গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় সহিংসতার পর সারাদেশের মতো বন্দরনগরী চট্টগ্রামেও হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি ও জামায়াত। এর মধ্যে কয়েকদিন অনেকটা পিছিয়ে পড়েছিল বিএনপি। তবে চলতি মাসের শুরু থেকেই দলটির নেতাকর্মীরা হঠাৎ করে বেশ তৎপর হয়ে উঠেছেন। গত কর্মসূচিতে তাদের বেশ শক্তিশালী দেখা গেছে। এই দুই দিনে জেলায় প্রায় অর্ধশত মশাল মিছিল করেছে তারা। তবে শুরু থেকেই নিজেদের সামর্থ্য নিয়ে মাঠে থাকা জামায়াত হঠাৎ করেই মাঠে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। এর আগে প্রতি অবরোধ-হরতালে তারা শহরে প্রতিদিন ৮-৯টি ঝটিকা মিছিল করত। গত দুই দিনের অবরোধে গোটা জেলায় এই সংখ্যা মাত্র ৯। এদিকে মহানগরে তিনটি মিছিল করেছে তারা। যদিও দায়িত্বশীল নেতারা একে কৌশলের অংশ বলছেন।
সরকার পতনের দাবিতে চলমান ‘নক আউট’ আন্দোলনের মধ্যে গত রোববার ও সোমবার ছিল নবম দফা অবরোধ কর্মসূচি।
এ দুই দিনে বিএনপির চট্টগ্রাম উত্তর জেলা শাখা বরাবরের মতো নীরব থাকলেও মহানগরী ও দক্ষিণ জেলায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ঝটিকা ও মশাল মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় দলটির একটি সূত্র মানবজমিনকে জানায়, দুই শাখার ৪৫টি স্পট অবরোধ করে নেতাকর্মীরা। আর এ সময় শহরে একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুনও দেওয়া হয়।
জানা গেছে, সরকার পতনের দাবিতে চলমান কর্মসূচিতে এলডিপিসহ সমমনা একাধিক দল বিএনপির সঙ্গে একযোগে কর্মসূচি ঘোষণা করে আসছে। তবে এ সময় এখানে কোনো মিছিল-সমাবেশের খবর পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে মহানগর জামায়াতের একজন দায়িত্বশীল নেতা বলেন, ২৮ অক্টোবরের পর থেকে আমাদের দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে এখানে বন্দি করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৯৫ জনই চট্টগ্রাম শহরের। সরকারের দমন-পীড়নে নেতাকর্মীরা চরম বিপর্যস্ত। মিছিলের ছবি দেখে গ্রেফতার করা হচ্ছে। এমনকি কর্মস্থলে গিয়েও পুলিশ গ্রেফতার করছে। হঠাৎ নীরবতা প্রসঙ্গে মহানগর জামায়াতের আরেক সিনিয়র নেতা বলেন, জামায়াত পিছু হটেছে তা বলা যাবে না। আপনি এটিকে আমাদের কৌশলের অংশ হিসেবেও বিবেচনা করতে পারেন। তবে এটা সত্য, আমাদের নেতা-কর্মীরাও এখন খুবই ক্লান্ত। আর মনে হচ্ছে সরকার এত সহজে থামবে না। কিন্তু আমাদের এই ‘স্লো পয়জনিং’-এ ওরা ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ।”
এদিকে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ইদ্রিস আলী বলেন, গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির সাধারণ সভার পর থেকে চট্টগ্রামে আমাদের ১৩ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে মহানগরে রয়েছেন ৫১৪ জন। উত্তর দক্ষিণ জেলায় যথাক্রমে ৩৫০ ও ৩৬৫ জন। আর মোট ৫৯টি মামলা রয়েছে। চলমান কর্মসূচিতে চট্টগ্রাম নগরীতে বিএনপির মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করা এই নেতা বলেন, পুলিশের ভয়ে বিএনপির বেশির ভাগ নেতাকর্মী রাতে ঘরে ঘুমাতে পারেন না। এমনকি গ্রেফতার আতঙ্কে বাড়িঘর ছেড়েছেন সমর্থকরা। তারপরও দলীয় সব কর্মসূচি কঠোরভাবে পালন করছি। এখন ভাঙচুর তো দূরের কথা, মিছিল হলেও মামলা করা হচ্ছে। কোথাও কোনো কর্মসূচি পালন না করলে আগের মামলাগুলোতেও গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে।