দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তরফ থেকে তদন্তের পর মামলা দা’য়ের হয় অপ/রা’ধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) এসআই এর বিরুদ্ধে এরপর তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। চট্টগ্রামের আদালত নওয়াব আলী নামের ঐ এসআইকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। গতকাল (বুধবার) শুনানি শেষ হওয়ার পর শেখ আশফাকুর রহমান যিনি মহানগর দায়রা জজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি এ আদেশ দেন। এর আগে নওয়াব আলী আদালতে হাজির হন এবং জামিনের জন্য আবেদন করেন কিন্তু আদালত সেটা আমলে না নিয়ে জামিন নাকচ করে দেন।
এদিকে, খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা থা’/’নার শেখ আবু বকর সিদ্দিক নামের এক সাবেক অফিস ইনচার্জ (ওসি) এবং তার সহধর্মিনী সুলতানা রাজিয়া পারুলের বিরুদ্ধে আলাদাভাবে দুটি মানি লন্ডারিং মা’মলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর আগে গত মঙ্গলবার দুপুরের দিকে দুদকের খুলনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে এই দুটি মামলা দায়ের করা হয়। বর্তমানে আবু বকর সিদ্দিক চুয়াডাঙ্গা জেলা ডিএসবিতে তার পদে দায়িত্ব পালন করছেন। তার গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট জেলার রামপাল থানাধীন চুলকাঠি নামক এলাকায়। তিনি বসবাস করেন খুলনা শহরের সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকায়।
মাহমুদুল হক যিনি চট্টগ্রাম দুদকের আইনজীবী হিসেবে রয়েছেন তিনি বলেন, দুর্নীতির মামলায় এসআই মো. নওয়াব আলী গতকাল আদালতে আ’ত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। বিচারক আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, মামলায় দুদকের দায়ের করা অভিযোগপত্র গ্রহণ করে গত বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি এসআই নওয়াব আলী ও তার স্ত্রী গোলজার বেগমসহ চার আ’/সা’মির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরো’য়া’না জারি করেন আদালত।
বাকি আ’সা’/মিরা হলেন নওয়াবের স্ত্রী গোলজার বেগম, চট্টগ্রামের কর অঞ্চল ১-এর অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সহকারী কর কমিশনার বাহার উদ্দিন চৌধুরী এবং কর পরিদর্শক দীপংকর ঘোষ। গোলজার বেগম চট্টগ্রাম মহানগর জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক।
দুদক সূত্রে জানা যায়, ১৯৯২ সালে কনস্টেবল পদে যোগ দেওয়ার পর নামে-বেনামে নওয়াব আলী বিপুল সম্পত্তির মালিক হন। এ সম্পদের মালিকানা দিয়েছেন তার স্ত্রী গোলজার বেগমকে। দুদক বিষয়টি অবহিত হয়ে তার সম্পত্তির বিরবণ জমা চায়। নওয়াব আলী যে বিবরণটি দাখিল করেন, তাতে অসঙ্গতি পান দুদক কর্মকর্তা।
চট্টগ্রাম শহরে ফ্ল্যাট ও প্লটের মালিক নওয়াব আলী। সীতাকু-ে জমি আছে তার। রয়েছে ব্যক্তিগত গাড়িও। অর্জন করেছেন ১ কোটি ৩৮ লাখ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ।
নওয়াব আলীর গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ সদরের কেকানিয়া এলাকায়। সেখানে ২০১৩ সালে ৬.৯০ শতাংশ জমির ওপর একটি দোতলা বাড়ি নির্মাণ করেন নিজের নামে। স্ত্রী গোলজারের নামে সীতাকু- উপজেলার ছলিমপুরে ৩৫৪ শতক জমি, চট্টগ্রাম শহরের লালখান বাজার এলাকায় পার্কিংসহ ১ হাজার ১০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, একই এলাকায় ৪ শতক জমি রয়েছে। গোলজারের নামে একটি মাইক্রোবাসও কিনেছেন নওয়াব আলী। এ ছাড়া স্ত্রীকে মৎস্য চাষি দেখিয়েছেন সম্পদ বিবরণীতে। কিন্তু বাস্তবে মাছ চাষের কোনো অস্তিত্ব পাননি দুদক কর্মকর্তারা।
দুদকে জমা দেওয়া হিসাব বিবরণীতে গোলজার দাবি করেন, তিনি মীরসরাইয়ের পশ্চিম ইছাখালীর মদ্দারহাটে হারেস আহমদ, আমিনুল হক, জাহাঙ্গীর আলম, শওকত আকবরসহ সাতজনের সঙ্গে চুক্তি করে একটি জলমহাল ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করেছেন। কিন্তু তদন্তে উঠে আসে, হারেস আহমদসহ যেসব ব্যক্তির সঙ্গে চুক্তি দেখানো হয়েছে, তারা ২০ বছর আগে মা’/’রা গেছেন। এদিকে নওয়াব আলী মাছ চাষ থেকে ১ কোটি ১০ লাখ টাকা আয় করেছেন বলে কাগজপত্রে দেখালেও বাস্তবে মাছ চাষের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
এদিকে খুলনায় দা’য়ের হওয়া মাম’লা সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৭ সাল থেকে ২০২১ সাল অবধি সাবেক অফিসার ইনচার্জ শেখ আবু বকর সিদ্দিক দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ৮ লাখ ৬৯ হাজার ১৫৬ টাকার সম্পদ ও তথ্য গোপন করেন। এ ছাড়া তার আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ৩৩ লাখ ৮৫৯ টাকার সম্পদ নিজ মালিকানা ও ভোগদ’/খ’লে রেখে এবং সরকারি চাকরিতে থাকাকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঘু’ষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে ২১ লাখ ৭০ হাজার টাকা স্ত্রীর নামে দান দেখিয়ে বৈধ করার চেষ্টা করেন। এ জন্য দুদক তার বিরু’দ্ধে মামলা দায়ের করে।
এছাড়া ঐ একই ধারায় সুলতানা রাজিয়া পারুলকে আরেকটি মামলার প্রধান আ’/সা’মি করা হয়েছে এবং সেই সাথে মামলার ২য় আ’/সা’মি হিসেবে মামলা করা হয়েছে শেখ আবু বকর সিদ্দিকীকে।
মামলার এজাহা’রে বলা হয়েছে যে, ২০০০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত পারুলকে তার সম্পদের যে হিসাব দিতে বলা হয়েছিল সেখানে দুদকের সম্পদ বিবরণীতে ১৮ লাখ ৬৫ হাজার ৯০২ টাকার তথ্য গোপন করেছেন। তিনি তার সম্পদ বেনামি করার জন্য এই ধরনের পথে অবলম্বন করেন। তার আয়ের যে উৎস সেটার সাথে সামঞ্জস্য নেই ১ কোটি ১ লাখ ২৯ হাজার ৯৫৯ টাকার সম্পদ যেটা তার ভোগ দখলে রয়েছে। শেখ আবু বকর তার সরকারী চাকরিতে দায়িত্ব পালন করার সময় ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন এবং তার আয় থেকে ৬৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা তার স্ত্রীকে দান করেছেন এমনটি দেখিয়েছেন, সেই সাথে ঠিকাদারি ব্যবসার মাধ্যমে তার অবৈধ অর্থকে বৈধ করার চেষ্টা করেছেন।
নাজমুল হাসান যিনি দুদকের খুলনা জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি জানান, মো. আল আমিন যিনি দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক হিসেবে রয়েছেন তিনি এই মামলার বাদী। তবে এখনও অবধি কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়নি।