রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের সংসদ সদস্য মনসুর রহমানের বিরুদ্ধে মাদ্রাসার অধ্যক্ষকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে। এর প্রতিবাদে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে মাদ্রাসা শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সাংসদ।
জানা যায়, সোমবার সকালে রাজশাহীর পুঠিয়ার এসকেডিএস ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমানকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায় সংসদ সদস্যের লোকজন। এর প্রতিবাদে বিড়ালদহ বাজারে প্রায় দেড় ঘণ্টা ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান বলেন, “আমাকে জোর করে মাইক্রোতে নিয়ে গেলে আমি জোরে চিৎকার করতে থাকি। একপর্যায়ে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।”
স্থানীয় লোকজন ও মাদ্রাসার ছাত্ররা জানান, মাদ্রাসা কমিটি নিয়ে বিরোধের জেরে সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ওই এলাকার মঈন, শফিকসহ অন্যরা মাইক্রোবাস নিয়ে মাদ্রাসা চত্বরে প্রবেশ করে। এরপর গাড়ি থেকে তিন-চারজন লোক বেরিয়ে অধ্যক্ষের কক্ষে গিয়ে তাকে ভয় দেখিয়ে বাইরে টেনে নিয়ে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যায়।
ঘটনার প্রতিবাদে ও অধ্যক্ষের মুক্তির দাবিতে কাটিদহ বাজারের কাছে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে মাদ্রাসা শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও স্থানীয় জনতা। দেড় ঘণ্টার অবরোধে সড়কের দুই পাশে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। পরে পুঠিয়া থানা পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে।
পুলিশ এক ঘণ্টার মধ্যে অপহরণকারীদের হাত থেকে অধ্যক্ষকে মুক্ত করার আশ্বাস দিলে সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়।
এসকেডিএস ফাজিল মাদ্রাসার সভাপতি দেওয়ান আবদুস সালেক বলেন, ‘এমপি ডা. মনসুর রহমানের সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্য মঈন, শফিকসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চলাকালীন একটি গাড়ি নিয়ে এসে অধ্যক্ষকে এমপির বাড়িতে নিয়ে যায়। এ সময় মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রী এবং এলাকাবাসী ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। বিষয়টি তখন প্রশাসনসহ সবার নজরে আসে। এরপর তারা অধ্যক্ষকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। পরে আমরা অধ্যক্ষকে কাশিয়াডাঙা থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি।’
এ ব্যাপারে থানায় কোন অভিযোগ করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে আব্দুস সালেক বলেন, কিছুক্ষণ আগে আমরা স্যারকে উদ্ধার করেছি। তবে এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগ করা হবে।
উদ্ধারের পর বিড়ালদহের প্রধান হাবিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, আজ অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থীর চোখের সামনে আমাকে এভাবে অপমান করা হয়েছে। আমাকে অপহরণ করা হয়েছে। আন্দোলন দেখে ওসিকে ডেকে আন্দোলন বন্ধ করতে বলা হয়। আমি বলেছি, আন্দোলন কি আমি বন্ধ করতে পারবো?’
অধ্যক্ষ বলেন, ‘আমি এমপির সঙ্গে দেখা করবো না এমনটা বলিনি। আমি তো রাতেই আসতে চেয়েছিলাম। তারা আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছে। তারা আমাকে তুলে নিয়ে গেছে। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এগুলোর প্রতিকার দরকার। এটি শুধু বিড়ালদহ নয়, পুরো বাংলাদেশেরই একটি ক্ষতি করেছে। আমি এর সুবিচার চাই।’
এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন কি না জানতে চাইলে অধ্যক্ষ বলেন, ‘আমাকে এখন বুঝতে দেন। দেখি কী করি। আমি তো এখনও ভয়ে আছি। পরে না হয় বুঝেশুনে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
মনসুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অপহরণের তথ্য সঠিক নয় বলে দাবি করেন। বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে ওই শিক্ষককে আমার সঙ্গে দেখা করতে বলছি। মাদ্রাসা কমিটি নিয়ে চলছে ঝামেলা। কমিটির সভাপতি ছিলেন অধ্যাপক নওশাদ। তাকে বাদ দিয়ে অন্যজনকে সভাপতি করা হয়েছে। এ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা চলতেছিলো।
আমি তাকে বলতে থাকি আপনি আমার কাছে আসেন, আমি আপনাকে কী বলি একটু শুনে যান। কিন্তু আসেননি। তিনি আজ এসেছিলেন, তার সাথে কথা হয়েছে। আমি তাকে বললাম, কমিটি করে লাভ কি? আপনার বেতনগুলো স্বাক্ষর হলেই তো হলো। আপনার টেনশনের কোনো কারণ নাই। আমি সমঝোতা করে দিয়েছি।’
সাংসদ আরও বলেন, অধ্যক্ষ সাহেব আমার এখানে মিষ্টি-চা খেয়ে চলে। এটা অপহরণ নয়। তাকে অপহরণ করা হয় নি। তিনি ইচ্ছেমতো চলে গেছেন।’
রাজশাহী জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ওই শিক্ষক বর্তমানে বাড়িতে আছেন। এটা অপহরণ কি না আমরা তদন্ত করে দেখতে পারি।’