Friday , September 20 2024
Breaking News
Home / Countrywide / এমপি ফারুকের চেম্বারের ম্যানহোলে আ.লীগ কর্মীর লাশ, সিসি ক্যামেরা ‘নষ্ট’ থাকায় রহস্য

এমপি ফারুকের চেম্বারের ম্যানহোলে আ.লীগ কর্মীর লাশ, সিসি ক্যামেরা ‘নষ্ট’ থাকায় রহস্য

রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) ওমর ফারুক চৌধুরীর রাজনৈতিক কার্যালয়ের ম্যানহোল থেকে আওয়ামী লীগ কর্মী নয়াল উদ্দিনের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় রহস্য দেখা দিয়েছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ক্যামেরা ‘ভাঙা’ হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে তদন্তকারীদের মনে সন্দেহ ঘনীভূত হয়েছে। এ বিষয়ে এমপি ফারুক কিছু বলছেন না। মঙ্গলবার ও বুধবার তিনি ফোন ধরেননি।

রাজশাহী নগরীর নিউমার্কেট এলাকায় এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর ১০ তলা ভবন রয়েছে। ভবনটির নাম থিম ওমর প্লাজা। এই ভবনের পাশেই তার একতলা রাজনৈতিক কার্যালয়। থিম ওমর প্লাজা ও রাজনৈতিক কার্যালয়ের মাঝামাঝি ম্যানহোলে দুই-তিন দিন আগে মারা যাওয়া আওয়ামী লীগ কর্মী নয়নালের অর্ধগলিত লাশ পড়ে ছিল।

নয়নালের স্বজনরা মনে করেন, নয়নালকে হত্যা করে লাশ ফেলে রেখে গেছে। তাই মঙ্গলবার সকালে লাশ উদ্ধারের পর রাতে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। তবে মামলায় কাউকে আসামি করা হয়নি।

পুলিশ তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, পুরো এলাকাটি সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। নিরাপত্তারক্ষী ছাড়া বাইরে থেকে কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। এমন জায়গায় নয়নালের মৃত্যু ঘিরে বড় রহস্যের উদ্ভব হয়েছে।

ঘটনাস্থল থেকে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজ না পাওয়ায় রহস্য আরও ঘনীভূত হয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পুরো এলাকা সিসি ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণে। রাজনৈতিক কার্যালয়ের পাশ থেকে কেউ ওই ম্যানহোলের দিকে গেলে একাধিক সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়তে হয়। তবে রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনের সিসি ক্যামেরা ভাঙা। থিম ওমর প্লাজার সিসি ক্যামেরার দায়িত্বে থাকা কর্মচারী মো. শান্তা পুলিশকে বিষয়টি জানায়।

কিন্তু শান্তা থিম ওমর প্লাজার নিচতলার গ্যারেজের কাছে থাকা ক্যামেরার ফুটেজ পুলিশকে সরবরাহ করেন। রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনের প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ না করে থিম ওমর প্লাজার গ্যারেজের অংশ দিয়ে কেউ প্রবেশ করলে এই ক্যামেরায় দেখা যাবে। রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনের ক্যামেরার ফুটেজ পাওয়া গেলে তদন্ত অনেকদূর যেত। কিন্তু সেই ক্যামেরার ফুটেজ পাওয়া যায়নি।

নিহত নয়নালের ভাতিজা সোহেল রানা জানান, যে ম্যানহোলে লাশ পাওয়া গেছে তার অর্ধেক ঢাকনা এবং অর্ধেক খালি। ম্যানহোলের পাশের দুটি ল্যাট্রিন এখনও ব্যবহার করা হচ্ছে। একটা লাশ পচে গেছে, কেউ দেখেনি এটা খুবই রহস্যজনক। তিনি পুরোপুরি সুস্থ ছিলেন। তাই হত্যার পর নয়নালের লাশ ফেলে রাখা হয়েছে বলে তারা মনে করছেন।

তিনি আরও বলেন, ম্যানহোল যেখানে আছে সেখানে বাইরের কেউ লাশ আনতে পারবে না। এমনকি সীমানা প্রাচীরের উপরেও সেখানে কোনো লাশ ফেলা যাবে না। কারণ জায়গাটি থিম ওমর প্লাজার সীমানা প্রাচীরসহ মোটা রডের জাল দিয়ে ঢাকা। ম্যানহোলের কাছে যেতে রড গেট পার হতে হয়। তাই নয়নালের মৃত্যুর পেছনে বড় রহস্য রয়েছে বলেও মনে করছেন তারা।

নয়নালের অর্ধগলিত দেহ উদ্ধারের আগের দিন ঘটনাস্থলে বি-চিং পাউডার ছিটানো নিয়েও রহস্য তৈরি হয়েছে। থিম ওমর প্লাজার সামনের এক ব্যবসায়ী জানান, আশপাশের ব্যবসায়ীরা দুটি টয়লেট ব্যবহার করেন। সেখানে আগে কখনো ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে দেখেননি। তবে লাশ উদ্ধারের আগের দিন সেখানে প্রচুর ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে দেখতে পান। এমনকি যখন ব্লিচিং পাউডার ছিটানো হয়েছিল, তখনও কেউ মৃতদেহ দেখতে পায়নি, যা অবিশ্বাস্য। এখানে পড়ে থাকা নৈনালের লাশ তাদের কাছেও রহস্য মনে হয়।

আশপাশের ব্যবসায়ীরা জানান, রাজশাহী-১ আসনে ওমর ফারুক চৌধুরী আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ায় প্রতিদিন অসংখ্য নেতাকর্মী এই রাজনৈতিক কার্যালয়ে আসেন। রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনের ফাঁকা জায়গায় বসে তিন বেলার খাবারে নেতাকর্মীদের বিরিয়ানি খাওয়ানো হয়। তিনদিন ধরে কেউ লাশ দেখেনি বলেও তাদের অবিশ্বাস্য মনে হয়েছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নগরীর শিরোইল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মাহফুজুর রহমান বলেন, আমরা এখনো সেভাবে তদন্ত শুরু করিনি। একটি সিসিটিভি ফুটেজ পেয়েছি। ৭ দিনের এই ফুটেজ এখনো দেখা যায়নি। তবে ক্যামেরার ফুটেজ পাইনি যা গুরুত্বপূর্ণ। সেই ক্যামেরা নষ্ট।

লাশের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর নয়নালের মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানান তিনি।

বুধবার বিকেলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নয়নালের লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়। পরে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

নয়াল আওয়ামী লীগের একজন নিবেদিতপ্রাণ কর্মী ছিলেন। তার বাড়ি রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার শ্যামপুর থামারপাড়ায়। নয়নালের কোনো স্ত্রী-সন্তান ছিল না। শুধু রাতেই বাড়িতে থাকতেন। সকালে নগরীতে এসে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় ও নেতাকর্মীদের সঙ্গে সারাদিন কাটিয়েছেন তিনি। নেতাদের কাছ থেকে দুপুরের খাবার নিতেন।

রাজশাহী সিটি করপোরেশন ভবনে নয়নালের যাতায়াতও ছিল নিয়মিত। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন তাকে খুব ভালোবাসতেন। তিনি ১০-১২ বছর ধরে প্রতি মাসেই হাতখরচের জন্য নয়নালকে টাকা দিতেন।

About Rasel Khalifa

Check Also

আ.লীগ ও তৃণমূল থেকে বিএনপিতে যোগদানের হিড়িক

নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিএনপিতে যোগদানের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *