সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রেমের সম্পর্কের পর উবার চালক শহিদুল ইসলাম গাজীকে বিয়ে করেন কলেজছাত্রী মোবাশ্বেরা সুলতানা। বিয়ের পরেও, মোবাশ্বেরা তার পড়াশোনা চালিয়ে যান এবং স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। স্বামী শহিদুল দশম শ্রেণী পাস করতে না পারলেও তার প্রতি তার স্ত্রীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা কম ছিল না। এদিকে দুই শিশু তাদের ঘর আলো করে। উবার-পাথাওয়ে প্রাইভেট কার চালিয়ে মোবাশ্বেরার মায়ের দেওয়া ফ্ল্যাট থেকে পোশাক এবং ভাড়ার আয় দিয়ে তারা আর্থিকভাবে সচ্ছল ছিল। তবে ভালোবাসার এই পৃথিবীতে অভিশাপ হয়ে আসে পরকীয়ার হিসেবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকার সঙ্গে অসম সম্পর্কে থাকায় প্রিয়জন ও সন্তানদের দূরে ঠেলে দেন শহিদুল নামে এক উবার চালক। আর এখন ত্রিশ বছর বয়সী এই গৃহবধূ তার দুই নিষ্পাপ সন্তানকে নিয়ে স্বামীকে ফিরে পেতে বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ করছেন।
জানা যায়, প্রতিবেশী রহমান নগরের মৃত এবিএম আবু সালেকের মেয়ে মোবাশ্বেরা সুলতানা চট্টগ্রাম নগরীর ষোলশর এলাকার বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম গাজীর সঙ্গে দুই বছর প্রেমের সম্পর্কের পর ২০১৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি বিয়ে করেন। মোবাশ্বেরার বাবা ছিলেন চন্দনীশ বর্মা কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ। আর মা চট্টগ্রাম পলিটেকনিক হাইস্কুলে পড়াতেন।
শহিদুলের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো না হওয়ায় প্রথমে বিয়েতে রাজি হয়নি মোবাশ্বেরার পরিবার। যাইহোক, অবশেষে মেয়ের জেদের কাছে হার মানলেন তারা।
মোবাশ্বেরা শহিদুল দম্পতির এখন তিন বছর-8 মাসের একটি মেয়ে এবং একটি ৫ মাসের ছেলে রয়েছে। এই সন্তানদের নিয়ে তাদের দাম্পত্য জীবন ভালোই চলছিল। এদিকে উবারে রাইড দিতে গিয়ে শহিদুলের সঙ্গে পরিচয় হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষকের। আর এটাই অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে মোবাশ্বেরা-শহিদুলের সুখের সংসারে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের এই শিক্ষিকা চলতি বছরের জুনের শুরুতে চিটাগাং ক্লাবের একটি অনুষ্ঠান শেষে রাইডিং অ্যাপ ‘উবার’-এর একটি প্রাইভেটকারে নগরীর বায়েজিদ এলাকায় ভাড়া বাসায় ফিরছিলেন। গাড়িটির চালক ছিলেন শহিদুল ইসলাম গাজী। এ সময় দুজনের মধ্যে সামান্য কথাবার্তা হয়। ওই দিন গাড়ি থেকে নামার পর শহিদুলের মোবাইল নম্বর নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। এরপর আরও কয়েকদিন কাজের সূত্রে বাইরে গেলে শহিদুলকে ফোন দিতেন তিনি। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কয়েক সপ্তাহ সম্পর্কের পর তারা কক্সবাজারের উখিয়ায় গিয়ে ২৫ জুন ২১ লাখ টাকা যৌতুক নিয়ে গোপনে বিয়ে করেন। তবে দ্বিতীয় বিয়ের জন্য প্রথম স্ত্রীর কাছ থেকে বৈধভাবে অনুমতি নেননি শহিদুল। আর বিষয়টি জেনেও তাতে কর্ণপাত করেননি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষকের সঙ্গে বিয়ের দিন থেকে শহিদুল তার আগের মোবাইল নম্বর বন্ধ করে দেন এবং মোবাশ্বেরাসহ পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। এরপর পরিবারের লোকজন তাকে খুঁজতে থাকে। এ সময় স্বামীর খোঁজে বায়েজিদ থানায় যান মোবাশ্বেরা। প্রায় এক মাস নিখোজ থাকার পর বাড়ি ফিরেছেন শহিদুল। একপর্যায়ে মোবাশ্বেরা জানতে পারেন, তার স্বামী অন্য নারীকে বিয়ে করেছেন। এবং তিনি এত দিন তার সাথে ছিলেন। এ নিয়ে সহিদুলের সঙ্গে মোবাশ্বেরার ঝগড়া চলতে থাকে।
এরই মধ্যে উবার চালক শহিদুলের সঙ্গে মেয়ের বিয়ের খবর পেয়ে শিক্ষিকার পরিবারও হতবাক। তারা তাকে এই অসম সম্পর্ক থেকে ফিরে আসার জন্য জোর দিতে থাকে। একপর্যায়ে তিনি তাদের কথায় রাজি হন। আর শিশুটির দিকে তাকিয়ে শহিদুলও মোবাশ্বেরায় ফিরে আসতে রাজি হন। অবশেষে বিয়ের তিন মাস পর গত ৬ সেপ্টেম্বর আইনজীবী জয়নুল আবেদীনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম আদালতের শাপলা ভবনের ৫২৬ নম্বর কক্ষে শিক্ষক ও শহিদুল ইসলাম গাজীর বিবাহবিচ্ছেদ সম্পন্ন হয়।
ভুক্তভোগী মোবাশ্বেরা মানবজমিনকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আইনজীবীর কাছে যাওয়ার পরও শহিদুলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। এরই মধ্যে গত ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় শহিদুল চট্টগ্রাম নগরীর ওই শিক্ষকের টেক্সটাইল বাড়িতে অবস্থান করছেন জানতে পেরে সেখানে যাই। তখন তারা আমাকে সেখানে দেখে উত্তেজিত হয়ে পড়ে। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে দুজনেই আমাকে বেধড়ক মারপিট করে। পরে চট্টগ্রাম মেডিকেলে গিয়ে চিকিৎসা নিই।
তিনি বলেন, একটু সুস্থ হওয়ার পর প্রথম আসামি হিসেবে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করি। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে বায়েজিদ থানাকে তদন্তের নির্দেশ দেন। এ ঘটনার পর থেকে আমার স্বামী আমাকে নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছে। আর দুই সন্তান নিয়ে আমি এখন মানসিক ও আর্থিকভাবে অনেক সমস্যায় আছি। তিনি বলেন- কেন একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আমার সাথে এমন অবিচার করলেন? কেন সে জেনেশুনে আমাদের সুন্দর পরিবারকে তালগোল পাকিয়ে দিল?
এদিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আল মামুন জানান, মোবাশ্বেরা নামে এক নারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও উবার চালকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। আদালত বায়েজিদ থানাকে তদন্তের নির্দেশ দেন। এখনও আমাদের তদন্ত চলছে।
অভিযুক্ত শহিদুল ইসলাম গাজী বলেন, ‘আমি মোবাকে বিয়ে করেছি এটা সত্য। কিন্তু তিনি আমার সাথে ভালো ব্যবহার করেননি। সে আমাকে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করতো। এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপকের সাথে আমার সম্পর্ক হয়। আমি কয়েক মাসের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদ করেছি। আমি মোবাশ্বেরাকে ডিভোর্সও দিয়েছি। এখন আমি আমার মতো।’
উবার চালক শহিদুলের সঙ্গে এই অসম সম্পর্ক এবং স্ত্রীকে মারধরের ঘটনায় দায়ের করা মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলেন, আপনি সব জানেন এখানে আমার আর কিছু বলার নেই। বিষয়টি এখন আদালতের বিচারাধীন। তাই এ নিয়ে কথা বলতে চাই না।