Friday , September 20 2024
Breaking News
Home / Countrywide / এবার ভাড়া দেয়া হচ্ছে ঢাকার রাস্তা

এবার ভাড়া দেয়া হচ্ছে ঢাকার রাস্তা

রাজধানী ঢাকার সব সড়ক ও ফুটপাত পরিণত হয়েছে শপিংমল! প্রতিদিনই সড়কের নতুন নতুন জায়গা দখল করে ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। হকার/অস্থায়ী দোকান স্থাপন। ভাড়া আদায় করা হয়। এসব দোকান থেকে বার্ষিক ভাড়া (চাঁদা) প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা, যার এক পয়সাও সরকারি কোষাগারে জমা নেই। লাইনম্যান হিসেবে নিয়োজিত শ্রমিকরা কথিত নেতাদের নামে এই টাকা আদায় করছেন। চাঁদাবাজির বড় উৎস হওয়ায় বিভিন্ন সময়ে কথিত অভিযানেও রাস্তা-ঘাট ও ফুটপাত দখলমুক্ত হয়নি। হকারদের পুনর্বাসনে ছুটির বাজার করার উদ্যোগও কাজে আসেনি। উল্টো রাস্তার হকার প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

এদিকে রাস্তার পাশে দোকান বসিয়ে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বাড়ছে যানজট। ফুটপাতে আরামে হাঁটতে পারছেন না নগরবাসী। ২০১৬ সালে, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির “দ্য স্টেট অফ সিটিজ ২০১৬: ঢাকা সিটিতে যানজট – গভর্নেন্স প্রেক্ষিত” শীর্ষক একটি গবেষণায় বলা হয়েছে যে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন বার্ষিক ফুটপাতের হকারদের কাছ থেকে ১ ,৮২৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে, যা সেই সময়ে ছিল দুইটিরও বেশি। সিটি কর্পোরেশনের মোট বাজেট। দৈনিক চাঁদা আদায় হয় ৬০ কোটি টাকার বেশি। ওই সমীক্ষায় বলা হয়, ঢাকায় মোট হকারের সংখ্যা তিন লাখ। আর প্রতিটি হকার থেকে দৈনিক গড়ে ১৯২ টাকা আদায় করা হয়। আর বর্তমানে হকারদের বিভিন্ন সংগঠনের তথ্য বলছে, ঢাকা মহানগরীতে সাড়ে তিন লাখ হকার রয়েছে। এলাকা ও দোকানের আকার ভেদে তাদের কাছ থেকে দৈনিক সর্বনিম্ন ৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০০০ টাকা আদায় করা হয়। একজন হকারের কাছ থেকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩০০ টাকা ফি আদায় করা হয়। সে অনুযায়ী হকারদের কাছ থেকে দৈনিক ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা আদায় হয়, যা বছরে ৩ হাজার ৮৩২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ঈদের এক মাস আগে এই হার দ্বিগুণ হয়ে যায়। সূত্রমতে, ঈদের মৌসুমে মাত্র ১ লাখ টাকা। নিউমার্কেট থেকে দৈনিক ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা সংগ্রহ করা হয়। গুলিস্তান থেকে ১৮ লাখ টাকা, মতিঝিল থেকে ২০ -২৫ লাখ, টাকা। উত্তরা এলাকা থেকে ১০ -১২ লাখ।

সম্প্রতি রাজধানীর শনিরখড়ায় বর্ণমালা রোডে খাবারের দোকান খুলেছেন এক যুবক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, আমার কথা পত্রিকায় লেখা হলে আগামীকাল থেকে দোকান খুলতে পারব না। দোকানের টাকা দিতে এক বার ১৫ হাজার টাকা দিয়েছি। বিদ্যুতের জন্য প্রতিদিন ১৫০ টাকা এবং রাস্তা ভাড়া ১০০ টাকা। দুজন এসে এই টাকা নিয়ে গেল। তারা ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও পুলিশের বিষয়ে কথা বলেন। এদিকে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের ভেতরে সড়কে দুই ডাব বিক্রেতা জানান, প্রতিদিন তাদের দিতে হয় ১০০ টাকা। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ ও জিপিওর মাঝামাঝি সড়কে বসে থাকা দোকানিরা জানান, দোকানের আকার ও অবস্থান ভেদে তাদের একবারে দুই থেকে তিন লাখ টাকা দিতে হয়। ভাড়া প্রতি মাসে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা। দৈনিক ১৫০ টাকা চাঁদা, যার মধ্যে ১০০ টাকা পুলিশ ও রাজনৈতিক দলের জন্য, ৩০ টাকা বিদ্যুৎ বিল এবং ২০ টাকা কুলির খরচ। টাকা কে দিয়েছে জানতে চাইলে এক ব্যবসায়ী বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সরকারের ১৪/১৫ জন লোক বিএনপির লোকজনকে সরিয়ে এই সড়কের বিভিন্ন জায়গা দখল করে নেয়। তাদের একজনের কাছ থেকে ৩ লাখ টাকায় জায়গা নেন তিনি। মাসিক ভাড়া ১৫ হাজার টাকা। এছাড়া প্রতিদিন আরো দেড়শ টাকা দিতে হয়। সরকার পরিবর্তন হলে অন্য কেউ দায়িত্ব নেবে। উত্তর নগরীর শাহজাদপুর থেকে সুবাস্তু নাজারভ্যালি পর্যন্ত ফুটপাথ ছাড়াও প্রতিদিন বিকেলে প্রধান সড়কের পাশে শতাধিক অস্থায়ী কাপড়ের দোকান বসে থাকে। প্রতিটি দোকান থেকে ১৫০ টাকা আদায় করা হয়। এক হকার বলেন, চাঁদা না দিলে তাকে মারধর করবে। তাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। থানা থেকে ছাড়া পেতে লাগে ৫০ হাজার টাকা।
এদিকে সড়ক ও ফুটপাত হকারমুক্ত করার জন্য দুই সিটির মেয়র একাধিকবার ঘোষণা দিলেও তা কার্যকর হয়নি। বিভিন্ন সময়ে উচ্ছেদ অভিযান চললেও উল্টো সড়কে হকার বাড়ছে। হকাররা নিজেরাই চাঁদাবাজির জন্য দায়ী। বাংলাদেশ হকার্স ইউনিয়নের মহাসচিব সেকান্দার হায়াত বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, হকাররা ভাড়া আদায় করছে। কিন্তু সরকার কিছুই পাচ্ছে না। এ জন্য আমরা দুই সিটি করপোরেশনে বহুবার চিঠি দিয়েছি। আমি দীর্ঘদিন ধরে হকার ব্যবস্থাপনা নীতি খুঁজছি। বিশ্বের ৩৭টি দেশে এ ধরনের নীতিমালার মাধ্যমে হকাররা ফুটপাতে বসে। থাইল্যান্ডের পর্যটনেও স্ট্রিট ফুড ভূমিকা রাখছে। নীতিমালা যাচাই করে ঠিক করা হয় কোন এলাকায় কখন হকার বসবে এবং কোন এলাকায় বসবে না। তাহলে সর্বত্র হকারদের কারণে জনগণের ভোগান্তি হবে না। এমনকি দরিদ্র হকাররাও বেঁচে থাকতে পারে। সরকারও রাজস্ব পাবে। কিন্তু সিটি করপোরেশন সে লাইনে যাবে না। কারণ, তাদের লোকজনও টাকার ভাগ পায়। নীতিমালায় বৈধ হলে হকাররা রাস্তাঘাট পরিষ্কার রাখত। মূলত হকারদের বৈধতা কেউ চায় না। কারণ, অবৈধ হকার থাকলে গাড়ি চালানোও হয়

About Zahid Hasan

Check Also

আ.লীগ ও তৃণমূল থেকে বিএনপিতে যোগদানের হিড়িক

নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিএনপিতে যোগদানের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *