Friday , December 27 2024
Breaking News
Home / Countrywide / তপশিল ঘিরে বাড়ছে জটিলতা: প্রত্যাখ্যান করে আসছে বিএনপির কঠোর কর্মসূচি

তপশিল ঘিরে বাড়ছে জটিলতা: প্রত্যাখ্যান করে আসছে বিএনপির কঠোর কর্মসূচি

নির্দলীয় সরকারের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি পূরণ না হলে ‘শেষ মুহূর্তেও’ নির্বাচনে যাবে না বিএনপি ও সমমনারা। শেষ মুহূর্তে বিএনপি নির্বাচনে যাবে বলে আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন আন্দোলনকারী নেতারা।

তারা বলছেন, আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। প্রয়োজনে আরো কিছুদিন মামলা, গ্রেফতারসহ অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করা হবে।

একই সঙ্গে সরকারকে ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের

মতো আবারও একতরফা নির্বাচনের পরিকল্পনা বাতিল করে শুভবুদ্ধির পরিচয় দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনকে রাজনৈতিক সংকট সমাধান ছাড়া তড়িঘড়ি করে তপশিল ঘোষণা থেকে বিরত থাকার কঠোর হুঁশিয়ারিও উচ্চারণ করেছেন বিরোধী নেতারা।

তাদের মতে, প্রয়োজনে তপশিল নাকচ করে দাবি আদায়ে দেশ অচল করা হবে। গণতন্ত্রের স্বার্থে তাদের ‘অল আউট’ আন্দোলনে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আন্দোলনের বিভিন্ন বিকল্প কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করছেন বিএনপি নেতারা।

এ ক্ষেত্রে হরতাল, ঢাকা অবরোধ বা একশ’ দফা প্রতিবাদ সমাবেশ এবং একপর্যায়ে অসহযোগ কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। একইসঙ্গে সমমনা ৩৬টি দলের বাইরে বিরোধী দল ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত করার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন বিরোধীদলীয় নেতারা।

বিএনপিসহ সমমনা ব্যক্তিদের সারাদেশে তৃতীয় দফা অবরোধের পর ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণার পরও সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে। গত ২৮ অক্টোবরের গণসমাবেশকে ঘিরে সহিংসতায় দলের শীর্ষ নেতাসহ প্রায় ১০ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দলটির নেতাদের দাবি। গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় নেতাদের বিএনপি শেষ মুহূর্তে নির্বাচনে আসবে ধরে নিয়েই প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। আবার একই দিন রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে দেখা করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, সংবিধানের বাধ্যবাধকতার কারণে যে কোনো পরিস্থিতিতে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন করতে হবে। আগামী সপ্তাহে নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করা হবে বলেও জানান তিনি।

এ অবস্থায় রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়াই তপশিল ঘোষণা করলে বিএনপি কী করবে? এমন প্রেক্ষাপটে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান শুক্রবার সমকালকে বলেন, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি শুধু বিএনপির একার নয়, এ দাবি দেশের জনগণসহ সব বিরোধী দলের। অতীতেও জনগণের কোনো দাবি আন্দোলন ব্যর্থ হয়নি, এবারও হবে না। এরপরও যদি সংকট নিরসনে তফসিল ঘোষণা করা হয়, তাহলে আরও কিছুদিন ত্যাগ-তিতিক্ষা ও আন্দোলন করা ছাড়া আমাদের কোনো উপায় থাকবে না। আমরা কঠোর গণআন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে দাবি আদায়ে বাধ্য করব। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তফসিল ঘোষণা হলেও জনগণের সমর্থনে তা পরিবর্তন করা যেতে পারে।

