জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। গত সেমিনারে চাঁদপুরের মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও নদী দখলের পেছনে একজন নারী মন্ত্রীর ভূমিকা রয়েছে বলে মন্তব্য করেন নদী কমিশনের চেয়ারম্যান। এই বক্তব্যের দুদিন পর গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মনজুর আহমেদ অভিযোগ করেন, তিনি ‘হুমকি’ পাচ্ছেন।
হুমকি বা আলোচনায় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যানকে অপসারণ করা হয়। বুধবার (১৮ অক্টোবর) নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম খান গণমাধ্যমকে অপসারণের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চুক্তি ও বৈদেশিক নিয়োগ শাখা আজ এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
২২ ফেব্রুয়ারী ২০২২-এ ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরীকে তিন বছরের জন্য জাতীয় নদী সুরক্ষা কমিশনের নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। এই হিসাবে, এই পদে তার নিয়োগের মেয়াদ ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে শেষ হওয়ার কথা। এখন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিলের কারণে তাকে এই পদটি ছাড়তে হবে।
মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই কেন চুক্তি বাতিল করা হয় তা জানতে চাইলে ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী ঢাকা মেইলকে বলেন, কেন এটা করা হয়েছে আমি জানি না। সরকার আমাকে নিয়োগ দিয়েছে, সরকার বাতিল করছে। এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই।
চাঁদপুরের মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কথা বলায় সম্প্রতি একজন মন্ত্রীকে বাতিল করা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ড. মঞ্জুর বলেন, মন্ত্রীর বিরুদ্ধে বলতে আমি তা বলব না। আপনারা (মিডিয়া কর্মীরা) ভাবলে ভাবতে পারেন। আমি এর সাথে লিঙ্ক করতে চাই না।
মন্ত্রীর বিরুদ্ধে যা বলেছেন, তা থেকে সরে দাঁড়াবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি যা বলেছি তা থেকে এক চুলও নড়ব না। আমি বললাম, এর সঙ্গে মন্ত্রী জড়িত। আমি এসব বিষয় দুদকে পাঠাব।
এর আগে গত ২৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে এক সেমিনারে সদ্য বিদায়ী জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, মেঘনা ইলিশসহ অনেক মাছের সেরা অভয়ারণ্য। সেখানে বালুমহাল ঘোষণা করা হয়েছে। ২০০ কোটি কোটি টাকা বালু উত্তোলন করা হবে বলে জানা গেছে। সেখানে আবারও ড্রেজার ও ট্রলারের শব্দে এসব মাছের উৎস ধ্বংস হচ্ছে। নদী রক্ষা কমিশন নদীকে হায়েনা মুক্ত রাখতে পারছে না। কারণ এই হায়েনা দলের পেছনে একটি রাজনৈতিক শক্তি রয়েছে। চাঁদপুরের একজন নারী মন্ত্রী রয়েছেন। তিনি তাদের রক্ষা করেন।
তিনি বলেন, নদীভাঙনের ভয়ে সেখানকার প্রান্তিক মানুষ রাতে ঘুমাতে পারে না। আবারো আসছে তাদের ভয়ের দিন। গত বছর ( ২০২২ সালে) এই হায়েনারা ৬৬৮ কোটি সিআরটি বালু চুরি করেছে। যা সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকায়। কিন্তু নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের জন্য তাকে ২৬৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে (চাঁদপুর ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানের কাছে) জমা দিতে বলা হচ্ছে।
ডাঃ মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, আমরা মেঘনা নদীতে বালু সন্ত্রাসীদের ৩০০ ড্রেজার উচ্ছেদ করেছি। কিন্তু এ অভিযানে জড়িত জেলা প্রশাসক খাদেমুলকে বদলি করা হয়েছে। যখন প্রতিভাবান প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তারা তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাষ্ট্রের সরকারি সম্পত্তি রক্ষায় কাজ করেন – তখন তাদের পুরস্কৃত করার পরিবর্তে তিরস্কার করা হয়। ফলে আজ আবারও মেঘনায় ফিরে আসছে বালু দস্যুরা।
বাংলাদেশের নদীগুলো হায়েনাদের দখলে চলে যাচ্ছে। মঞ্জুর বলেন, রাজনৈতিক ক্ষমতা, প্রশাসনিক ক্ষমতা, কিছু এনজিও কর্মী দখলের এই মামলায় অনড়। অন্যদিকে আমাদের নদী রক্ষা কমিশনের পাশে কেউ নেই। আমাদের যোগ্য কর্মকর্তারা যারা নদী রক্ষায় শক্ত অবস্থানে যায় তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়।