বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আনা হচ্ছে। তাদের বাংলাদেশে আনার প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই বিএনপির পক্ষ থেকে শুরু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের ভিসা নিশ্চিত করতে সরকারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকেও ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। বিএনপির একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান মঙ্গলবার বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। দুই মাসের বেশি সময় ধরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় গত দুই মাসে তাকে পাঁচবার করোনারি কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়েছে। এখন পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আনার চেষ্টা চলছে।
এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা উদ্বেগজনক বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া খুবই অসুস্থ। আমরা বারবার বলেছি তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। সোমবার রাতেও তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) ভর্তি করা হয়।
মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এ তথ্য জানান।
চিকিৎসকদের কথা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, মঙ্গলবার সকালে চিকিৎসক ম্যাডামের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি এখনো সিসিইউতে আছেন। অত্যন্ত উদ্বেগজনক অবস্থায় রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী।
গত ৯ আগস্ট থেকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন খালেদা জিয়া। চিকিৎসার জন্য তাকে কয়েকবার সিসিইউতে নিয়ে যেতে হয়েছে। শ্বাসকষ্ট ও ফুসফুসে তরল জমার কারণে সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তাকে হাসপাতালের সপ্তম তলার কেবিন থেকে চতুর্থ তলার সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। তিনি শারীরিকভাবে খুবই দুর্বল বলে জানা গেছে।
এর আগে গত ১০ অক্টোবর খালেদা জিয়াকে সিসিইউতে নেওয়া হয়।
৭৮ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, বাত, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, হার্ট ও চোখের সমস্যাসহ নানা রোগে ভুগছেন।
এর আগে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে খালেদা জিয়াকে ১০ জুন বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়।
গত বছরের ১০ জুন রাতে বুকে ব্যথা নিয়ে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের অধীনে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন খালেদা জিয়া। দ্রুত এনজিওগ্রাম করার পর তার হার্টে রিং বসানো হয়। দুটি হার্ট ব্লক এখনও রয়ে গেছে।
এর আগে, ২৭ ফেব্রুয়ারি তিনি স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে যান। গত বছরের ২২ আগস্ট তিনিও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হাসপাতালে যান। এক সপ্তাহ পর ২৮ আগস্ট তাকে আবার হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে ভর্তি করা হয়। দুই দিন হাসপাতালে থাকার পর ৩১ আগস্ট দেশে ফেরেন খালেদা জিয়া।
২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুর্নীতির মামলায় সাজা পেয়ে কারাগারে যান খালেদা জিয়া। দেশে করোনা মহামারী শুরু হওয়ার পর পরিবারের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ২০২০ সালের ২৫ মার্চ তাকে ‘সাময়িক মুক্তি’ দেয়। এরপর তার সাজা স্থগিতের মেয়াদ কয়েক দফা বাড়ানো হয়।