হংকং তার লম্বা, জনাকীর্ণ অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ের জন্য সুপরিচিত। শহরটি নিজেই পৃথিবীর সবচেয়ে জনাকীর্ণ স্থানগুলির মধ্যে একটি। হংকং দানবাকৃতির ভবনের জন্য একটি ইন্টারনেট সেনসেশন হয়ে উঠেছে। ট্রান্সফরমার- এজ অফ এক্সটিনশন মুভিতে প্রদর্শিত হওয়ার পরে মন্টেন ম্যানশন ইনস্টাগ্রামে ঝড় তুলেছে। এই বিল্ডিং সম্পর্কে এমন কিছু আছে যা প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটককে আকর্ষণ করে।
এই ভবনটি পাঁচটি অবিশ্বাস্যভাবে ঘন এবং স্তুপীকৃত আবাসিক কমপ্লেক্সের সমষ্টির জন্য ‘মনস্টার বিল্ডিং’ নামেও পরিচিত। শহরের বিখ্যাত শহুরে ঘনত্বের একটি নিখুঁত প্রতিফলন, ফটোজেনিক স্থাপত্য হলিউড ব্লকবাস্টার যেমন ঘোস্ট ইন দ্য শেলও এই ভবনটিতে দৃশ্যায়ন হয়েছিল। এটির ছবি তোলার জন্য দর্শকদের অনুমতি চাইতে বলে, কিন্তু অনেক পর্যটক সেটা তোয়াক্কা করে না, ছবি তুলে নেয়।
পাঁচটি দালান গাঁ ঘেঁষে লেগে থাকায় দেখলে মনে হবে একটিই ভবন। ১৮ তলার দালানগুলোতে মোট ফ্ল্যাট আছে ২২৪৩টি। অবাক করা বিষয় হলো, এই দৈত্যবাড়ির ২২৪৩টি ফ্ল্যাটগুলোতে বসবাস করেন ১০ হাজার মানুষ। দূর থেকে দেখলে মনে হবে ছোট ছোট পাখির বাসা! সেখানে ঠাসাঠাসি করেই বসবাস করছে হাজার হাজার পরিবার। এই দৈত্যাকার দালানের অবস্থান হংকংয়ের কোয়ারি বে-র ইয়ায়ু মান স্ট্রিটের অনেকটা জায়গা জুড়ে। ২-৩২ নম্বর রাস্তা পর্যন্ত এর অবস্থান।
সিনেমা ছাড়াও ‘ল্যাবেরিন্থ’ ও ‘কেভ মি ইন’ নামে দুটি মিউজিক ভিডিও শুটিং করা হয়েছে। এই মনস্টারখ্যাত দালানের ছবি তোলার জন্য সেখানে ভিড়েন পেষাদার সব চিত্রশিল্পীরা।
এমনকি পর্যটকদেরও ভিড় জমে। এ কারণেই দৈত্যবাড়ির বাসিন্দারা নোটিশ ঝুলিয়েছেন- ‘ছবি তুলতে ভেতরে ঢুকবেন না’। এই দালান দেখতে অনেকটা ইংরেজি ‘ই’ অক্ষরের মতো। মাটিতে দাঁড়িয়ে উপর পানে তাকালে অল্প পরিসরেই দেখা মিলবে আকাশ। ষাটের দশকে নির্মিত হয় দৈত্যবাড়ি।
ওই দেশের স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য সরকার এই ভবনের তৈরি করা হয়েছিল। যদিও তখন এটি দৈত্যবাড়ি হয়ে ওঠেনি। নাম ছিল বাকগা সানজুন। পরে ১৯৭২ সালে বিক্রি হয়ে যায়। এরপর ৫টি ব্লকে বিভক্ত হয় দৈত্যবাড়ি। ভবনগুলোর নাম- ফুক সেয়ং বিল্ডিং, মন্তানে ম্যানসন, ওসিয়নিক ম্যানসন, ইক সেয়ং বিল্ডিং ও ইক ফ্যাট বিল্ডিং। এর মধ্যে সবচেয়ে উঁচু হলো ওসিয়নিক।
সবচেয়ে অবাক করা তথ্য হলো, সরকারি খাতায় এই দৈত্যবাড়ির কোনো অস্তিত্ব নেই। এমনকি মনস্টার বিল্ডিং নামে কোনো বাড়ির নামও নেই হংকংয়ে। সরকারি নথিতে এটি শুধু ৫টি ভবন নিয়ে তৈরি একটি আবাসন।
এই কংক্রিটের দৈত্যটি ১৯৬০ সালের এর দশকে স্থানীয় সরকার দ্বারা শহরের নিম্ন-আয়ের বাসিন্দাদের জন্য আবাসন প্রদানের প্রচেষ্টা হিসাবে নির্মিত হয়েছিল।
মনস্টার বিল্ডিংটি ই-আকৃতির এবং এখানে আসলে দুটি উঠোন রয়েছে যেটা পরিদর্শন করা যেতে পারে। যাইহোক, এই আঙ্গিনাগুলি দেখার আগে, বিল্ডিংয়ের বাইরের দিকে নজর দিলে ভিন্ন চিত্র দেখা যাবে। এর সম্মুখভাগ বেশ চিত্তাকর্ষক। যদিও এটি ইনস্টাগ্রামযোগ্য নয়, সম্মুখভাগটি হংকংয়ের অতিরিক্ত জনসংখ্যার আরেকটি প্রতিফলন। শতাধিক ছোট জানালা একের পর এক সারিবদ্ধ, প্রতিটির বাইরে একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ঝুলতে দেখা যায়। যে কেউ এই ভবনটি নিয়ে ভাবতে পারে যে, এখানে লোকেরা ছোট এক বেডরুমের অ্যাপার্টমেন্টে কীভাবে বাস করে। হংকংয়ের আবাসন সংকট চিত্র দেখার জন্য এর ভিতরে দেখতে হবে তাহলে বোঝা যাবে আসল সত্যটি কী।