গত বছর থেকে দেশে সৃষ্ট বৈদেশিক মুদ্রা সংকটের কারণে খোলা বাজারে ডলারের দাম মিলছে না। যুক্তরাষ্ট্রে মুদ্রার এমন সংকটে প্রায় প্রতিটি ক্রেতাকেই খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে। বিক্রেতারাও ডলারের অভাবে বিক্রি করতে পারছেন না। দোকানিদের অভিযোগ, ডলারের নির্ধারিত হারে কেউ বিক্রি করছেন না। এদিকে ১৩০ টাকার অফার দিয়েও ডলার পাচ্ছেন না ক্রেতারা।
কৌশিক রায় (ছদ্মনাম) ঢাকায় ব্যাংক ও প্রায় ৫০টি মানি এক্সচেঞ্জের দোকান ঘুরেও প্রয়োজনীয় ডলার পাননি। উচ্চশিক্ষার শিক্ষার্থী হিসেবে আগামী ২৯ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন তিনি। থাকার ও খাওয়ার প্রাথমিক খরচ মেটাতে পাঁচ হাজার ডলার সঙ্গে নিতে চাই। কিন্তু খালি হাতে ফিরতে হয়েছে দেশের অনুমোদিত ডিলার (এডি) ব্যাংকগুলোকে। শেষ উপায় হিসেবে মানি এক্সচেঞ্জের দোকানে অতিরিক্ত দাম দিয়েও ডলার পেতে পারছেন না তিনি।
বুধবার ডলার কিনতে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম ও পল্টনের বেশ কয়েকটি মার্কেট ঘুরে এমন অভিজ্ঞতার কথা জানান কৌশিক। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, “আমি ডলার কেনার জন্য তিন দিন ধরে ঘুরছি। আমার টার্গেট ৫ হাজার ডলার। কিন্তু আমি এখন পর্যন্ত মাত্র ৪০০ ডলার পেয়েছি। আমার মামা একজন ব্যাংক কর্মকর্তা। তিনি আমার জন্য এটির ব্যবস্থা করেছেন। । আমি ভেবেছিলাম মামার কাছ থেকেই নিবো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মামাও ৪০০ ডলার দিয়ে আর পারবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।’
এখন কী করবেন জানতে চাইলে কৌশিক বলেন,‘ঘুরছি। ব্যবস্থা তো করতেই হবে। ভেবেছিলাম সহজে পেয়ে যাবো। কিন্তু এখন তো অবস্থা দেখছি খুবই খারাপ। আমার প্ল্যান (পরিকল্পনা) ছিল শেষের কয়েকটি দিন আত্মীয়-স্বজনের সাথে কাটাবো। কিন্তু এখন তো ডলার ম্যানেজ করতেই কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমার কোনো আত্মীয় বা কাছের কেউ নেই আমেরিকায়। যার কাছ থেকে ওখানে গিয়ে সাময়িক সহযোগিতা নিবো। আমি পুজোর পরে চলে যাব, তাই খুব প্রয়োজন না হলে বাইরে বাইরে বের হবো না। মা, বাবা, ভাই-বোনকে রেখে চলে যাবো। তাই এদের সঙ্গে সময় কাটাতে চেয়েছিলাম।
কৌশিক বলেন, ‘একজনের সঙ্গে আমার আলাপ হয়েছিল। সে আমার কাছে ডলার প্রতি ১৩০ টাকা চাইল। আমি দামাদামি করে অবশেষে রাজি হয়ে গেলাম, কিন্তু সে আমাকে এক ডলারও দিতে পারেনি। আমি ১৩০ টাকা দিতে চেয়েও একটি ডলার পেলাম না। কিন্তু ডলারের নির্ধারিত মূল্য ১১২ টাকা।
দেশে বৈদেশিক মুদ্রা সংকটের পাশাপাশি রিজার্ভ কমে যাওয়ায় ডলার বিক্রি কমিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বেচা-কেনার জন্য নির্ধারিত হার নির্ধারণ করেছে। কিন্তু এই নির্ধারিত হারে কেউই ডলার বিক্রি করছে না। যার কারণে সাধারণ ক্রেতাদের কাছে ডলার বিক্রি করা যাচ্ছে না যার কারণে ডলার কেনা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন মানি চেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি ইসমাইল হোসেন। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ভাই এখন অবস্থা এমন যে ব্যবসা বন্ধ করতে হচ্ছে। আমাদের কাছে ডলার নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের কাছে ডলার বিক্রি করে না। আমাদের ডলারের উৎস বিদেশ ফেরত সাধারণ মানুষ। তারা যে ডলার দেয় তা আমরা কিনি এবং একটু বেশি দামে বিক্রি করি। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের ক্রয়-বিক্রয় হার নির্ধারণ করেছে। ফলে সেই দামে কিনতেও পারছি না, বিক্রিও করতে পারছি না।
কোনো কোনো ব্যাংক বেশি দামে ডলার বিক্রি করছে কিনা জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মাজবাউল হক ঢাকাটাইমসকে বলেন, এ ধরনের কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য আমাদের কাছে নেই। কোনো অভিযোগ আসলে আমরা তদন্ত করে দেখবো। এমন অভিযোগে দশ ব্যাংক ট্রেজারি প্রধানকে জরিমানা করা হয়েছে। আমরা শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নিই।”