Friday , September 20 2024
Breaking News
Home / Countrywide / রাত আড়াইটায় হঠাৎ ফোন করে বলেন, আপনার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে,এসে নিয়ে যান : তানিয়া

রাত আড়াইটায় হঠাৎ ফোন করে বলেন, আপনার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে,এসে নিয়ে যান : তানিয়া

দুপুর আড়াইটার দিকে হঠাৎ এক ব্যক্তি তার মোবাইলে ফোন করে বলেন, তোমার স্বামী রিপন মেম্বারকে হত্যা করা হয়েছে! রাস্তার পাশে পড়ে আছে, এসে নিয়ে যাও। তখন দেখি রিপন রক্তাক্ত অবস্থায় কাঁদছে। সেখান থেকে তাকে সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে সকালে তার মৃত্যু হয়।

দুই সন্তানকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন নিহত হাবিবুর রহমান রিপনের স্ত্রী তানিয়া খাতুন।

নিহত হাবিবুর রহমান রিপন ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার আবাইপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ছিলেন। তার বাড়ি উপজেলার মীন গ্রামে। তার স্ত্রী তানিয়া খাতুন উপজেলার মীন গ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা।

মঙ্গলবার বিকেলে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম দুলালকে হত্যার নির্দেশের অভিযোগ এনে ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছে শৈলকুপা উপজেলা আওয়ামী লীগ। সেখানে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নিহত হাবিবুর রহমান রিপনের স্ত্রী তানিয়া খাতুন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিয়ার রহমান, সাধারণ সম্পাদক হাকিম আহমেদ, নিহতের বাবা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।

তিন মাস বয়সী শিশুকে হাতে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তানিয়া খাতুন বলেন, স্বাধীনতার আগে থেকেই আমাদের পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বর্তমানে আমার শ্বশুর আবুল কালাম আজাদ আবাইপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। ছয় ভাইয়ের মধ্যে আমার স্বামী আমার শ্বশুরবাড়ির জমি দেখাশোনা করতেন।

তিনি বলেন, “বিএনপি ও নব্য আওয়ামী লীগের কিছু নেতা প্রকৃত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। শুনেছি বিশ্বাস বিল্ডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নজরুল ইসলাম দুলাল জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির পদ পেয়েছেন, কিন্তু তিনি। একসময় বিএনপির হয়ে কাজ করেছেন, পদ পাওয়ার পর উপজেলায় নিজের অবস্থান শক্ত করতে অন্যদের সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন এবং আমার স্বামী হাবিবুর রহমান রিপনকে পিটিয়ে হত্যা করেন।

তানিয়া খাতুন আরও বলেন, “মৃত্যুর দুই থেকে তিন মাস আগে তারা রিপনকে বেশ কয়েকবার হত্যার হুমকি দিয়েছিল। মৃত্যুর কয়েকদিন আগেও তারা মীন গ্রামের বাজারে একটি দাওয়াতে বাড়ি ফেরার পথে তার ওপর হামলা চালায়। যদিও সে বেঁচে যায়। তখন আমার স্বামী আর বাঁচতে পারেননি।মামলার পর কয়েকজন আসামি জামিন পেয়ে ঢাকার নিউমার্কেট এলাকায় নজরুল ইসলাম দুলালের বাসায় বৈঠক করেন।আমরা জানি নজরুল ইসলাম দুলাল ও তার ভাই বর্তমান আবাইপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন বিশ্বাসকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার নির্দেশ দেন তাদের বাড়িতেই।

লিখিত বক্তব্যে নিহতের স্ত্রী বলেন, ঘটনার পর সুজন নামে এক ব্যক্তি ফোন করে বলেন, রিপন মেম্বারকে হত্যা করা হয়েছে, এসে তাকে নিয়ে যান। জামিনপ্রাপ্ত আসামিরা এখন আমাদের ভয় দেখাচ্ছে। এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগও করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে রিপনের স্ত্রী তার স্বামীর খুনিসহ অন্যদের উপযুক্ত বিচার দাবি করে বলেন, ৩ মাস বয়সী তাবিব আহনাফ ও ৫ বছরের আবিদ আহনাফ, তারা এখনো জানে না তাদের বাবা আর কোনোদিন ফিরে আসবে না। ” এখন বড় ছেলে বলে বাবা কোথায় গেল মা? কিন্তু আমি তার কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারি না। বর্তমানে আমার দুই সন্তান খুবই অসহায় জীবন যাপন করছে।

অভিযোগের বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম দুলাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, রিপন ঘটনাস্থলেই মারা গেছে নাকি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তার সঙ্গে থাকা লোকজনের গুলিতেই মারা গেছে তা নিয়ে সন্দেহ আছে। সামনে নির্বাচন, আমি প্রার্থী, এখন নানা ষড়যন্ত্র হবে। তবে আমিও চাই রিপন হত্যার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি হোক।

তিনি আরও বলেন, ‘এলাকার মানুষ আমার কাছে বিভিন্ন সময় আসে, আমি তাদের সাহায্য করি। তারা জামিনে অফিসে এসেছেন এটা তাদের দোষ নয়। তারা দোষী প্রমাণিত হয়নি।

এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিয়ার রহমান ও সাধারণ সম্পাদক হাকিম আহমেদ বলেন, এটি মূলত তার পরিবারের সংবাদ সম্মেলন। এতে সমর্থন দেয় উপজেলা আওয়ামী লীগ।

শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ঠাকুরদাস মন্ডল আজকের পত্রিকাকে বলেন, “মামলার ৫ জন ছাড়া বাকি সকল আসামি জামিনে রয়েছে। তদন্ত শেষে দ্রুত প্রতিবেদন দাখিলের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ঝিনাইদহ-১ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল হাই সমর্থক হাবিবুর রহমান রিপন ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির সমর্থকদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। এবং ঝিনাইদহ-১ আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী নজরুল ইসলাম দুলাল।

এ সংঘর্ষের জের ধরে গত ১৬ অক্টোবর ভোরে আবাইপুর বাজার পার হওয়ার সময় হাবিবুর রহমান রিপন গুরুতর আহত হন। পরে তাকে সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকালে তার মৃত্যু হয়। ঘটনার পর নিহতের সমর্থকদের অর্ধশতাধিক বাড়িঘর ভাঙচুর করে

About Zahid Hasan

Check Also

আ.লীগ ও তৃণমূল থেকে বিএনপিতে যোগদানের হিড়িক

নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিএনপিতে যোগদানের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *