Friday , September 20 2024
Breaking News
Home / Countrywide / আওয়ামী রাজনীতিতে বিদায় ঘণ্টা বাজছে খান পরিবারের

আওয়ামী রাজনীতিতে বিদায় ঘণ্টা বাজছে খান পরিবারের

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইলের বিখ্যাত খান পরিবারের কাউকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। ফলে জেলাজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে এই প্রভাবশালী পরিবার। এর মধ্য দিয়ে দলীয় রাজনীতি থেকে খান পরিবারের বিদায় ঘণ্টা বাজতে শুরু করেছে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের একাংশ।

জানা গেছে, স্বাধীনতার পর থেকে টাঙ্গাইলে আওয়ামী লীগের রাজনীতি মূলত শহরের প্রভাবশালী সিদ্দিকী ও খান পরিবারকে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে। দীর্ঘ ৫২ বছর ধরে বিভিন্ন কারণে সিদ্দিকী ও খান পরিবার একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছিল। ১৯৯৯ সালে সিদ্দিকী পরিবারের অন্যতম সদস্য বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী আওয়ামী লীগ ত্যাগ করে কৃষক শ্রমিক জনতালীগ নামে একটি পৃথক দল গঠন করেন। এরপর থেকে সিদ্দিকী পরিবারের বড় ছেলে আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী আওয়ামী লীগে থাকলেও পরিবারের অন্য সদস্যরা আওয়ামী লীগ থেকে দূরে সরে যান। কাদের সিদ্দিকী একটি পৃথক দল গঠন করেন, তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আদর্শ পিতা হিসেবে গ্রহণ করেন এবং কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের আদর্শ ও লক্ষ্য নির্ধারণ করেন।

সে সময় বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করা হলেও আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রতীক গামছার মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। সিদ্দিকী পরিবারের বড় ছেলে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সরকারের মন্ত্রী থাকাকালে নিউইয়র্কে এক সভায় ইসলামের ওপর বিতর্কিত বক্তৃতা দিয়ে সমালোচিত হন।

পরে ইসলাম পন্থী দলগুলোর আন্দোলনের মুখে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী মন্ত্রীত্ব, আওয়ামী লীগের পদ হারান এবং সর্বশেষ জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। এ সুযোগে খান পরিবার টাঙ্গাইলের আওয়ামী লীগের একচ্ছত্র কান্ডারী হিসেবে আবির্ভুত হয়।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় খান পরিবারের সদস্য সহিদুর রহমান খান মুক্তি টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র, আমানুর রহমান খান রানা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। লতিফ সিদ্দিকীর নির্বাচনী এলাকা কালিহাতী উপজেলা ছাড়া প্রায় সব জায়গায় খান পরিবারের অনুসারীরা গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্বাচিত হন।

২০১২ সালে, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ পাওয়া নিয়ে বিরোধের কারণে খান পরিবার আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আহমেদের কাছ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেয়। খান পরিবারের সবচেয়ে ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি ছিল ২০১৩ সালের। চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি পৌর এলাকার কলেজপাড়া থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার তিন দিন পর তার স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদী হয়ে সদর থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

গোয়েন্দা পুলিশের তদন্তে জেলার আওয়ামী রাজনীতির অন্যতম প্রভাবশালী খান পরিবারের চার ভাই সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা, সাবেক পৌর মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি, জাহিদুর রহমান খান কাকন ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পা হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার বিষয়টি উঠে আসে।

সূত্র জানায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদ হত্যা, হামলা-মামলা, নির্যাতন-নিপীড়ন, জমি দখলসহ নানা বিষয়ে বেপরোয়া হয়ে পড়েন জেলা আওয়ামী লীগ নেতা।

সম্প্রতি টাঙ্গাইলের আটটি আসনের মধ্যে চারটিতে বর্তমান সংসদ সদস্যদের মনোনয়ন দেয়নি আওয়ামী লীগ। তাদের জায়গায় নতুন চারজনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। বাদ পড়া নেতাদের মধ্যে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলাম (ভিপি জোয়াহের), টাঙ্গাইলের জনপ্রিয় খান পরিবারের আতাউর রহমান খান, টাঙ্গাইল সদরের সংসদ সদস্য ছানোয়ার হোসেন ও কালিহাতী থেকে নির্বাচিত মোহাম্মদ হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী।

জানা গেছে, টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আতাউর রহমান খান এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। তিনি খান পরিবারের প্রধান ও সাবেক সংসদ সদস্য শামসুর রহমান খানের ভাই এবং আমানুর রহমান খান রানার পিতা। শামসুর রহমান খান এ আসন থেকে সাতবার আওয়ামী লীগের মনোনয়নে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনবার সংসদ সদস্য হন। আমানুর রহমান খান রানা ২০১২ সালে উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এবং ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য হন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদ হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা আমানুর রহমান খান রানা ও তার ভাইদের আসামি হওয়ার পর তারা আত্মগোপনে চলে যান। পরে ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য হন আতাউর রহমান খান।

আওয়ামী লীগ নেতাদের একাংশ বলছেন, এমপি আতাউর রহমান খান নির্বাচিত হওয়ার পর পরিবারের সদস্যদের নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এলাকার উন্নয়ন কাজে তার সিদ্ধান্ত সবসময়ই গৌণ ছিল। তার ছেলে সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা নিজস্ব বলয় তৈরি করে তাদের মাধ্যমে উন্নয়ন কাজ করেছেন। ফলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে আরও দূরত্ব তৈরি হয়। তাই আতাউর রহমান খানকে মনোনয়ন দেয়নি দল। এবার তার জায়গায় জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডা. কামরুল হাসান খানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

About Nasimul Islam

Check Also

আ.লীগ ও তৃণমূল থেকে বিএনপিতে যোগদানের হিড়িক

নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিএনপিতে যোগদানের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *