বিএনপির বহিষ্কৃত নেতাদের দলে ফিরিয়ে আনার সবুজ সংকেত দিয়েছে দলের হাইকমান্ড। এলাকায় যারা জনপ্রিয়, ছোটখাটো অপকর্মের অতীত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের রেকর্ড ভালো রয়েছে এমন নেতাদের বহিষ্কার আদেশ শিগগিরই তুলে নেওয়া হচ্ছে। চূড়ান্ত আন্দোলনের আগে তাদের দলে দলে রাখা হচ্ছে। ধাপে ধাপে দুই শতাধিক নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হবে। এ তালিকায় কুমিল্লার সাবেক সিটি মেয়র মনিরুল ইসলাম সাক্কু, খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুসহ একাধিক নেতা রয়েছেন। গত সোমবার রাতে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বহিষ্কৃতদের দলে ফেরানোর বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রথম ধাপে এ ধরনের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে দলে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। পরবর্তী ধাপে মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর, ইউপি চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হিসেবে যাদের বহিষ্কার করা হয়েছে তাদের প্রত্যাহার করা হবে। এরই মধ্যে গত ৫ অক্টোবর চট্টগ্রাম মহিলা দলের এক নেত্রীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। এর আগে ছাত্রদলের সাবেক ১২ নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। গত তিন মাসে ধাপে ধাপে অন্তত ৫০ নেতাকর্মীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করেছে দলটি।
সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে দল থেকে বহিষ্কৃত বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার গত মাসে অভিমানে তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দেন।
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, দেড় বছর অপেক্ষার পরও বিএনপি বহিষ্কারাদেশ আদেশ প্রত্যাহার না করায় তিনি অন্য দলে যোগ দিয়েছেন। এছাড়া আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বহিষ্কৃত নেতাদের কেউ কেউ অন্য দলে যোগ দিতে পারেন বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন বলে আশঙ্কা রয়েছে। এসব কারণে এলাকায় জনপ্রিয় বহিষ্কৃত নেতাদের দলে আনার উদ্যোগ নেয় বিএনপির হাইকমান্ড। ভুল স্বীকার করে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আবেদনকারী নেতাদের তালিকা তৈরি করতে নয়াপল্টন কার্যালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে দুই শতাধিক নেতাকে যাচাই-বাছাই করে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এই তালিকা দলীয় হাইকমান্ডে জমা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরামে আলোচনার পরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে গত ৫ অক্টোবর কুমিল্লার সুয়াগাজীতে রোডমার্চ সমাবেশে শোডাউন করে সাক্কুর কর্মী-সমর্থকরা। সেখানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গাড়ির কাচ নামিয়ে সাক্কুর মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। সাক্কুর অনুসারীরা এই ঘটনাকে তার দলে ফিরে আসার লক্ষণ হিসেবে দেখছেন। অন্যদিকে ১ অক্টোবর খুলনা বিভাগীয় রোডমার্চের সমাপনী সমাবেশে নজরুল ইসলাম মঞ্জু ব্যাপক শোডাউন করেন। এ সময় তার অনুসারীরা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে স্লোগান দেয়।
বিএনপি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১৬ জানুয়ারি বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপির হাইকমান্ড। এরপর দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে হাজার হাজার নেতাকে নগর ও পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ ও ইউপি নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে বহিষ্কার করা হয়। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থী হওয়ায় বিএনপির ৩৩ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৭ জন কাউন্সিলর পদে জয়ী হয়েছেন। ১৭ জন বিজয়ী সহ ২০ জন নেতা আবেদন করেছেন। এ ছাড়া সিলেট, বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী, কক্সবাজারসহ বিভিন্ন সিটি ও পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে বহিষ্কৃত হয়েছেন দুই শতাধিক নেতা। বহিষ্কৃত এসব নেতা দলীয় ফোরামে ক্ষমা চেয়ে বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহারের আবেদন করেন। এমন আবেদনের স্তূপ জমেছে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। এদিকে যারা আবেদন করেছেন তারা প্রায় প্রতিদিনই নয়াপল্টন কার্যালয়ে অফিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন।
পরপর দুইবার নির্বাচিত কুমিল্লা সিটির সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, চার মাস আগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও নয়াপল্টনে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের আবেদন করেন। দলের জন্য কাজ করতে চাই। এই মুহূর্তে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হলে আমরা ভবিষ্যতের আন্দোলনে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারব। মাথায় হাত বুলিয়ে তিনি বলেন, তিনি (মির্জা ফখরুল) আমাকে ছেলের মতো ভালোবাসেন, আমাকে বলেছেন ধৈর্য ধর, অপেক্ষা করুন।
নজরুল ইসলাম মঞ্জু দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আমাদের দলে ফিরিয়ে আনার কারণ উল্লেখ করে সাধারণ সম্পাদকের মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে ৫টি আবেদন জমা দিয়েছি। আমি এখন অপেক্ষা করছি। আশা করি- দল ভালো সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা বিএনপির সঙ্গে থাকতে চাই, আগামীর আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে চাই। তিনি আরও বলেন, আমার বহিষ্কারের কারণে খুলনার ৫২০ নেতা পদত্যাগ করেছেন। তাদের সবাইকে দলে ফিরিয়ে আনার দাবি জানাচ্ছি। মহাসচিব আমাদের অপেক্ষা করতে বলেছেন।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, অনেক মামলা রয়েছে এমন বিএনপি নেতাদের দেশে পাঠানোর পরিকল্পনা করছে সরকার।