দিন দিন দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ব্যবহারযোগ্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৭ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে। এর মাধ্যমে তিন মাসের আমদানি দায় মেটানো যাবে। অন্যান্য দেশ বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে পর্যাপ্ত মজুদ সংরক্ষণ করতে পেরেছে। তবে ভুল নীতির কারণে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে।
১০ বছর আগেও মজুদ নিয়ে বাংলাদেশের আত্মতুষ্টির শেষ ছিল না। কিন্তু এখন এটাই উদ্বেগের সবচেয়ে বড় কারণ বলে মনে হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতে, বর্তমানে বর্তমানে এ অঙ্ক ২৭ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নিয়ম অনুযায়ী তা ২১-এর নিচে। আর তা থেকে ৪ বিলিয়ন ডলারের দায় বাদ দিলে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ হয় মাত্র ১৭ বিলিয়ন। অর্থাৎ ১৬.৭ বিলিয়ন ডলার।
অন্যদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে প্রায় ১৬ হাজার কোটি ডলারের আমদানির ঋণপত্র খোলা হয়েছে। সে হিসাবে, প্রতি মাসের গড় সোয়া ৫ বিলিয়ন। ফলে রিজার্ভের অর্থ দিয়ে দায় মেটানো যাবে মাত্র ৩ মাসের।
বিশ্বব্যাংকের পরামর্শক ড. জাহিদ হোসেন জানান, তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্য হাতে রিজার্ভ রয়েছে। তবে যা প্রয়োজন তা পেতে হলে তা বাড়াতে হবে। আমরা যদি এখন কঠোর মুদ্রানীতি গ্রহণ করি, তাহলে রিজার্ভ আরও কমে যাবে। কারণ, আমদানিতে খরচ করতে হয়। ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
রিজার্ভ বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হলেও আর্থিক ও চলতি হিসাবের ব্যালেন্সের বড় পার্থক্যের কারণে তা কার্যকর হচ্ছে না। উল্টো চাহিদা মেটাতে প্রতিমাসে মজুত থেকে বিক্রি করতে হচ্ছে গড়ে ১ বিলিয়নের ওপরে। অথচ এর বিপরীতে সুবিধাজনক অবস্থানে ভারত, নেপালের মতো দেশ।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (CPD) অনারারি ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অনেক দিন ধরে আমরা প্রতি ডলারের দাম ৮৬ টাকা ধরে রেখেছি। এটার পুঞ্জিভূত প্রভাবটা একবারে আমাদের ওপর এসে পড়েছে। ফলে মার্কিন মুদ্রার বিপরীতে হঠাৎ করেই টাকার মান কমেছে। অন্য দেশে তা হয়নি। তারা বাজারের সাথে তাল মিলিয়ে চলে। ডলারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশটির মুদ্রার ক্রমশ অবমূল্যায়ন হয়েছে।
দেউলিয়া হয়ে যাওয়া শ্রীলঙ্কাও প্রায় শূন্য থেকে সম্পূর্ণ পরিবর্তনের পথে। প্রশ্ন হলো, আর্থিক ব্যবস্থাপনার দিক থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে ওইসব দেশের পার্থক্য কোথায়? বিশেষজ্ঞদের মতে, ডলারের দামের বড় পার্থক্যের কারণে হুন্ডির প্রবণতা বেড়েছে। এটি প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেন তারা।