মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বিডেনের গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংসতার পর বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মিয়া জাহিদুল ইসলাম আরেফীর (মিয়ান আরেফি) সম্পর্কে ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন লে. জেনারেল (অব.) চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী।
এই অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা এবার আঙুল তুলেছেন গোয়েন্দা সংস্থার দিকে। তিনি অভিযোগ করেছেন, “মিয়ান আরেফি, যিনি বিডেনের একজন উপদেষ্টা হিসাবে জাহির করেছিলেন, একটি গোয়েন্দা সংস্থার দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল।”
মঙ্গলবার এক ভিডিও বার্তায় চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী বলেন, ‘আমি মনে করি ওই ব্যক্তি (মিয়ান আরেফি) কোনো গোয়েন্দা সংস্থার নির্দেশে এমনটি করছে বা করেছে। এখন ঐক্যের সময়। জাতিকে ধৈর্যের সাথে এ ঘটনা মোকাবেলা করতে হবে। কোনো মিয়াঁ আরেফি বা ভুল ব্যাখ্যায় বিভ্রান্ত হবেন না। গণতন্ত্রের জন্য ঐক্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জনগণের অধিকার আদায়ে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী বলেন, ২৮ অক্টোবর আমি নয়াপল্টনে গিয়েছিলাম গণতন্ত্রের জনগণের আন্দোলন দেখতে। দুপুর আড়াইটার পর গণতন্ত্রপন্থী জনতা পুলিশের গুলি, কাঁদানে গ্যাস ও নির্যাতনের শিকার হয়। অনেক লোক আহত হয়েছে।আমি শুনেছি পুলিশকেও হত্যা করা হয়েছে।আমি ট্র্যাজেডির পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিলাম। এবং দ্রুত ঘটনাস্থলে গেলাম। বিকেল ৩টার দিকে সেদ মিয়া আরেফি সেপ্টেম্বরে বিদেশে থাকা আমার বন্ধুদের কাছ থেকে আমার নম্বর সংগ্রহ করে আসতে বলে। কথিত মিয়ান আরেফি সেপ্টেম্বরে বিদেশে অবস্থানরত আমার বন্ধুদের কাছ থেকে আমার নম্বর সংগ্রহ করে ২৭ তারিখে ঢাকায় আসার কথা জানান। ২৮ অক্টোবর তিনি আমাকে জানান তিনি আহতদের দেখতে নয়াপল্টনে যেতে চান। আমি যেন তাকে সহায়তা করি।’
পরবর্তী ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে এই অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘মিয়ান আরেফি বিএনপি কার্যালয়ে ইশরাকের (বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন) সঙ্গে দেখা করেন এবং আহতদের দেখে হলে বসেন। কয়েকজন আমাকে সেখানে বসতেও বললেন। সেখানে সাংবাদিকদের সঙ্গে শোক জানিয়ে বক্তব্য শুরু করেন তিনি। হঠাৎ তিনি (মিয়ান আরেফি) ব্যাগ থেকে কিছু লিখিত কাগজ বের করেন। এরপর তিনি মার্কিন সরকারের সঙ্গে তার বিশেষ সম্পর্ক এবং বাংলাদেশের গণতন্ত্রের সমস্যা নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন। এমনকি তিনি মার্কিন সরকারের নিষেধাজ্ঞা সহ কিছু স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন। যা মার্কিন সরকার ও বাংলাদেশি অ্যাক্টিভিস্টদের জন্য খুবই বিব্রতকর। এর জন্য আমরা কেউই প্রস্তুত ছিলাম না। তিনি দ্রুত তার বক্তৃতা শেষ করলেন এবং আমি বেরিয়ে গেলাম।’
পরবর্তী ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী বলেন, “তিনি (মিয়ান আরেফী) নিচতলায় রুহুল কবির রিজভীর সঙ্গে কথা বলেন এবং প্রায় ৩০ সেকেন্ড কথা বলেন। এরপর আমি আমার বাসায় যাই। ওই রাতে তিনি (মিয়ান আরেফি) আমাকে ফোন করলে, আমি তাকে দ্রুত বিষয়টি মার্কিন দূতাবাসে জানাতে বলেছিলাম এবং তার অবস্থান ব্যাখ্যা করতে বলেছিলাম। তিনি (মিয়ান আরেফি) ঘটনাস্থল থেকে মার্কিন সরকারের কাছে তার লেখা একটি চিঠি আমাদের পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু সেই রাত থেকে ২৯ তারিখ পর্যন্ত তিনি তার ফোন বন্ধ রাখেন। সন্ধ্যায় অনলাইন পত্রিকায় জানতে পারি যে তাকে বিমানবন্দরে আটক করা হয়েছে। পরে তিনি ডিবি অফিসে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা। কেউ তাকে কথা বলতে বাধ্য করেনি। স্বেচ্ছায় নিজের পরিচয় দেন এবং তার বক্তব্য দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, রাজধানীতে বিএনপির গণসংযোগ ও বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সংঘর্ষের পর শনিবার সন্ধ্যায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক রহস্যময় ব্যক্তিকে দেখা গেছে। ভিডিওতে গোলাপি শার্ট পরা ওই ব্যক্তিকে ইংরেজিতে কথা বলতে দেখা যায়। যে ব্যক্তি নিজেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা বলে দাবি করছেন, সেই ভিডিওর খবর প্রকাশ করলে সোশ্যাল মিডিয়ায় তুমুল আলোচনা হয়।
রোববার বিকেলে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে আটক করা হয়। অভিযানে অংশ নেওয়া ডিবি গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার জন্য বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন।
গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, গ্রেফতারের পর মিয়ান আরেফিকে মিন্টো রোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদে আরেফি জানান,বাসা থেকে কয়েকটি বিষয় শিখিয়ে এনে বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে কথা বলানো হয়েছে। তাকে বিএনপি অফিসে নিয়ে যাওয়ার পেছনে চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
মিয়াঁ আরেফি থাকেন যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে। তিনি একজন বাংলাদেশী আমেরিকান। সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়ায় জন্ম ও বেড়ে ওঠা। তিনি মাঝেমধ্যে বাংলাদেশে আসেন।