সম্প্রতি সময়ে দেশে বেশ কিছু নিত্যেপ্রয়োজনীয় পন্যের দাম লাগামহীন ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে দেশের জন সাধারন ব্যপক ক্ষতির কবলে পড়েছে। এরই মধ্যে আবার লিটার প্রতি ১৫ টাকা হারে বৃদ্ধি পেয়েছে ডিজেল এবং কেরোসিন তেলের দাম। এই নিয়ে দেশে এক অস্থিরতা বিরাজ করছে। সম্প্রতি এই বিষয়ে এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের চলমান পরিস্তিতি নিয়ে বেহস কিছু কথা বললেন গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন।
আওয়ামী লীগ বিরোধী নির্বাচনি জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কোনো অস্তিত্ব নেই বলে স্বীকার করেছেন জোটটির প্রধান নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। তবে গত নির্বাচনের এই জোটটি আবার সক্রিয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে এটার কোনো অস্তিত্ব নেই। তবে একটা সম্ভাবনা তো আছে। আমাদের পুনর্জাগরণের সম্ভাবনা আছে। নতুন করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কিছু একটা করার অবশ্যই সম্ভাবনা আছে।’ শনিবার (১৩ নভেম্বর) রাজধানীর বিজয়নগরের চু ওয়াং রেস্টুরেন্টে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনের দাবিতে ওই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিরোধী নির্বাচনি জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। বিএনপি এ জোটের বড় দল হলেও জোটের প্রধান নেতা হিসেবে আলোচনায় চলে আসেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। তবে ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগ থেকে বের হয়ে গণফোরাম প্রতিষ্ঠা করলেও রাজনীতিতে কখনও আলোড়ন তুলেতে পারেননি এই গণফোরাম নেতা। তবে নির্বাচনের পর তিনি গুরুত্ব হারান বিএনপির কাছে।
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রসঙ্গে জোটের এই প্রধান নেতা বলেন, ‘এটা নিয়ে আমরা বসব, আলোচনা করব এবং সিদ্ধান্ত নেব।’ ৪ ডিসেম্বর গণফোরামের যে কাউন্সিল হওয়ার কথা ছিল সেটি পিছিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানান কামাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের দলের ৪ ডিসেম্বর যে সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল সেটা জানুয়ারির শেষে হবে। আমরা সম্মেলন মূলতবি করছি।’ কামাল হোসেন বলেন, ‘আমরা দুটি বিষয়ে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। একটি হলো ডিজেলের দাম বাড়ানোর অজুহাতে যানবাহনে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। এই অজুহাতে জিনিসপত্রের দাম বাড়ানো হয়েছে। আমরা মনে করি যে, এটা অনুচিত হয়েছে। কারণ ডিজেলের দাম বাড়ানোর জন্য এতগুলোর দাম বাড়ার কথা না। ডিজেলের দাম বাড়ার অজুহাতে সবকিছুর দাম বাড়ানো হয়েছে। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। এটা উচিত হয়নি এবং এটার দাম কমানোর দরকার।’ নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচনের দাবি করে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচন আমরা দাবি করি, কেন না আমরা দেখেছি যে দলীয় নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হয় না। সে কারণে আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি, আগামী নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীনে হওয়া উচিত।’
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি করছেন কিন্তু দাবি আদায়ে কোনো পরিকল্পনা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপাতত তো দাবিটা সামনে আনি, তারপরে কীভাবে আন্দোলন করব সেটা আমরা পরে জানাব।’ নির্দলীয় সরকারের দাবির যৌক্তিকতা আছে কি না জানতে চাইলে কামাল হোসেন বলেন, ‘আমরা আগেই দেখেছি যে, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন নিরপেক্ষ হয় না। নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে আমরা বলছি যে, যে সরকার নির্বাচনের সময় থাকবে তাকে দল নিরপেক্ষ হতে হবে। তাহলে আশা করা যায় আমরা একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন পেতে পারি।’ সংবিধানে তো নির্দলীয় সরকারের বিষয়টি নেই সেক্ষেত্রে আপনারা কী করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা দাবি তুললে তারপর এটা আলোচনা মধ্যে আদায় করা যায়। প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধন করা হবে। জনগণের দাবি উঠলে এটা হবে।’ কবে নাগাদ নির্দলীয় সরকারের দাবিতে কঠোর অবস্থানে যাবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনাদের প্রথমেই আমরা বললাম, আমরা এটা করব। দ্বিতীয় হলো আমরা বসে একটা পরিকল্পনা করব। পরবর্তীতে সেটা সবাইকে জানানো হবে।’
কোনো নির্দিষ্ট সময় আছে কিনা জানতে চাইলে কামাল হোসেন বলেন, ‘এর পরে যখন ব্রিফ করব, সেগুলো বলতে পারব।’
নির্বাচন কমিশন আইন করে করলে ভালো হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সার্চ কমিটিতে নিরপেক্ষ লোক না থাকলে সেটা নিরপেক্ষ হয় না। আমরা আইনের পক্ষে। সরকার দাবি না মানলে দেশে সংকট সৃষ্টি হবে। তারপর আন্দোলন হবে। দেশের মানুষ যদি এটা নিয়ে বিক্ষুদ্ধ হয় তাহলে জোরদার আন্দোলন হবে।’ সার্চ কমিটি নিরপেক্ষ হবে কি না এমন প্রশ্নে কামাল হোসেন বলেন, ‘নিরপেক্ষ বলতে নিরপেক্ষ। যারা বুঝতে চান নিরপেক্ষ কী সেটা তাদের বোঝানো প্রয়োজন হয় না।’ আইন করে নিরপেক্ষ লোক নির্বাচন কমিশনের জন্য পাওয়া সম্ভব কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কিছুটা সম্ভব হবে। একেবারে যে আইনকে অমান্য করবে তা নয়। তবে এটা ঠিক বলেছেন, আইন অমান্য করলে তো সেটা করা যায় না। উদ্দেশ্যে সৎ হতে হয়।’
এদিকে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বেশ সরব হয়েছে দেশের রাজনৈতিক দল গুলো। গত নির্বাচনে ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে জোট বেঁধে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেছিল বিনএনপি দল। তবে নানা কারনে এই জোটের ভাঙন হয়েছে। এক্ষেত্রে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রত্যেক দলই নিজ নিজ অবস্থানে থেকে নানা ধরনের পরিকল্পনা করছে নির্বাচনে অংশগ্রহন প্রসঙ্গে।