আন্তঃনগর এগারসিন্ধুর ট্রেনের সাথে সংঘর্ষ হওয়া কনটেইনার ট্রেনের চালক সিগন্যাল অমান্য করে স্টেশনে প্রবেশের চেষ্টা করলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ভৈরব রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মোঃ ইউসুফ জানান, এগারসিন্ধুর ট্রেনটি মাত্র আধা মিনিট দেরিতে এলে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটত না।
মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টায় স্টেশন মাস্টার এসব কথা বলেন।
এর আগে সোমবার বিকেল সোয়া ৪টায় রেলস্টেশনের বাইরে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি কন্টেইনার ট্রেনের সঙ্গে ঢাকাগামী এগারসিন্ধুর ট্রেনের সংঘর্ষ হয়। এগারসিন্ধুর ট্রেনের তিনটি বগি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে দুটি কম্পার্টমেন্ট সম্পূর্ণ পেঁচানো। ঘটনার পরপরই পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও বিজিবিসহ বিভিন্ন সংস্থা উদ্ধার কাজ শুরু করে। দুর্ঘটনা থেকে মোট 17টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া আহত শতাধিক যাত্রীকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্টেশন মাস্টার মোঃ ইউসুফ জানান, বৈধ সংকেত পেয়ে এগারসিন্ধুর ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়। কিন্তু সংকেত না দিলেও কন্টেইনার ট্রেনের চালক স্টেশনে ঢোকার চেষ্টা করেন। আর এগারসিন্ধুর ট্রেন যদি অন্তত আধা মিনিট সময় পেত, তাহলে হয়তো দুর্ঘটনা ঘটত না।
স্টেশন মাস্টার জানান, কন্টেইনার ট্রেনের চালক বাড়ির সিগন্যাল অমান্য করেছিলেন। একটি ট্রেনকে স্টেশনে প্রবেশ করতে দুটি সিগন্যাল অতিক্রম করতে হয়। প্রথমটি বাইরের এবং দ্বিতীয়টি বাড়ির সংকেত। কন্টেইনার ট্রেনটিকে আউটার সিগন্যালের বাইরে অপেক্ষা করতে বলা হয়। এগারসিন্ধুর ট্রেন ছাড়ার পর কন্টেইনার ট্রেনটিকে আসার জন্য সংকেত দেওয়া হয়। অনেক ট্রেন ধীরে ধীরে বাইরের সিগন্যাল অতিক্রম করে। তবে বাড়ির সিগন্যালে দাঁড়াতে হবে। কিন্তু কন্টেইনার ট্রেনের চালককে কোনো সিগন্যাল অতিক্রম করতে বলা হয়নি। এগারসিন্ধুর ট্রেন ছাড়ার পরই পয়েন্টটি মুক্ত হবে। তারপর পয়েন্ট পরিবর্তন করে কনটেইনার ট্রেনটিকে স্টেশনে প্রবেশের জন্য সংকেত দেয়।
এদিকে দুর্ঘটনার পরপরই কন্টেইনার ট্রেনের চালক ও সহকারী চালক এবং গার্ডকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ঘটনা তদন্তে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
দুর্ঘটনার পর ভৈরব রেলওয়ে থানার ওসি আলীম হোসেন সিকদার জানান, কিশোরগঞ্জ থেকে এগারসিন্ধুর ট্রেনটি ভৈরব স্টেশনে থামার পর ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। স্টেশনের বাইরের দিক থেকে লাইন পরিবর্তন করে অন্য লাইনে প্রবেশ করছিল। তবে পুরো ট্রেনটি অন্য লাইনে প্রবেশের আগেই আরেকটি কন্টেইনার ট্রেন ওই লাইনে প্রবেশ করে। এতে ট্রেনের পেছনের অংশের ধাক্কা লেগে যায়।
উল্লেখ্য, সোমবার (২৩ অক্টোবর) কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব রেলস্টেশনে যাত্রীবাহী ট্রেন ও পণ্যবাহী ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে অন্তত ১৭ জন নিহত ও অনেকে আহত হন। বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটে কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী কার্গো ট্রেনটি পেছন থেকে আসা এগারসিন্ধুর ‘গোধুলী এক্সপ্রেস’কে ধাক্কা দিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। বন্দরনগরী চট্টগ্রাম থেকে রাজধানীতে যাওয়ার পথে বাইরের লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল যাত্রীবাহী ট্রেন।