বিএনপি ও সমমনা দল সূত্রে জানা গেছে, চলমান যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপির ৩৬টি সমমনা দল ছাড়াও অন্যান্য বিরোধী দলকে রাজপথে আনার চেষ্টা চলছে। বিএনপি ইতোমধ্যে দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করছে। শিগগিরই বিরোধী দলগুলো একসঙ্গে চূড়ান্ত আন্দোলনে নামবে বলে তারা আশাবাদী। সূত্রমতে, চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন এবং সিপিবি-বাসের নেতৃত্বাধীন বাম জোটসহ অন্যান্য ছোট-বড় ইসলামী দলগুলো আন্দোলন নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারে। একই সঙ্গে বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার ঘোষণা দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে ইসলামী আন্দোলন। দাবি আদায়ে তারা বিএনপির নেতৃত্বাধীন সমমনা জোটের সঙ্গে একসঙ্গে কর্মসূচি দিতে পারেন। বাম জোটের নেতারাও একই দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে তারা বিএনপির সঙ্গে একযোগে আন্দোলনে নেই। তারা আলাদাভাবে প্রতিবাদ করলেও আগামী দিনে তারা আলাদা প্লাটফর্ম থেকে একই সময়ে একযোগে কর্মসূচি পালন করতে পারে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, অত্যাচার-নির্যাতন করে অবৈধ সরকারের শেষ রক্ষা হবে না। অতীতে কোনো স্বৈরশাসক জনগণের দাবির বিপক্ষে গিয়ে টিকতে পারেনি, তারাও পারবে না। খুব দ্রুত সরকারকে জনগণের দাবি মেনে নিয়ে নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানান তিনি। বিএনপি সূত্র জানায়, দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির যেসব নেতা আত্মগোপনে রয়েছেন, তারা নিয়মিত ভার্চুয়াল সভা করছেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে সভাগুলোতে আন্দোলনের বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন। একই সঙ্গে সমমনাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরবর্তী কর্মসূচি প্রণয়নের জন্য নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে।

বিএনপির অন্যতম সমমনা জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনারই নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নেই বলে এখন তপশিল ঘোষণার কথা বলছেন। ইসির উচিত– অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক ভোট অনুষ্ঠানে সরকারকে রাজনৈতিক সংকট সমাধানের জন্য ন্যায়সংগত চাপ দেওয়া। তা না করে তল্পিবাহক হিসেবে একতরফা নির্বাচনের পথে হাঁটে, তাহলে দেশে উদ্ভূত যে কোনো পরিস্থিতির জন্য তারা দায়ী থাকবে।

সূত্র জানায়, দলের সাবেক মন্ত্রী-এমপি এবং আগামী নির্বাচনে সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশী ও কেন্দ্রীয় নেতাদের নিজ নিজ এলাকায় যেতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তৃণমূল নেতাদের পাশে থেকে আন্দোলন জোরদার করার ক্ষেত্রে তাদের গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্ব ও ভূমিকা রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রের নির্দেশনা পেয়ে এরই মধ্যে নেতারা নিজ নিজ এলাকায় চলে গেছেন। অনেকে গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে থেকে নেতাকর্মীকে নির্দেশনা দিচ্ছেন। দলীয় হাইকমান্ড সবাইকে গ্রেপ্তার এড়িয়ে আন্দোলনে ভূমিকা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। একই সঙ্গে যেসব জেলা, মহানগরসহ বিভিন্ন স্তরের কমিটির শীর্ষ নেতারা আটক হচ্ছেন, সেখানে পরবর্তী পদের নেতাকে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে।

বিএনপির কয়েকজন নেতা জানান, কেন্দ্রীয়, জেলা, মহানগর ও উপজেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার ও মামলা দিয়ে লাভ হচ্ছে না। তৃণমূল নেতারাই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। গ্রেপ্তার এড়াতে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ধানক্ষেতে ও বন-জঙ্গলে রাতযাপন করছেন। এ করুণ পরিস্থিতি থেকে দেশ, গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে বর্তমান স্বৈরশাসকের পতনের এক দফা আন্দোলন সফল করেই তারা ঘরে ফিরবেন।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, নির্বাচন কমিশন নিজেই বলেছে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের চাপ তাদের বহন করতে হবে। এ অবস্থায় বিরোধী দলকে বাদ দিলে বাস্তবে তারাও একতরফা নির্বাচনে অংশীদার হবে। আগে সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ তৈরি করা উচিত ছিল। অথবা একযোগে পদত্যাগ করুন। তিনি বলেন, সরকার যতই চেষ্টা করুক না কেন জনগণ প্রতিরোধ করবে।গায়ের জোরে যেতে চাইলে অনাকাঙ্ক্ষিত ও গৃহযুদ্ধের দিকে দেশকে ঠেলে দেবে সরকার।

About Nasimul Islam

Check Also

খেজুরের রস পান করতে এসে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান, গ্রেফতার ১৫

নেত্রকোনা থেকে খেজুরের রস খেতে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া আসা ১৫ যুবক ‘জয় বাংলা’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেওয়ায় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *