Saturday , November 23 2024
Breaking News
Home / Countrywide / একদিনের ব্যবধানে সুর বদলালেন মসিউর রহমান রাঙ্গা, প্রশংসা প্রধানমন্ত্রীর (ভিডিও)

একদিনের ব্যবধানে সুর বদলালেন মসিউর রহমান রাঙ্গা, প্রশংসা প্রধানমন্ত্রীর (ভিডিও)

শনিবার সন্ধ্যায় রংপুর-৩ আসনে তৃতীয় লিঙ্গের স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন একই দলের বহিষ্কৃত সাবেক মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা। যা তিনি তার ফেসবুক আইডিতেও শেয়ার করেছেন। মুহূর্তের মধ্যে রাঙ্গার বক্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম এ নিয়ে খবরও প্রকাশ করেছে।

মসিউর রহমান রাঙ্গা ব্যক্তিগত কাজে রোববার (২৪ ডিসেম্বর) রংপুর প্রেসক্লাব এলাকায় আসেন। তার বক্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

বরং প্রসঙ্গ এড়িয়ে রাঙ্গা সাংবাদিকদের বলেন, সব মানুষই আল্লাহর সৃষ্টি। সুতরাং কে কি নিয়ে জন্মগ্রহণ করল এটাও কোনো বিষয় নয়। একটা মানুষের কর্মে মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যায় সেটা যে মানুষই হোক। অনেক জায়গায় মেয়ে মানুষ এমপি নির্বাচিত হয়ে এসেছে। আমি রংপুরের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। এ ব্যাপারে আমি করজোড়ে মাফ চাই।

পথসভায় আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জিএম কাদের আমার চেয়ারম্যান ছিলেন, আমি তার সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। তিনি আমাকে তা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। আমি অব্যাহতিপ্রাপ্ত ব্যক্তি হিসেবে স্বতন্ত্র নির্বাচন করছি। সে কারণে আমার নির্বাচনী এলাকা বা রংপুরে লাঙ্গলের গ্রহণযোগ্যতা কমেনি। লাঙ্গল একটি প্রতীক মাত্র, এতে দোষের কিছু নেই। লাঙ্গলকে যে পরিচালনা করবে, তার দোষ থাকলে থাকতে পারে। তাদের কোনো দোষ থাকলে রংপুরের মানুষ সেটা বিবেচনা করবে।

সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমি দোষী হলে আমার নির্বাচনী এলাকার মানুষ বিবেচনা করবে। এটা লাঙলের দোষ নয়, আমার মনে হয় না লাঙলের জনপ্রিয়তা কখনো কমেছে। আমি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের লাশ রংপুরে কবরে নামিয়েছি, তার ভাই (জিএম কাদের) আসেননি। তিনি (এরশাদ) আমাকে মহাসচিবের দায়িত্ব দিয়েছেন। আমার একটাই অভিযোগ, কেন আমাকে মহাসচিব পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল। এমনকি আমাকে একটি চিঠিও দেওয়া হয়নি। কিন্তু কারণ জানার অধিকার আমার আছে। এই অন্যায়ের বিচার আগামী ৭ জানুয়ারি জনগণ দেবে।

প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীক ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে জয়ের সম্ভাবনা কত- এমন প্রশ্নের জবাবে রাঙ্গা বলেন, আমি তো জিতব একশ ভাগ নিশ্চিত জেনেই নেমেছি। আমার এলাকায় কোনো দুর্নাম নেই। আমি উন্নয়ন করেছি। একসময় গঙ্গাচড়া মঙ্গাপীড়িত এলাকা ছিল, এখন মঙ্গার কোনো প্রাদুর্ভাব নেই। এখন মানুষ না খেয়ে মারা যায় না। সুতরাং এখনকার যে সমস্যা তার সমাধান করা গেলে আমাকে এই এলাকায় আর প্রয়োজন পড়বে না।

তিনি আরও বলেন, এবার উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হচ্ছে। এজন্য আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। আমি নির্বাচন কমিশনকেও ধন্যবাদ জানাই। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এখন পর্যন্ত তাদের প্রচেষ্টা ভালো হয়েছে। এখন আমরা প্রার্থীরা যদি সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করি তাহলে দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও উৎসবমুখর নির্বাচন হবে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ.

