। তাছাড়া দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদের কাজ শেষ হলে অত্র অঞ্চলের মুসলিমদের কাছে এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হিসেবে বিবেচিত হবে।
এদিকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে মুঠো ফোনের মাধ্যমে গুণী এই অভিনেত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সবকিছু ঠিক থাকতে আগামী ডিসেম্বরে এটি উদ্বোধন করা হবে। এরপরই এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানানো হবে বলেও দাবি করেন তিনি। তবে এরই মধ্যে রীতিমতো নানা কৌতুহলী হয়ে পড়েছেন ভক্তরা। অনেকেই মসজিদটি একনজর দেখতে ছুটে যাচ্ছেন সেখানে।