প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, গণতন্ত্র বাঁচাতে হলে নির্বাচন টিকিয়ে রাখতে হবে। সাধারণ মানুষ যদি বলে এই নির্বাচন অবাধ-সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য, তাহলে এই নির্বাচন হবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও লক্ষীপুর দুটি আসনের উপনির্বাচনে প্রকাশ্যে সিল মারতে দেখা গেছে। আমরা সেই ঘটনার জন্য লজ্জিত। এমন নির্বাচন আমরা আর চাই না।
সোমবার (২৭ নভেম্বর) আগারগাঁওয়ে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে নির্বাচনী তদন্ত কমিটির প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
সিইসি বলেন, ‘আমি আগেও বিচার বিভাগে কাজ করেছি। স্বাধীনতা বিচার বিভাগের প্রধান বৈশিষ্ট্য। দেশের মানুষ বিচার বিভাগকে স্বাধীন মনে করে। দেশের মানুষের সর্বোচ্চ আস্থা বিচার বিভাগের ওপর। অতএব, আপনি যেখানেই কাজ করবেন না কেন, আপনি স্বাধীনভাবে এবং স্বচ্ছভাবে কাজ করবেন।
তিনি বলেন, আমরা অবাধ সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন চাই। বিদেশীরাও চায় বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ-নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য হোক। নির্বাচন কমিশন একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের একার পক্ষে কখনোই নির্বাচন পরিচালনা করা সম্ভব নয়। এ জন্য প্রশাসন ও আপনাদের আন্তরিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে।
তিনি বলেন, “নির্বাচনে আপনারা চোখ-কান খোলা রেখেই দায়িত্ব পালন করবেন। আইনে বলা আছে নির্বাচনের ২১ দিন আগে কখনোই নির্বাচনী প্রচারণা করা যাবে না। যখন প্রচারণা শুরু হবে তখন থেকে আপনাদের আরও বেশি অ্যাটেনশন দিতে হবে। রাষ্ট্র পরিচালিত হয় বিচার বিভাগ ও শাসন বিভাগের মাধ্যমে। সবচেয়ে বেশি ভারসাম্য তৈরি করে স্বাধীন বিচার বিভাগ। আপনারা দেশের গণতন্ত্র রক্ষার্থে নির্বাচনটাকে স্বচ্ছ রাখার জন্য আপনারা সততা ও সাহসিকতা দিয়ে নির্বাচনের যতদূর সম্ভব সাহায্য করবেন।’
তিনি আরও বলেন, “নির্বাচন নিয়ে দেশ এক সংকটের মধ্যে রয়েছে। এই জায়গায় আমাদের সবাইকে আমাদের যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমরা ৩০০ টি নির্বাচনী কমিটি গঠন করতে পেরে আনন্দিত। আমাদের গণতন্ত্র নতুন হলেও আমাদের অনেক বিপত্তি সহ্য করতে হয়েছে। প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার আগেও আপনাদের অনেক দায়িত্ব পালন করতে হবে, সে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে। নির্বাচনের দিনটা আমি বলব সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন। আমরা যদি দেখি যে, নির্বাচনের সব কেন্দ্রে ভোটাররা লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। এরপর যদি দেখি লাইনটা ঘণ্টার পর ঘণ্টা থেমে আছে তাহলে মনে করতে হবে অন্য কোনো কাজ করা হচ্ছে। আপনাদের দেখতে হবে সব কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট দেওয়া হয়েছে কি না।’
নির্বাচনকে জনগণের কাছে স্বচ্ছ করতে হবে। নির্বাচনের স্বচ্ছতার জন্য সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকরা সংবাদ সংগ্রহ করবেন। আমি বলব, নির্বাচনে ভোট কারচুপি হলে ভোট কারচুপির প্রচারণা চালানো উচিত। ভোট স্বচ্ছ হলে তাও প্রচার হবে। আমি চাই গণমাধ্যমকর্মীরা নির্বাচনের প্রকৃত ও বাস্তব চিত্র তুলে ধরুক।
ইসি সচিব মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘নির্বাচন উপলক্ষ্যে নির্বাচনের জন্য যে কয়টা আইন আছে তার মধ্যে আরপিও গুরুত্বপূর্ণ। ইলেকটোরাল ইনকোয়ারি কমিটির আগের নির্বাচনের জন্য একটি বা দুটি কমিটি গঠন করা হত। এবারই প্রথম বড় পরিসরে কমিটি গঠন করা হয়েছে। আপনাদের সার্বিক দায়িত্ব পালনের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা ও আইন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন আপনাদের অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করবেন বলে আমি আশা করি।
এ সময় ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথসহ নির্বাচন কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।