নিজ এলাকার উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনবারের এই সংসদ সদস্য বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকায় মোটামুটি রাস্তাঘাট অনেকটা কমপ্লিট। অবকাঠামোগত উন্নয়নও অনেক হয়েছে। কৃষি ক্ষেত্রেও অগ্রগতি রয়েছে। তিস্তানদীর ডানতীরটা প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া। ৪০০ কোটি টাকায় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এখন বামতীরটা বাধা এবং তিস্তা মহাপরিকল্পনা সরকার হাতে নিয়েছে, এটা বাস্তবায়ন হলে অনেক পরিবর্তন হবে। তখন শিল্প-কলকারখানা হবে, বিনিয়োগ বাড়বে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, বেকারত্ব দূর হবে।

বেকারত্ব দূর করতে পারলে গঙ্গাচড়া এলাকা থেকে মাদকের কারবারি কমে যাবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এখনো অনেক শিক্ষিত ছেলে-মেয়ে চাকরি পাচ্ছে না। এটা বাবা-মার জন্য বোঝা। অনেকেই নেশায় জড়িয়ে পড়ছে। কর্মসংস্থানের সুযোগটা বাড়ানোর চেষ্টা করছি। তবে বেকারত্ব দূর করা গেলে এলাকা থেকে মাদকের ব্যবসা অনেকটা কমে যাবে।

প্রসঙ্গত, শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের চওড়ারহাট এলাকায় আয়োজিত নির্বাচনী পথসভায় রংপুর-৩ আসনের তৃতীয় লিঙ্গের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন মসিউর রহমান রাঙ্গা।

তিনি ওই সভায় বলেন, আল্লাহর মাইর দেখছেন? আমার অ্যাটেতো (এখানে) ৮-৯টা লোক আছি, ভোট কইরবার লাগছি (নির্বাচন করছি)। আর রংপুরোত বোলে (রংপুর-৩ আসন) একনা না দুকনা (এক-দুইজন) মানুষ করতেছে, তাও আমাদের মতন মানুষ নোয়ায়। আমি যদি এই রকম একটা সিটে ইলেকশন করতাম, খোদার কসম আমি ইলেকশন করতাম না। ফেলে দিয়ে চলে যাইতাম। মুই না করো উয়ার (তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থী) সাথে ইলেকশন। মুই মানুষের সাথে কইরবার চাও (নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা)।’ এসময় তার কর্মী-সমর্থকরা উচ্চস্বরে হিজড়া-হিজড়া বলে জানান দেন।

মসিউর রহমান রাঙ্গা রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া ও সিটির ১ থেকে ৮ নম্বর ওয়ার্ড) বর্তমান সংসদ সদস্য। আওয়ামী লীগ এ আসনটি জাতীয় পার্টির জন্য ছেড়ে দেওয়ায় অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজু প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। তবে দলের আরেক নেতা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবলু (কেটলি প্রতীক) স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। অন্যদিকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ও সাবেক সংসদ সদস্য হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ (লাঙ্গল প্রতীক) নির্বাচনে নেমেছেন।

এ আসনে ভোটার ৩ লাখ ৩২ হাজার ৪৬ জন। বর্তমান সংসদ সদস্য ও সাবেক এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা ২০০১ সালে এ আসন থেকে নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে এরশাদের ভাগ্নে হোসেন। মকবুল শাহরিয়ার আসিফ জাতীয় পার্টি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

About bisso Jit

Check Also

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা কমাচ্ছে: রিজভী

দেশের দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতার তীব্র সমালোচনা করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *