আদালত অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং অর্থ পাচারের অভিযোগে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের (পূর্বে এনআরবি গ্লোবাল) প্রাক্তন ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার (পিকে) ২২ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছে।
রোববার (৮ অক্টোবর) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০-এর বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম এ রায় ঘোষণা করেন।
পিকে হালদারের বিরুদ্ধে ৫২টি মামলায় এটিই প্রথম রায়। বাকি ৫১টি মামলা এখনো তদন্তাধীন।
এর আগে গত ৪ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০ এর বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ৮ অক্টোবর রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন। এদিন যুক্তিতর্ক উপস্থাপনকালে কারাগারে থাকা চার আসামি অবন্তিকা বড়াল, শংখ বেপারী, সুকুমার মৃধা ও অনিন্দিতা মৃধাকে আদালতে হাজির করা হয়। পিকে হালদারসহ ১০ আসামি পলাতক। তারা হলেন লীলাবতী হালদার (পিকে হালদারের মা), পূর্ণিমা রানী হালদার, উত্তম কুমার মিস্ত্রি, অমিতাভ অধিকারী, প্রীতিশ কুমার হালদার, রাজীব সোম, সুব্রত দাস, অনঙ্গ মোহন রায় এবং স্বপন কুমার মিস্ত্রি। এ মামলায় ১০৬ জনের মধ্যে ৯৯ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।
২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি দুদকের উপ-পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী পিকে হালদারের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগে মামলা করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, পিকে হালদার তার দখলে রেখেছেন ৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ। এছাড়া টাকা আড়াল করতে বিদেশে পাচার করে মানি লন্ডারিং আইনে অপরাধও করেছেন।
মামলাটি তদন্ত করে ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপ-পরিচালক সালাহউদ্দিন। ২০২২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।
চার্জশিটে বলা হয়েছে, গত ১০ বছরে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নামে-বেনামে ৯৩৩ কোটি টাকার জমি, ফ্ল্যাট ও হোটেল ক্রয় করেন পি কে হালদার। এর মধ্যে জমি কিনেছেন ৬ হাজার ৭৯০ শতাংশ। এই সম্পদের বাজারমূল্য প্রায় ৩৯১ কোটি ৭৫ লাখ ৮১ হাজার ১২ টাকা। নিজের নামে তিনি জমি কিনেছেন ৪ হাজার ১৭৪ শতাংশ। দলিলে এসব জমির দাম ৬৭ কোটি ৯৪ লাখ ২০ হাজার ৯৩০ টাকা দেখানো হলেও প্রকৃত বাজারমূল্য প্রায় ২২৮ কোটি টাকা। এছাড়া ধানমন্ডিতে তার নামে দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, পিকে হালদার তার নিকটাত্মীয় পূর্ণিমা রানী হালদারের নামে উত্তরায় একটি ভবন নির্মাণ করেন, যার ব্যয় প্রায় ১২ কোটি টাকা। পূর্ণিমার ভাই উত্তম কুমার মিস্ত্রির নামে তেজগাঁও, তেজতুরী বাজার ও গ্রিন রোডে ১০৯ শতাংশ জমি কেনেন, যার বাজারমূল্য ২০০ কোটি টাকা। পি কে হালদার কাগুজে কোম্পানি ক্লিউইস্টোন ফুডসের নামে কক্সবাজারে দুই একর জমির ওপর র্যাডিসন নামে আটতলা হোটেল নির্মাণ করেন, যার বাজারমূল্য প্রায় ২৪০ কোটি টাকা তার খালাতো ভাই অমিতাভ অধিকারী ও অনঙ্গ মোহন রায়ের নামে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে ৪০৪ শতাংশ জমি কেনেন, যার দাম প্রায় ১৬৭ কোটি টাকা।
ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা ইডি কলকাতা থেকে দূরে অশোকনগর সহ পশ্চিমবঙ্গের বেশ কয়েকটি জায়গায় অভিযান চালিয়ে পিকে হালদারকে ১৪ মে, ২০২২-এ গ্রেপ্তার করে। একই সঙ্গে তার ভাই প্রাণেশ হালদার, স্বপন মিস্ত্রী ওরফে স্বপন মৈত্র, উত্তম মিস্ত্রী ওরফে উত্তম মৈত্র, ইমাম হোসেন ওরফে ইমন হালদার ও আমানা সুলতানা ওরফে শর্মী হালদারসহ বাকি অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়।
১১ জুলাই কলকাতা আদালতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করে ইডি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট-২০০২ এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন-১৯৮৮-এর বিভিন্ন ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।
বর্তমানে পিকে হালদারসহ পাঁচজন পুরুষ আসামি প্রেসিডেন্সি কারাগারে রয়েছেন। আর একমাত্র মহিলা অভিযুক্ত আমানা সুলতানা ওরফে শর্মি হালদার রয়েছেন আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে।